নচিকেতার জন্মদিন-এ তাঁকে আপন করে পাওয়ার অনুভূতি

নচিকেতার জন্মদিন

নচিকেতার জন্মদিন আজ, ১ সেপ্টেম্বর। প্রতি বছর এই দিনটায় শহরেরই কোনও একটা জায়গায় জড়ো হয়ে ‘আগুনপাখি’ নচিকেতার জন্মদিন উদ্‌যাপন করে। তিনি শহরে না থাকলেও আয়োজনে খামতি থাকে না। এ বার নচিকেতা শহরেই রয়েছেন। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে সকলের জড়ো হওয়া কার্যত অসম্ভব। তাই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় উদ্‌যাপিত হবে জন্মদিন। আজকের দিনে ভিড়ে ঠাসা এমনই এক জন্মদিনের কথা মনে পড়ে গেল তাঁর। তিনি আগুনপাখির অন্যতম স্তম্ভ সুনন্দ চট্টোপাধ্যায়


আজ নচিদার জন্মদিন। আর সেই সূত্রেই মনে পড়ে যাচ্ছে বেশ কয়েক বছর আগের একটা দিনের কথা। নচিদা আর আমি— অনুষ্ঠানে দেখা হওয়া ছাড়া আমাদের মাঝে সেই সময় ফোন-ই ভূষণ। মাঝে মধ্যেই টুকরো টুকরো কথা, হাল্কা আলাপ-আবদার আর আমার জীবনে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা, ভাল লাগার মধুর আবেশ জড়ানো চাদরের অনুভূতি। বাংলা গানের মেগাস্টারের ভক্তকূল তখন ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে ইট-কাঠ-পাথরে। তাদের মাধ্যমেই খবর পেলাম— এদের নাকি একটা দল আছে। যার নাম ‘আগুনপাখি’। বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়াও এরা নচিকেতার জন্মদিন পালন করে কোনও একটি নির্দিষ্ট জায়গায়।

সাহস করে সে বছর ৩০ অগস্ট স্বয়ং তাঁকেই ফোন করেছিলাম। জানতে চেয়েছিলাম, আগামী কাল কোথায় হবে অনুষ্ঠান? কিন্তু প্রশ্নের জবাবে জুটেছিল চরম মুখখারাপ এবং তার পরেও নচিকেতাচিত উত্তর। সত্যি বলছি, মারাত্মক হতাশ হয়েছিলাম। যে মানুষটাকে এত ভালবাসি, সে কি‌না…

বয়স কম ছিল। মনখারাপ পুষতে জানতাম না। তাই পর দিন পৌঁছে গিয়েছি‌লাম নির্দিষ্ট জায়গায়। গিজ গিজ করছে দূরদূরান্ত থেকে আসা অনুগামীতে। ভিড়টা ক্রমশ বাড়তেই থাকছিল। যেমন হয় আর কী!

ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষা করার পরে যে গাড়িটা জনস্রোতের সামনে এসে থামে, তার থেকে নেমে আসে লাল আকাশকে পিছনে ফেলে আমাদের মধ্যাহ্ণের সূর্য। হাজার মুখের মিছিলেও তার হাতটি প্রথমেই উঠে আসে আমার কাঁধে। বলে, ‘‘কাল বকেছি। রাগ করিস না।’’

ভিড় এড়িয়ে, সিঁড়ি পেরিয়ে, গালিচা মাড়িয়ে মঞ্চে যাওয়া পর্যন্ত ওই হাতটি ছিল আমার কাঁধে। আজও আছে। সারা জীবন থাকবে, আমি জানি। কারণ, ওই হাতটা আমার ঈশ্বরের। তিনি সর্বদা আমাকে বলছেন—

‘আমি আসব তোর কান্না মোছাতে, আসব তোর জন্য,
আমি ঝোড়ো হাওয়া হয়ে ব্যারোমিটারেতে বলব প্রলয় আসন্ন।’

কেন নচিদাকে এত ভালবাসি? কেন মনে হয়, ওই হাত আসলে আমার ঈশ্বরের? অনেক বার নিজেকে প্রশ্ন করেছি। আর তত বারই মনে পড়েছে ম্যাক্সিম গোর্কির একটি গল্পের কথা। লেখক সেই গল্পে এক ঘোড়াগাড়ির চালকের কথা লিখেছেন। গল্পে আছে—  চালকের হাতে একটি চাবুক। গাড়িটি এগিয়ে চলেছে। গাড়ির পিছনে বাঁধা এক নগ্ন মানুষ। চালকের হাতের চাবুক এক বার পড়ছে ঘোড়ার পিঠে, গাড়িটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর এক বার পড়ছে ওই মানুষটির পিঠে। কোনও গর্হিত অন্যায়ের জন্য এটাই তার শাস্তি। ওই চালকের মতো নচিদার চাবুক যেমন গত প্রায় তিন দশক ধরে সমাজের প্রতিটি অন্যায়ের পিঠে আছড়ে পড়েছে, ঠিক তেমনই তা আঘাত হেনেছে বাংলা সঙ্গীতে। নচিকেতা, বাংলা সঙ্গীতের জীবন্ত কিংবদন্তি। তাই তাকে ভাল না বেসে উপায় নেই।

ছোটবেলায় বাবা আমার দু’হাত ধরে এই নরকের অনেক দূরে কোনও এক রাজপথে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছোট্ট আমি প্রশ্ন করেছিলাম, বাবা রাজপথ কী? বাবা বলেছিলেন, ‘‘রাজপথ দিয়ে রাজা যায়।’’ ক’দিন আগে আমার বৃদ্ধ বাবা আমাকে বললেন, ‘‘তোকে সে দিন আমি পুরোটা বলিনি। আসলে রাজা শুধু রাজপথ দিয়ে যায় না। রাজা যে পথ দিয়ে যায়, সেটাই রাজপথ হয়।’’

নচিদার জন্মদিন অনেকাংশেই এ বার ‘ভার্চুয়াল’। ‘আগুনপাখি’র সেই জড়ো হওয়াও কার্যত সমাজমাধ্যমে, ইন্টারনেটের তার বেয়ে। তবু আজ রাজার জন্মদিন। রাজপথেই দেখা হবে বন্ধুরা।

নচিকেতার ছবি সৌজন্যে: আগুনপাখি ফ্রেন্ডস ফোরাম।

(আরও ফিচার পড়তে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)