এ কি শুধুই আবেগের বিস্ফোরণ, নাকি মানুষের অজ্ঞতা-শিক্ষাহীনতা

এ কি শুধুই আবেগের বিস্ফোরণ

এ কি শুধুই আবেগের বিস্ফোরণ, এই প্রশ্ন যে কোনও সচেতন মানুষের মাথায় আসবেই? মনোবিদরা কী বলছেন জানতে ইচ্ছে করবে? কী বলছেন এই মানুষগুলো? যাঁদের এক কথায় ঠিক কী শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়? জানা নেই। তবুও প্রশ্ন গুলো তুলতেই হচ্ছে। খুনি আবেগকে কোনওভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া যায় না, লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


জানি না, ঠিক কী বলব? কীভাবে ব্যাখ্যা করব এই উৎসবমুখর বাঙালিকে। কীভাবে লাখ লাখ মানুষ একই স্রোতে ভাসছে? কীভাবে লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে ভুলে গেল এই তো কিছুদিন আগে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছিল হাসপাতালের বাইরে। ছুটতে হয়েছিল অক্সিজেনের জন্য। আজ যেন এই উৎসবমুখর মানুষকে দেখে হাঁফ ছাড়তে চাইছে গোটা শহর। বলছে, ‘‘দয়া করে একটু শ্বাস নিতে দিন।’’ এর পর আপনারা শ্বাস নিতে পারবেন তো? তখন যদি অক্সিজেনের আকাল হয় আর আপনার সামনেই অক্সিজেনের অভাবে আপনার প্রিয় মানুষটা তিল তিল করে শেষ হয়ে যায়, মানতে পারবেন তো? জানি খুব গালগালি খাব কিন্তু বিশ্বাস করুন আতঙ্ক হচ্ছে, চরম আতঙ্ক। এটা ভেবে কষ্ট হচ্ছে, লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে নিজেদেরই খুনি হয়ে উঠলেন!

হ্যাঁ, ‘খুন’ করছেন আপনারা। নিজেকে খুন করছেন, আশপাশের মানুষগুলোকে খুন করছেন। কিসের এত উচ্ছ্বাস, কিসের এত উৎসব, কিসের এত আনন্দ—বলতে পারেন? এখনও ছ’মাস কাটেনি সেই দিনগুলোর, যখন শ্মশানে লাইন দিতে হয়েছিল রাত থেকে ভোর হয়ে আবার রাত হয়ে গিয়েছিল। কত, শত মানুষ প্রিয়জনের নিথর দেহ আগলে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছিলেন‌ শ্মশানের লাইনে। ভুলে গেলেন সেই দিনগুলো? চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে। ভুলে গেলেন, শ্বশানে জায়গা নেই বলে ব্রিজের উপর থেকে প্রিয় জনের দেহ ছুড়ে ফেলা হয়েছিল নদীতে। কাতারে কাতারে লাশ ভেসে আসছিল নদীর জলে। ভুলে গেলেন সব?

গোটা দেশে এদিন পর্যন্ত কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৪০,১৯,৬৮০ জন। এই মুহূর্তে দেশে করোনায় আক্রান্ত রয়েছেন ২,০০,০০৪। মৃত্যু হয়েছে ৪,৫১,৪৬৯ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩,৩৩,৫৫,০৯৭ জন। এবার আসি পশ্চিমবঙ্গের কথায়। আমরা আমুদে বাঙালি। উৎসবে মেতে ওঠা বাঙালি। শুনুন তাহলে। বাংলায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৫,৭৮,৪৮২। এখনও আক্রান্ত রয়েছেন, ৭,৬৫৭ জন। মারা গিয়েছেন ১৮,৯৩৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৫,৫১,৮৯০ জন। একদিনে গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু কলকাতা শহরে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন ২০৩ জন। পরিসংখ্যানটা আতঙ্কের।

আনন্দ না প্রিয় মানুষের জীবন—কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? নিজেকেই প্রশ্নটা করুন না। ছোটদের এখনও ভ্যাকসিন হয়নি। বেরিয়ে পড়লেন তাদের নিয়ে উৎসব পালন করতে। ভাবলেন না আপনার বাচ্চাটা সংক্রমিত হলে কী হবে? ভাবলেন না, বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে আপনি যখন বাড়িতে ফিরবেন তখন আপনার বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ মানুষগুলোর কী হবে। কী ভাবছেন দুটো টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে, তাই আপনি যুদ্ধ জয় করে ফেলেছেন? করেননি, বিশ্বাস করুন বরং নতুন করে বাংলার মানুষকে আরও একবার কঠিন যুদ্ধের মুখে ফেলে দিলেন আপনারা।

এর আগে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা ভোট করে। আপনিও সেদিন তাঁদের গালাগাল করেছিলেন। আর আজ সেই খাতায় নাম লেখালেন আপনি। সময় আপনাকে ক্ষমা করবে না। এর পর যখন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেড জুটবে না, গভীর অক্সিজেন সঙ্কটের মধ্যে যখন অক্সিজেন সিলিন্ডার পাবেন না, তখন প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলার আগে হাজার বার ভাববেন। প্রশাসন নয় আসল দোষী আপনি এবং শুধুই আপনি আর কেউ নয়।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)