পর্যটকশূন্য দার্জিলিং, তবুও করোনা সংক্রমণ বাড়ছে মারাত্মকভাবে, কেন?

GTA Election

পর্যটকশূন্য দার্জিলিং তাও বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা, যা রীতিমতো চিন্তায় রাখছে প্রশাসনকে। কিন্তু কেন বাড়ছে? ট্যুরিস্ট স্পট বলে সব দোষ পর্যটকদের উপর চাপিয়ে দিয়েই দায় সারলে হবে না। ঘুরে এসে লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী

লকডাউন শিথিল হল, খুলল ট্রেন, খুলে দেওয়া হল পর্যটন কেন্দ্র গুলো অবশ্যই কোভিড বিধি মেনে। আর তার পর থেকেই বাংলার দুই বিখ্যাত ট্যুরিস্ট স্পটে হু হু করে বাড়তে শুরু করল কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। দিঘার ঠিক কী পরিস্থিতি তা বলতে পারব না। কিন্তু দার্জিলিংয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম অকারণে সব দোষ পর্যটকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা কিন্তু মোটেও নয়। মানুষও আজকাল যথেষ্ট সচেতন। দুমদাম কেউ বেরিয়ে পড়ছেন না। পড়লেও কোভিড বিধি মেনেই হচ্ছে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে ট্যুরিস্ট প্রায় নেই বললেই চলে দার্জিলিংয়ে। তাহলে তাঁদের দোষ কোথায়?

দার্জিলিং গিয়ে একদম উল্টো ছবি দেখলাম। যে ম্যালে সব সময়, সব মরসুমে থিক থিক করে বাঙালির ভিড় তার ছিটেফোঁটাও নেই। যে গ্লেনারিজ এবং কেভেন্টার্সে ঢোকার জন্য বাঙালি তথা পর্যটকদের হুড়োহুড়ি লেগেই থাকে, পড়ে লম্বা লাইন তারও দেখা নেই। বরং যখন ইচ্ছে ফাঁকা কেভেন্টার্স, গ্লেনারিজে পছন্দের জায়গা বেছে বসে পড়া যায়, নিজের ইচ্ছে মতো দীর্ঘ সময়ও কাটানো যাচ্ছে। কেউ এসে তাড়া দেবে না। তা হলে পর্যটকের ভিড় কোথা থেকে এল?

দার্জিলিংয়ে বাড়ছে কোভিড

বরং এই সব জায়গায় রয়েছে স্থানীয় মানুষের ভিড়। সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত দার্জিলিংয়ের ওইটুকু চত্বরে কাটানোর পর যে উপলব্ধি হল তা হল, স্থানীয় মানুষদের মধ্যে সচেতনতার অভাব। ম্যালের যে বসার জায়গাগুলো ট্যুরিস্টদের দখলে থাকে এখন সেখানেই ভর্তি স্থানীয় মানুষ। গায়ে গা লাগিয়ে মাস্ক ছাড়া বসে চলছে গল্প, আড্ডা। ম্যালের সিঁড়িতেও সেই একই দৃশ্য। না, কোথাও নেই পর্যটক। ম্যালের দু’পাশের দুই মার্কেটের একটি মহাকাল মার্কেট। সেখানে ৯০ শতাংশ দোকান বন্ধ।  এক দুটো যা খুলেছে তাতেও কেনা-বেচা নেই। আর একটি মার্কেটে দোকান খোলা থাকলেও তাতে পর্যটকের ভিড় নেই। বরং বেশ কিছু স্থানীয় মানুষকেই দেখা গেল ইতিউতি ঘুরতে।

কোনও স্থানীয় মানুষের মুখে নেই মাস্ক। দোকানে ঢুকলে সেখানে কর্মরত মানুষদের বলতে হচ্ছে, ‘মাস্ক পরুন‌’। দার্জিলিংয়ের যা নিয়ম তাতে সেখানে গিয়ে পর্যটকদের থাকতে হলে লাগবে জোড়া ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট বা আরটিপিসিআর পরীক্ষার ৭২ ঘণ্টা মধ্যের নেগেটিভ রিপোর্ট। পরবর্তী সময়ে তাও কমিয়ে র‍্যাট রিপোর্ট দিলেই ঢোকা যাবে দার্জিলিংয়ে করা হয়েছে। আর যাঁরা থাকবেন না তাঁদের জন্য কোনও নিয়ম নেই। মোড়ে মোড়ে পুলিশের নাকা চেকিং চলছে। কড়া প্রশাসন। তাহলেও কেন বাড়ছে দার্জিলিংয়ের কোভিড সংক্রমণ?

দার্জিলিংয়ে বাড়ছে কোভিড

এখানে আরও একটা বিষয় বলে রাখা ভাল, এটা আমি শুধু মূল দার্জিলিংয়ের কথা বলছি। শৈলশহরের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র গ্রাম, যেখানে কোভিড পরীক্ষা হচ্ছে না বললেই চলে। মানুষ বুঝতে পারছেন, স্বাদ, গন্ধ চলে যাচ্ছে, জ্বর হচ্ছে আবার সুস্থও হয়ে যাচ্ছেন। কারণ নিয়মিত কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই সেখানে। সর্বত্র পরীক্ষা হলে এই পরিসংখ্যান কতটা বাড়তে পারে তা ধারণা করা মুশকিল। তবে দার্জিলিংয়ের কোভিড পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে পর্যটক নয় স্থানীয়দের সচেতনতার অভাবেই। প্রশাসনের সেটা দেখার সময় এসেছে।

প্রসঙ্গত, কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের পর যখন পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল তখন দার্জিলিংয়ে পর্যটকের ঢল নেমেছিল। থিকথিক করছিল ভিড়। লাইন দিয়ে ঢুকতে হচ্ছিল গ্লেনারিজ, কেভেন্টার্সে। ম্যালে পা দেওয়ার জায়গা ছিল না। সেই মরিয়া ভিড়ের কোনও চিহ্ণ এখনও নেই দার্জিলিংয়ে। তবে কোভিড বিধি যত শিথিল হবে তত বাড়বে ভিড় আর সে কারণেই স্থানীয়দের আরও অনেকটা সচেতন হতে হবে এখনই। না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে।

দার্জিলিংয়ে বাড়ছে কোভিড

—নিজস্ব চিত্র

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)