ভারতীয় হকিতে বিপ্লব ঘটিয়েই একটা রাজ্য জাতীয় দলের স্পনসর

ভারতীয় হকিতে বিপ্লব

ভারতীয় হকিতে বিপ্লব ঘটে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু কী ভাবে? একটা জাতীয় দলের স্পনসর একটা রাজ্য! লজ্জা পাওয়া উচিত এ দেশের তাবড় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর। লজ্জা পাওয়া উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। লজ্জা পাওয়া উচিত অন্যান্য রাজ্যের। লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


৪১ বছর পর আবারও অলিম্পিক্স থেকে পদক নিয়ে ফিরছে ভারতীয় পুরুষ হকি দল। এটাকে ভারতীয় হকিতে বিপ্লব বলাই যেতে পারে। সাফল্যের শিখর থেকে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া দলটার দীর্ঘ লড়াইয়ের সাক্ষী নেই বললেই চলে। চোরাবালিতে ক্রমশ ডুবতে থাকা খেলাটাকে ঠিক সেই মুহূর্তে হাত বাড়িয়ে টেনে তুলল একটা রাজ্য। তার পর কয়েকটা বছর… আর বদলে গেল ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের ইতিহাস।

ভারতীয় হকিতে বিপ্লব যে ওড়িশাই আনতে পারে তা সে রাজ্যে বসে হকি ‘উপভোগ’ না করলে বোঝা মুশকিল। বাংলার কথা ছেড়েই দিলাম। পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, এখন মহারাষ্ট্র এবং দক্ষিণের রাজ্যগুলো থেকেও প্রচুর হকি প্লেয়ার উঠে আসছে। কেউ এগিয়ে এসে বলেননি, ভারতীয় হকির পাশে আছেন তিনি। যখন তাঁর রাজ্যের কেউ সফল হয়েছেন, তখন তাঁকে নিয়ে এক দিনের উৎসব… সঙ্গে বাড়ি-গাড়িও জুটেছে। তার পর সবটাই শূন্য। কিন্তু ওড়িশা সে ভাবে ভাবেনি। সে ভাবে ভাবেননি সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। তাই গত ৩ বছর ধরে ভারতীয় হকিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওড়িশাই।

যে ইতিহাস বৃহস্পতিবার গড়েছে ভারতের পুরুষ হকি দল, সে ইতিহাসের মূল কারিগর নবীন। ভারতীয় দল জেতার পর অধিনায়ক মনপ্রীতকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভোরে উঠে খেলা দেখেছেন। ভারতীয় দল অলিম্পিক্সের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে দেখা করেছেন। দলের খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু ভারতীয় খেলাধুলোয় এটাই শেষ নয়।

এখানে টাকার অভাবে হারিয়ে যায় প্রচুর প্রতিভা। জানতেই পারে না কেউ। হকিও তার ব্যতিক্রম নয়। স্পনসরের অভাবে ধুঁকতে থাকা ভারতীয় হকি দলের পাশে যখন কেউ ছিল না, সেই সময় দাঁড়িয়েছিল ওড়িশা সরকার। তাই গোটা দল সমস্বরে বলতে পারে, আজও তারা সব থেকে বেশি খেলা উপভোগ করে ভুবনেশ্বরে। কেন বলে? সেটা বুঝতে ভুবনেশ্বরের স্টেডিয়ামে বসে হকি ম্যাচ দেখতে হবে। শুধু সাফল্যের সময় তারকা খুঁজে তার জয়গান করলে সেই লক্ষ্যে কখনওই সফল হওয়া যায় না। আসলে খেলাটাকে ভালবাসতে হয়। শুধু সাফল্যকে নয়।

কোনও আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের থেকে পিছিয়ে নেই ভুবনেশ্বরের হকি স্টেডিয়াম।

বলতে বাধ্য হচ্ছি, ব্রোঞ্জ পদক পাওয়ার পর ভারতীয় হকি দল নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেশের সর্বত্র দেখা যাচ্ছে, তা মুহূর্তে শূন্য হয়ে যেত যদি না পদকটা আসত। এবং সেটা শূন্য হয়ে যাবে ভারতীয় দল দেশে ফেরার এক মাসের মধ্যে। তখন শুধু জ্বলজ্বল করবে ক্রিকেটারদের মুখ। এই সফল ক্রীড়াবিদদের মুখ কি সত্যিই কোনও এনডোর্সমেন্টে দেখা যাবে কখনও? বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, ওঁরাও এক দিন কারও হিরো হবেন। ওঁদের কাছেও বড় গাড়ি, বড় বাড়ি, বিদেশে ছুটি কাটানোর সুযোগ থাকবে। ওঁদের ছবি লাগানো হবে কারও বাড়ির দেওয়ালে। বিজ্ঞাপনে ভেসে উঠবে মুখ।

আবারও আসি ওড়িশার কথায়। সেটা ২০১৪-১৫ হবে। হকি বিশ্বকাপ কভার করতে ভুবনেশ্বর গিয়েছিলাম। না কোনও বড় মিডিয়া হাউসের তরফে নয়, নিজের উদ্যোগে। তখনও মাঠে গিয়ে খেলা কভার করা যেত। অতিমারী এসে সব বন্ধ করে দেয়নি। লিখে হয়তো সবটা বোঝানো সম্ভব নয়। তবে ভুবনেশ্বরে ভারতীয় হকি দলকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেখেছিলাম তা এমএস ধোনি, বিরাট কোহলিদের ভারতীয় দলকে ঘিরে আবেগকে বলে বলে ১০ গোল দেবে। আর সেটাই ভারতীয় হকির মানচিত্রে এগিয়ে রাখছে ওড়িশাকে। যার ফলেই গোটা একটা রাজ্য জাতীয় দলের স্পনসর হয়ে গিয়েছে। এমন নজির নেই কোথাও। এই সাফল্য দেশের থেকেও বেশি ওড়িশার।

ভারতের জয়ের পর নবীন শুভেচ্ছা তো জানিয়েছেনই দলকে, সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন এই দলকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে গোটা রাজ্য। কেকেআর আইপিএল জেতার পর কলকাতার রাস্তায় জনজোয়ার দেখা গিয়েছে। শুভেচ্ছা, পুরস্কার, টাকা এমনিতেই ওড়ে ক্রিকেটে, তার উপর আরও আরও টাকা— কী ছিল না সেখানে। এ বার তার ১০ গুণ বেশি দেখার অপেক্ষায় ওড়িশা। নবীন বলেছেন, ‘‘আমাদের হকি দলকে শুভেচ্ছা… গোটা ভারত উচ্ছ্বসিত, অবশ্যই ওড়িশাও। আমরা সবাই তোমাদের পিছনে আছি। আমরা আমাদের ভারতীয় হকি দলকে স্বাগত জানানোর জন্য মুখিয়ে রয়েছি ভুবনেশ্বরে। ১৬ অগস্ট। এবং আরও এক বার ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে শুভেচ্ছা।’’

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)