Sabarna Roy Chowdhury বাড়ির পুজোয় কিছুক্ষণ

Sabarna Roy Chowdhury

সুচরিতা সেন চৌধুরী: পুজোটা এবার একটু অন্যরকম ভাবেই কাটাবো ভেবেছিলাম। গত অনেক বছর ধরে বেড়ানো ছাড়া পুজোর মজাটাই হারিয়ে গিয়েছিল জীবন থেকে। কিন্তু না, এবার কলকাতায় থেকেই জমিয়ে পুজোটা কাটাতেই হত। তাই পরিকল্পনাটা করেই ফেললাম, জমিদার বাড়ির পুজো দেখার। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। সপ্তমীর সকালে বেরিয়ে পড়লাম সপরিবারে। লক্ষ্য মুঘল বাংলার জমিদার সাবর্ণ রায় চৌধুরী (Sabarna Roy Chowdhury) পরিবারের পুজো দেখা, তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর।  এই পরিবারের বিশাল ইতিহাস। যা অনেকেরই জানা আবার অনেকেই জানেন না। কিন্তু আমি আজ ইতিহাসের কচকচানিতে না গিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলব। বলব ভাল লাগার কথা।

১২টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম বরিশার রায় চৌধুরী বাড়িতে। তখন পুজো মোটামুটি শেষ হয়ে গিয়েছে। তাতে কী, বাকি সব তো রয়েছে। জমিদার বাড়ির ধ্বংসস্তুতের অংশ, ভেঙে পড়া প্রাচীন ঠাকুর দালান, বটের শিকরে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে থাকা মন্দির, ইঁটের দেওয়ার জুড়ে শক্ত করে ধরে রাখা ইতিহাসের সাক্ষী বটের শিকর—আরও কত কী।

এখানে বলে রাখি দেবর্ষি রায় চৌধুরীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ এমন একটা মুহূর্তের সাক্ষী থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। তাঁর কাছেই জানলাম শহরের আটটি রায় চৌধুরী বাড়িতে একই সঙ্গে পুজো হয়। সেগুলি হল, আটচালা বাড়ি, বড় বাড়ি, মাঝের বাড়ি, বেনাকী বাড়ি, কালীকিঙ্কর, বিরাটি ও নিমতা পাঠানপুরের সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়িতে পুজো হয়। আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম বড় বাড়ির পুজোয়।

Sabarna Roy Chowdhury

১৬১০ সালে শুরু হয় এই পুজো। আটচালা মণ্ডপেই শুরু হয় পুজো। প্রথমে হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া মণ্ডপ ছিল পরবর্তী সময়ে তৈরি হয় ১৬টি থাম বিশিষ্ট নাটমন্দির। এখানে দেবীর গায়ের রঙ হয় লালচে হলুদ বা সোনালী, খানিকটা শিউলি ফুলের বোঁটার রঙে। গায়ে লাল বেনারসী আর গয়নায় সজ্জিত মা আসেন রায় চৌধুরী পরিবারে। এখানে গনেশের গায়ের রঙ লাল, লক্ষ্মীর রঙ হলুদ, সরস্বতী সাদা কার্তিকের গায়ের রঙও হলুদ। তবে ব্যতিক্রম অসুর। এখানে অসুরের গায়ের রঙ সবুজ। এখানে সিংহের মুখ ঘোটকের মতো। জানা গেল মেজ বাড়ি আর নিমতার বাড়ির সিংহও একই রকম। তবে এক এক বাড়িতে নিয়মের ভেদ রয়েছে। বড় বাড়িতে তৈরি হয়েছে সাবর্ণ সংগ্রহশালা। যেখানে ইতিহাস কথা বলে। প্রাচীন জিনিসের যতটুকু বেঁচে রয়েছে তা রাখা হয়েছে এখানে। যা দেখে আমরা সমৃদ্ধ হলাম।

লম্বা বারান্দা ধরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই চোখ পড়ল একটি বন্ধ দরজার দিকে। দরজার গায়ে লেখা বোধন ঘর। জানা গেল এখানেই মায়ের বোধনের পুজো হয়। দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করতেই দেখার সুযোগ হল। একাধিক ঘট সাজানো রয়েছে এখানে। রয়েছে যজ্ঞের আয়োজন। অদ্ভুত এক শান্তির পরিবেশ ওই ছোট্ট ঘরটায়। বাইরের ভিড় থেকে একদম আলাদা। এর মধ্যেই ডাক এল ভোগ খাওয়ার। পৌঁছে গেলাম খাওয়ার জায়গায়। সে এক এলাহি ভোগ। পুলাও, ঝুড়ো আলুভাজা, আলু পদলের সবজি, কোফতা কারি, চাটনি, পায়েস। অসাধারণ সুস্বাদু সব ক’টি খাবার। এক একদিন এক এক রকম ভোগ থাকে। কোনও কোনও বাড়িতে মাছও থাকে ভোগে।

Sabarna Roy Chowdhury

মূল রাস্তা থেকে ঢুকেই সামনে দুর্গা মণ্ডপ। যেখানে এই মণ্ডপ রয়েছে তার পিছনেই ছিল দুর্গা দালান। তা এখন ধ্বংসস্তুপ। প্যান্ডালের সামনেই রয়েছে বলির জায়গা। শোনা যায়, আগে এই পুজোয় ১৩টি ছাগল ও একটি মোষ বলি হত। তবে সেই রীতি বন্ধ হয়েছে আগেই। এখন কুমরো, শসা জাতীয় সবজির বলি হয়। এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে যায় চারটে দিন। যার অপেক্ষা থাকে সারা বছরের জন্য। গোটা পরিবারকে একসঙ্গে এক ছাদের তলায় পাওয়া, আনন্দ আবার বিদায়ের সুর। এতদিনের পরিকল্পনা শেষ হয়ে যায় চার দিনেই। আবার শুরু নতুন পরিকল্পনা। আমরাও প্রথমবারেই জরিয়ে গেলাম সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে। যে পরিবারের সঙ্গে জরিয়ে রয়েছে প্রিয় শহর কলকাতার পত্তনের ইতিহাস। এক জমিদার বাড়ির কথা। নিজেকেই নিজে প্রতিশ্রুতি দিলাম আবার আসব, ইতিহাসের সাক্ষী থাকতে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle