Covid Wave 4 আসছে… আত্মতুষ্টির ঢেউয়ে ভাসছে দেশ!

Covid Wave 4

সুচরিতা সেন চৌধুরী: এক একটা উৎসব আসে আর তার পরই শুরু হয় হাহাকার (Covid Wave 4)। এমন তিনটি ধাক্কা দেখে নিয়েছে দেশ। ২০২০-তে যখন প্রথম কোভিড-১৯ হানা দিয়েছিল তখন তা সম্পর্কে কোনও ধারনাই ছিল না সাধারণ মানুষের। যার ফলে হুহু করে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে সংক্রমণ। সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের—কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই কারও কম ছিল না। যতই লোকে সমালোচনা করুক, সেই সময় রাতারাতি মোদী সরকার দেশ জুড়ে লকডাউন না করলে পরিস্থিতি কোথায় যেত তা ভাবলেও শিউড়ে উঠতে হয়। নিন্দুকেরা তার পরও বলবেন, তাতে কী ক্ষতি কম হল? ক্ষতি কম হল না বেশি হল এই তুলনা করা সম্ভব নয় কিন্তু প্রশাসনের দিকে আঙুল তোলা মানুষদের উদ্দেশে আমার প্রশ্ন, আপনাদেরও কি কোনও দায়িত্ব নেই?

এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তেমনটাই মনে হচ্ছে। গত বছর দুর্গা পুজোর সময় একদল মানুষ যখন প্যান্ডালমুখি এবং তার পর কোভিড আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন, হাসপাতালের বেডের জন্য হাহাকার তখন আর একদল মানুষ প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই দুর্গাপুজো করার অনুমতি কেন দেওয়া হল? আবারও তেমনই প্রশ্ন উঠতে চলেছে। এই যে রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে পুরীতে যেভাবে মানুষ ভিড় জমিয়েছে, তাতে কোভিড ছড়িয়ে পড়া তো সময়ের অপেক্ষা। এবার প্রশ্ন উঠবে, কেন রথের অনুমতি দিয়েছে? আমার প্রশ্ন, আপনাকে তো কেউ বাধ্য করেনি রথের অনুমতি দেওয়া হয়েছে মানেই আপনাকে গিয়ে সেখানে ভিড় বাড়াতে হবে?

এই প্রশ্ন, উত্তর, দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালা চলবেই। আবার শুরু হল বলে। ইতিমধ্যেই দেশের কোভিড গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখি। পিছিয়ে নেই আমাদের রাজ্যও। এবার পুরীতে রথযাত্রায় পূণ্য করে ফিরবেন সবাই। তার পরটা কারও অজানা নয়। পুরীর ছবি বেশ কয়েকদিন ধরেই উঠে আসছে। ক্রমশ বাড়ছে ভিড়। হোটেল নেই, সব হোটেল ভর্তি। হঠাৎ করে পৌঁছে যাওয়া পর্যটকদের ফিরতে হচ্ছে ভুবনেশ্বর বা অন্য কোথাও। তার উপর রথের দড়িতে টান দিতে শুক্রবার সকলেই নেমে পড়েছিল রাস্তায়। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে পর্যটক সব মিলে মিশে একাকার। সবাইকে দেখে মনে হচ্ছিল মাস্ক কেন পরেননি জিজ্ঞেস করলে বলবেন, সে আবার কী জিনিস?

সে কী শুধু পুরীর রথযাত্রার দৃশ্য? এই মাস্কহীন মুখেরসারিই এখন সর্বত্র। আপনি, বাসে উঠুন, ট্রেনে উঠুন, রাস্তায় হাঁটুন বা কোনও মিটিং-মিছিলে যান—না মাস্ক ব্যবসাটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে মনে হবে। এখন তো মাস্ক পরে রাস্তায় বেরলে সবাই কেমন একটা অদ্ভুতভাবে তাকায়। যেন কোনও অপরাধ করে ফেলেছি আর কাউকে মাস্ক পরতে বললে কোনও কথাই নেই। তার থেকে বড় অপরাধ আর কিছু হয় না। লোকাল ট্রেনে প্রতিদিনের যাতায়াতের পথে দেখি, ৯৮ শতাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। সঙ্গের ছোট বাচ্চাটাকেও মাস্ক পরায়নি। শুনছি আবার আসছে। দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো সব পরিকাঠামো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে কিনা জানি না কিন্তু অশনী সঙ্কেত তো রয়েছেই। ‘হু’ জানিয়ে দিয়েছে কোভিড এখনও চলে যায়নি তাই সাবধান থাকতে হবে।

নিন্দুকেরা এখানেও বলবেন, ভ্যাকসিন বিক্রি করার নতুন ফন্দি এটা। কোভিডের ভয় দেখিয়ে এর আগে জোড়া টিকা দেওয়ানো হয়েছে আর এবার বুস্টার দেওয়ার জন্য চতুর্থ ঢেউয়ের আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। কোনও অভিযোগকেই অস্বীকার না করে একটাই প্রশ্ন করতে চাই, দ্বিতীয় ঢেউয়ে যে মুড়িমুড়কির মতো মানুষ মরে গেল, যে মৃত্যু মিছিলের তালে পা মেলালো গোটা দেশ, শ্মশানের বাইরে প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে যে ছেলে দিনের পর দিন লাইনে দাঁড়িয়ে একদিন নদীতে ছুঁড়ে ফেলল, অক্সিজেনের হাহাকার, হাসপাতালে বেডের আকাল,খবর করতে গিয়ে কোভিড আক্রান্ত হয়ে সাংবাদিককদের মৃত্যু, চিকিৎসা করতে গিয়ে একইভাবে ডাক্তারদের মৃত্যু—কে দেবে এর হিসেব?এঁরা সকলে কিসের শিকার হলেন?

কোভিডের ঢেউ। শুনতে বেশ অন্য রকম, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ—সব ঢেউ। এর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া যাক না আরও একটা করে নাম। প্রথমটা চিনা ঢেউ হলে দ্বিতীয়টা পর্যটনের ঢেউ। তৃতীয়টা নির্বাচনের ঢেউ হলে চতুর্থটা আত্মতুষ্টির ঢেউ। এভাবেই মানুষের ছোট ছোট ভুলের খেসারত দিয়ে যেতে হবে গোটা দেশকে। জীবনটাকে উপভোগ করতে হবে তো। তার জন্য সুস্থ শরীরে বেঁচেও থাকতে হবে যে। ঢেউয়ের ধাক্কায় কখন যে কী হাত থেকে ছিটকে যাবে কেউ জানে না। শুধু জানে ঢেউ আছে, ঢেউ আসছে। আর আমরা ভাসছি।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle