শেহনাজকে ছেড়ে দিন প্লিজ, প্রিয় মানুষের মৃত্যু শোক পালন করতে দিন

শেহনাজকে ছেড়ে দিন

শেহনাজকে ছেড়ে দিন, ওকে আর একটা রিয়া চক্রবর্তী বানাবেন না প্লিজ! সিদ্ধার্থ শুক্লার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেন কল্পনার ঝুলি উপুড় করে দিয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যম গল্প বানিয়েই চলেছে। এমন ভাব, যেন সেই সময় সিদ্ধার্থের বিছানার পাশেই বসে ছিলেন সকলে। প্লিজ, ছেড়ে দিন মেয়েটাকে! প্রিয় মানুষের মৃ্ত্যুর শোক মানাতে দিন। রিয়া তো সুযোগই পাননি প্রেমিকের মৃত্যুর শোকে ডুবে থাকার! শেহনাজকে তো ছেড়ে দিন। প্রেমিকের মৃত্যু মানেই প্রেমিকার দায়, কোন আইনে লেখা আছে? সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু অস্বাভাবিক ছিল। সিদ্ধার্থের তো তা নয়! লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


২৪ ঘণ্টা গড়াতে না গড়াতেই শেহনাজকে নিয়ে যা যা বক্তব্য শোনা যাচ্ছে তা ক্ষমার অযোগ্য। সেই সময় শেহনাজ কোথায় ছিলেন? এটাই কি সব থেকে বড় প্রশ্ন হওয়া উচিত? নাকি শেহনাজ, যাঁর জীবনের অনেকটা জুড়েই ছিলেন সিদ্ধার্থ, তিনি কী করে এই শোক সামলে উঠবেন সেটা ভাবা উচিত? তার থেকেও বড় কথা, শুধুমাত্র ধারণার উপর, শোনা কথার উপর নির্ভর করে কিছু কি আদৌ দেগে দেওয়া যায়? কিছু হলেই প্রেমিকার দিকে বন্দুক তাক করাটা এতটাই সহজ এই সমাজ ব্যবস্থায়? স্ত্রী হলে তো সবার মুখে শোনা যেত, ‘‘আহা রে, বেচারি।’’ কেন বলুন তো? সরকারি স্ট্যাম্প আছে সম্পর্কের তাই তাঁর দুঃখ আছে! আর প্রেমিকার নেই, তাই তাঁর দুঃখ-কষ্ট থাকতে নেই! তাঁকে সহজেই কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া যায়!

সিদ্ধার্থের মৃত্যুর পর থেকে শেহনাজকে নিয়ে কত রকমের কথা শোনা যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে শোনা গেল, সিদ্ধার্থের মৃত্যুর খবর শেহনাজ যখন পান তখন তিনি শ্যুটিং করছিলেন। শ্যুটিং মাঝ পথে থামিয়ে তিনি বেরিয়ে যান। পরবর্তী সময়ে শোনা যায়, সিদ্ধার্থের যখন মৃত্যু হয় তখন শেহনাজ তাঁর সঙ্গেই ছিলেন। তার আগে শোনা যাচ্ছিল, সেই রাতে সিদ্ধার্থ তাঁর মায়ের সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়ে অসুস্থ বোধ করায় বাড়ি ফিরে এসে খাবার খেয়ে, ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে সাড়া না পেয়ে ডাক্তারকে খবর দেওয়া হয় এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে কেন কুপার হাসপাতাল? মাঝখানে এক বার কোনও এক মাধ্যমে শোনা গেল, সিদ্ধার্থের অসুস্থতার খবর তাঁর মা-কে নাকি শেহনাজ দিয়েছিলেন। আবার এটাও সত্যি, তাঁর মা নাকি তাঁর সঙ্গেই ছিলেন বা থাকতেন।

কোথা থেকে আসছে এই সব খবর? কোন রান্নাঘরে তৈরি হচ্ছে? কারা করছেন? কিছু না জেনে আমরাও সেই রান্নায় মশলা মিশিয়ে চলেছি। কেন? শোক প্রকাশ করুন ৪০ বছরের একটা জলজ্যান্ত প্রাণ এ ভাবে হারিয়ে গেল। ভাবুন তো, তাঁর কাছের মানুষগুলোর সারা জীবনের ক্ষতটা! বিগ বস ১৩-র একটা দৃশ্য মনে পড়ছে, যেখানে শেহনাজ বলছেন সিদ্ধার্থের উদ্দেশে, ‘‘আমি বিগ বস জিততে চাই না, আমি চাই তোকে জিততে। আমি তোকে পেতে চাই। আর আমি চাই, তুই বিগ বস জিতে নে।’’

সিদ্ধার্থকে ঘিরে শেহনাজের আরও অনেক পাগলামোর ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেখুন, কষ্ট হবে মেয়েটার জন্য। যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে ভালবাসার মানুষকে শেষ দেখা দেখতে শ্মশানেও পৌঁছেছিলেন শেহনাজ। সবটা শূন্য হয়ে গেল যে! হয়তো এক দিন সব কেটে যাবে। সেই সময়টা তো তাঁকে দিতে হবে। ওঁকে ছেড়ে দিন ওঁর মতো। সিদ্ধার্থকে ছাড়া বেঁচে থাকার শক্তিটা সঞ্চয় করতে দিন। বন্ধু হারালে যে গোটা দুনিয়াটা খাঁ খাঁ করে। লড়াই করতে দিন একাকিত্বের সঙ্গে।

প্রসঙ্গত, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু কী ভাবে হয়েছিল তা এখনও অধরা। আত্মহত্যার তত্ত্বকে টপকে এখনও তা খুন বলে প্রমাণ করতে পারেনি দেশের বিচার ব্যবস্থা। হয়তো এক দিন জানা যাবে বা যাবে না। যে ভাবে দিব্যা ভারতী বা জিয়া খানের মৃত্যু রহস্য ‘রহস্য’ই থেকে গিয়েছে। তার আগেই জেল খাটতে হয়েছে রিয়া চক্রবর্তীকে। সুশান্তের মৃত্যুর থেকেও হয়তো ভয়ঙ্কর স্মৃতি হয়ে থাকবে সেই দিনগুলো রিয়ার জন্য। এক দিন তিনিও হয়তো এই কঠিন সময়কে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবেন। সবার সে অধিকার আছে। সবার অধিকার আছে ভাল থাকার। কিন্তু আমরা থাকতে দিলে তো!

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)