বাংলাদেশের বউমেলা অভিনবত্বের ছোঁয়া নিয়ে আজও চলছে

বাংলাদেশের বউমেলাছবি—সংগৃহীত

বাংলাদেশের বউমেলা নিয়ে তেমনভাবে আজ আর আলোচনা হয় না। স্বামীর জন্য বৈশাখের দ্বিতীয় দিন বউমেলায় মেতে ওঠে সোনারগাঁও। এ এক অদ্ভুত নিয়ম চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। যা শুনলে চমকে উঠতে হয়। কী ভাবে হয় এই বউমেলা, কী হয় সেখানে? এই মেলার কেন্দ্রে রয়েছে একটি ৪০০ বছরের পুরনো বট গাছ। এই অদ্ভুত তথ্য জাস্ট দুনিয়ার পাঠকদের কাছে তুলে ধরলেন অমৃত হালদার


বাঙালির কাছে পয়লা বৈশাখের রুটিনটা বছরের আর পাঁচটা দিনের থেকে এক্কেবারে আলাদা৷ পয়লা বৈশাখ বলে কথা৷ রোজকার দশটা-পাঁচটা ভুলে, এদিনটা একটু অন্যরকম তো হবেই৷ ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে গঙ্গায় নাইতে যাওয়া৷ নেয়ে এসে শুদ্ধ চিত্তে লক্ষ্মী-গণেশের সামনে জোড় হাতে বসে পড়া৷ পুজো শেষে মিষ্টি মুখ৷ দুপুরে সোনা মুগের ডাল থেকে শুরু করে কচি পাঠার ঝোল সহযোগে গরমা গরম ঝরঝরে বাঁশকাঠি চালের ভাত দিয়ে উদরপূর্তি৷ বিকেলে একটু ভাত-ঘুম৷ সন্ধ্যায় দোকানে দোকানে ঘুরে হালখাতা সেরে একদাগা মিষ্টির প্যাকেট আর ক্যালেন্ডার নিয়ে বাড়ি ফিরে আসা৷ মাঝে কোথাও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে টুক করে একটু আড্ডা সেরে ফেলা৷ ইদানীং সান্ধ্যকালীন রুটিনে বদল ঘটেছে খানিক৷

এখন পয়লা বৈশাখের সন্ধ্যা মানেই বড় কোনও রেস্তোরাঁয় গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বাঙালি খাবার ট্রাই করা৷ এই বাংলায় বাংলা নববর্ষের ছবিটা খানিকটা এমনই৷ তবে ওপার বাংলার বাঙালিদের মধ্যে পয়লা বৈশাখ নিয়ে উদ্দীপনা খানিক বেশিই৷ রমনার বটমূলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে সূচনা৷ ঢাকার রাজপথে তখন হাজার হাজার মানুষের ভিড়৷ লাল আর সাদায় তখন রেঙে উঠেছে রাজপথ৷

তবে প্রত্যন্ত গ্রাম পয়লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে অন্য ভাবে মেতে ওঠে এখনও৷ সেই পুরনো গন্ধটা এখনও মিলেমিশে রয়েছে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে৷ পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তো কত ধরনের মেলাই না বসে৷ তবে সোনারগাঁওয়ের মেলা এক্কেবারে ভিন্ন৷ মেলার নামের মধ্যেই রয়েছে বৈচিত্র্যের ইঙ্গিত৷ নাম ‘বউমেলা’৷

৪০০ বছরের পুরনো একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এই বউ মেলা বৈশাখ মাসের দ্বিতীয় দিন থেকে পাঁচদিনব্যাপী এই মেলা শুরু হয়। বটগাছের নীচে সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজো দিয়ে শুরু হয় মেলা৷ পুজোতে মূলত অংশ নেন মহিলারাই৷ পুরুষরাও অংশ নেন, তবে সংখ্যায় কম৷ লোক মুখে প্রচার, স্বামীর সোহাগিনী হতেই হিন্দু রমনীরা ছুটে আসেন এই পুজোয়। মনস্কামনা পূর্ণ করতে বিবাহিত মহিলাদের ভিড় জমে যায়৷ আর সেই কারণেই এই মেলার নাম ‘বউমেলা’৷

যে বটবৃক্ষের নীচে পুজো হয়, তা স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে বটবৃক্ষটি সিদ্ধেশ্বরী দেবতা নামে সুপরিচিত৷ রেকাবি ভরা বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হন বউ মেলায়। দেবতার সন্তুষ্টির জন্য এখানে আগে বলি দেওয়া হতো৷ তবে এখন সেই প্রথা বিলুপ্ত ৷ বরং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে ওড়ানো হয় পায়রা৷ শোনা যায়, স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে সারা বছর, সুখ শান্তিতে যেন কাটে দাম্পত্য জীবন, এই কামনাতেই পুজোর আয়োজন করে হিন্দু নারীরা।

আর এই পুজোকে কেন্দ্র করেই বটবৃক্ষের পাশের মাঠে বসে বিরাট মেলা৷ স্থানীয় মানুষজনের পাশাপাশি অন্যান্য জেলার মানুষও জড়ো হন এই মেলায়৷ তবে, সময়ের পালা বদলে এ ‘বউ মেলা’ এখন তার অতীত জৌলুস অনেকটাই হারিয়ে বর্ণহীন। মেলার জন্য পর্যাপ্ত স্থান না থাকার কারণে মেলায় আগত দর্শণার্থীদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রামগঞ্জে পালিত হওয়া ঐতিহ্যবাহী মেলাগুলো এখন বিলুপ্তির পথে প্রায়। সেখানে শিবরাত্রির সলতের মতো এখনও জিইয়ে রয়েছে সোনারগাঁওয়ের ‘বউমেলা’৷

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)