বাঙাল-ঘটির আড্ডা চায়ের দোকানে, জমাটি দ্বন্দ্ব বেধে গেল ইস্ট-মোহনে

বাঙাল-ঘটির আড্ডাবাঙাল-ঘটির আড্ডা

কুণাল দাশগুপ্ত


বাঙাল-ঘটির আড্ডা জমে ওঠার আগে গজাদার পরিচয়টা দিয়ে রাখা দরকার। মধ্য তিরিশের গজাদা স্থূলকায়। নাক আর পিঠের চামড়া— দুটোই বেশ মোটা। ফুটবল-সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রবল পাণ্ডিত্য। ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। বাঙাল ভাষায় কথা বলেন অনর্গল। তবে অন্যকে অপমান করার বাসনা কোনও দিনই নেই।

নিত্য আড্ডার কেন্দ্র মামার চায়ের দোকান। ওটাই তাঁর বিধান পরিষদ। পারিষদদের মধ্য রয়েছে গুলটে, বিচ্ছু, প্যাঁচা, পটল আর কেল্টুচরণ। এই কেল্টুচরণ আবার একশো শতাংশ ঘটি। সর্বদাই ঘটি ভাষায় কথা বলেন।

তারিখ ১৫ অগস্ট ২০১৭। স্বাধীনতা দিবসের সকালে মামার চায়ের দোকানে চলছে ভরপুর আড্ডা। বিষয়: এখন আর কেন দেশাত্মবোধক গান রচনা হয় না। গুলটে, বিচ্ছু, প্যাঁচা, পটল আর কেল্টু— যে যার মতামত দিয়ে চলেছে।
এমন সময়ে গজাদার প্রবেশ—

গজাদা: তগো আলোচনার বিষয়ডা কী?
বিচ্ছু: দেশাত্মবোধক গান এখন আর হয় না কেন?

গজাদা: হওনের কোনও কারণ আসে কি? ও সব আর হইব না।
গুলটে: আরে কেন হবে না সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি।
পটল: শুধু তুই আমার প্রাণ, তুই আমার জান, তুই আমার নাক, তুই আমার কান।
প্যাঁচা: গজাদা, এইগুলোই লোকে গিলছে।
কেল্টু: হুম। ওই সব দেশাত্মবোধক লোকে এখন আর খাচ্চে নাকো!

বাঙাল-ঘটি দ্বন্দ্ব

ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি

গজাদা: আগে এই ভূ-খণ্ডে ক্ষুদিরাম, মাস্টারদা, নেতাজির মতো মানুষ জন্মাইতো। এখন আসে এরা? দ্যাশের কথা ভাবসো কখনও? শুধু নিজেদের লইয়াই আসো।

পারিষদেরা সমস্বরে বলল, ‘‘তা তুমি কোন দেশের সেবাটা করো শুনি?’’

গজাদা: শরীরে রক্ত ঠিক মতো নাই, তাই রক্তদান করতে পারি না। আর ট্যাহা-পয়সা কম, তাই বন্যাত্রাণে দান করতে পারি না। এ ছাড়া সবই করি। আমি কি আর কেল্টু যে, মোহনবাগান মাঠে যামু, খেলা দেখুম আর বিড়ি ফুকুম!
কেল্টু: গজাদা তোমার কতা আমি মানতে পারচিনে। খালি ঘটি আর মোহনবাগানকে গাল দিচ্চো। আমি সহ্য করবুনি। আচ্চা তুমি তো সব জানো। বলো তো বিপ্লবীর বিপরীতার্থক শব্দ কী?

গজাদা: তুই হইলি গিয়া বাংলায় বঙ্কিমচন্দ্র। এর কোনও বিপরীতার্থক শব্দ হয়! কিছুই শেখোস নাই। টুইক্যা টুইক্যা পাশ করসো।
কেল্টু: কতা কম বলো। মন দিয়ে শোনো। বিপ্লবীর উল্টো হল বাঙাল।

ধানফুলের গন্ধ মাতাল করে স্বপ্ন দেখার এই খামারবাড়িতে

গজাদা: মানে?
কেল্টু: বিপ্লবী বলতি বোঝায় তাঁদের, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণত্যাগ করে। আর বাঙাল তাঁরা, যাঁরা প্রাণের জন্য দেশ ত্যাগ করি চলি আসে মোদের দেশে।

গজাদা: হ, আমরা আইসি। আমাগো দ্যাশে প্রশাসন নিরপেক্ষ আসিল না। এখানে সেডা ছিল। বুঝবি না রে তুই। অপরের লেখা টোকসো তো!
গজ গজ করতে করতে গজাদা মামার চায়ের দোকান ছেড়ে চলে গেল।

ডিসেম্বর মাসের সন্ধ্যা

মামার চায়ের দোকানে শীতের মেজাজে সান্ধ্য আড্ডা।

কেল্টু: এ বারও বোধহয় আমাদের কোনও ট্রফি জুটবেনি। এক দশকে মাত্তর দুটো ট্রফি পেয়েছি।
পটল: তাও ভাল। এআইএফএফ দু’বছরের নির্বাসনটা বজায় রাখলে যে কী হবে, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দেয়।

ঠিক এমন সময় গজাদার প্রবেশ

গজাদা: অ, ফুটবল নিয়ে আলোচনা করতেআসো? কেল্টু তরে একখান কথা কই, মন দিয়া শোন।
কেল্টু: বলো।

বাঙাল-ঘটি দ্বন্দ্ব

মোহনবাগান গ্যালারি

গজাদা: তরা এই বার নিজেদের এসসি, এসটি বা ওবিসি ক্লাব কইয়া প্রচার কর। এতে তগো আখেরে লাভ হইব।
কেল্টু: মাথা খারাপ হয়েচে দেকি। আমলো যা! খামোখা মিথ্যা কতা বলব কেন! মিথ্যাচার করতে পারবুনি বাবা। ও সব হবে নাকো।

গজাদা: মিথ্যা কথা তরা কস না?
কেল্টু: না।

গজাদা: তাইলে নিজেদের জাতীয় ক্লাব কস কী কইরা। কেডা তগো এই সম্মান দিসে? কোনও সার্টিফিক্যাট দেখাইতে পারবি? পারবি না।
কেল্টু: আচ্চা। যদি সিডিউল কাস্ট নিজেদের বলি তাতে লাভ কী?

গজাদা: লাভ, এইটাই, প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে ওঠলেই তগো চ্যাম্পিয়ন ধরা হইবো। মাঝমাঠে কেউ পইড়্যা গ্যাল‌ে পেনাল্টি দিবে রেফারি। বারের দশ ফুট ওপর দিয়া বল ওড়াইয়া দিলে রেফারি পিক পিক কইরা বাঁশি বাজাইবো।
কেল্টু: তোমার সঙ্গে কতা বলবুনি। তুমি খচ্চর।

অন্যরা সমস্বরে হা হা করে হেসে উঠল।

(এর পর মোহনবাগান সিএফএল নাকি বিশ্বকাপ নাকি ব্রহ্মাণ্ডকাপ জিতেছিল)