Coffee House In Memory: ইনফিউশনে আজও নেই কনফিউশ‌ন

Coffee House In Memory

রামিসা আনজুম: “কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই…” মান্না দে গানটি গেয়েছেন তা আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। কিন্তু বাঙালির মনে গেঁথে যাওয়া সে গানের সুর একই আছে। আড্ডাটা বদলেছে। বদলেছে প্রজন্ম, অভ্যেস। কারও শেষ হয়েছে কারও শুরু। ১৪৬ বছর ধরে, হাজারো মানুষের গল্পের, আড্ডার, ভালোবাসার প্রাণকেন্দ্র হয়ে আছে কলেজ স্ট্রিট এর মোড়ে ঠিক প্রেসিডেন্সির বিপরীতের এই ইন্ডিয়ান কফি হাউজ (Coffee House In Memory)।

হাউসে আড্ডা দেয়নি, এমন বাঙালি অনেক কমই আছেন। শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, সুদূর বিদেশ থেকে অনেক মানুষ এসে এখানে আড্ডা দিয়ে গেছেন। সত্যজিৎ রায় হোক কিংবা অপর্ণা সেন আবার অমর্ত্য সেন হোক কিংবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তাদেরও কাজ শেষে আড্ডার ঠিকানা কিন্তু হাউসই ছিল। এখানে বসেই কেউ নতুন সিনেমার স্ক্রিপ্ট সাজিয়েছেন, তো কেউ তাঁর গোটা উপন্যাস লেখা শেষ করেছেন। বলতে গেলে শেষ হবে না এত অজস্র গল্প নিয়ে বেঁচে আছে এই কফিহাউস।

তবে যদি এই জেনারেশনে ফিরে আসি, তাহলে দেখা যাবে এখন একটা গোটা জেনারেশন মোবাইল ফোনের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে থাকতে যেন হারিয়ে ফেলেছে হাউসের মধ্যের আবেগকে। আমি বরাবরই দুই জেনারেশন এর মাঝখানে পড়ে যাওয়া মানুষ। মাঝেমধ্যেই তাই মোবাইল ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি মুহূর্তগুলোকে ফ্রেমবন্দি করতে। এই কদিন আগেই বইপাড়ায় গেছিলাম বেশ কিছু নতুন বই সংগ্রহ করতে, কেনা শেষে ঢুকে পড়লাম কফি হাউসে।

হাউসে বরাবরই আমার প্রিয় মেনু, ইনফিউশন আর পেয়াজের পাকোড়া। এই দু’য়েই আমার বেশ কেটে গেল বিকেলটা। ভাগ্য খুব ভাল থাকায় জানালার পাশের টেবিলটা ফাঁকা পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রায়ই এখানে আসা হয় বলে কর্মীরা সকলেই পরিচিত। তেমনই একজন মন্টু দাস, এসে অর্ডার নিয়ে গেলেন। তিনি প্রায় এখানে ৩৮ বছর কাজ করছেন। তাঁর কাছে এটা আর কাজের জায়গা নয়, তার দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠেছে। তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, “এতোগুলো বছর এখানে কাজ করছেন, যদি কোনও দিন এর থেকে ভাল কাজের সুযোগ পেতেন, তাহলে কি যেতেন?’’ উত্তরে তিনি আমাকে বলেন, ‘‘পেট চালানোর দায়ে তখন এখানে কাজ পেতেই নিয়ে নিয়েছিলাম। আর তারপর এই সাদা জামাটি অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়, ফলে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।”

বাইরে তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল উঁকি মারছে। হাউজে অনেক মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ জায়গা না পাওয়ায়, হাউসের উপরতলার কার্নিশ ধরে অপেক্ষা করছে। আমি কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে চোখ বুলিয়ে নিলাম বাকি টেবিলগুলোতেও। কোনও টেবিলে কলেজ ফেরত পড়ুয়াদের ভিড়। কোনও টেবিলে চলছে বয়স্কদের রিইউনিয়ন। আবার কোথাও চাকরি সূত্রে আলাদা হয়ে যাওয়া দুই বন্ধুর হঠাৎ দেখার মুহূর্ত। আর কোথাও আমারই মতো কেউ একা বসে হাউসের ভিড়ের মধ্যে মিশে যাওয়া মানুষগুলোর গল্প পড়ার চেষ্টা করছে। এভাবেই চিরকাল নস্টালজিয়ায় বেচেঁ থাকবে হাউসের অন্দরমহলের কাহিনীগুলো।

ছবি—লেখক

 

 

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

জাস্ট দুনিয়ার সঙ্গে গোটা বিশ্বকে রাখুন নিজের পকেটে। Follow Us On: FacebookTwitterGoogle