আমেরিকার ভোট নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ, কী হবে ফল

আমেরিকার ভোট

আমেরিকার ভোট হয়ে গেল। এ বার সেই ভোট নিয়ে রয়েছে অনেক ভাবনাচিন্তা। এক এক জনের এক এক রকম মত। নিউ ইয়র্ক থেকে ভবিষ্যৎবাণী করলেন ডঃ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়


এখনও পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক টাইমস, সিএনএন-এর মতো বড় বড় জ্যোতির্বলয় স্বঘোষিত মেন্টর মিডিয়ার পোল যদিও জো বাইডেন-কেই এগিয়ে রেখেছে। কিন্তু আমার পেসিমিস্টিক পাপী মন কুডাক ডাকছে। কারণ, দীর্ঘ কাল ধরে যে রাজনীতি দেখে এসেছি এবং এখন যা দেখছি ভারত এবং আমেরিকায়— তাতে অশিক্ষার বিরুদ্ধে শিক্ষার, বিজ্ঞানহীনতার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ধর্মের, নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে নারীমুক্তির এবং জাতি ও বর্ণভেদের বিরুদ্ধে সমানাধিকারের বিজয় হলে আমি অত্যন্ত আশ্চর্য হব।

আর্থিক ও সামাজিক নব-ক্রীতদাস প্রথা শেষ হলে উল্লাসে লাফ দেব। ভাঙা হাঁটুর কথা ভাবব না।

অত্যন্ত খুশি হব এবং আরও কয়েক বছর বেশি বাঁচব নিশ্চয়ই আহ্লাদে গলে জল হয়ে। কিন্তু, ভীষণ আশ্চর্য হব!

ব্রাউন শার্ট (ইয়ে, ব্রাউন প্যান্ট) আরএসএস এবং তার মোদী-শাহ-যোগী শুধু নয়, ব্রাজিলের বৃশ্চিক রেনফরেস্ট জ্বালিয়ে দেওয়া বলসেনারো শুধু নয়, কমিউনিস্ট স্বৈরতন্ত্র শেষ হওয়ার পরে রাশিয়ার নতুন জার্ ভ্লাদিমির পুতিন নয় শুধু, এখন ট্রাম্পের দোসররা সারা পৃথিবীতে হাইড্রার মতো হাজার ফণা তুলেছে। তাদের হাতে এমন মারণাস্ত্র, যা হিটলার এবং তার ব্লিৎজক্রিগ কল্পনাও করতে পারেনি। তাদের হাতে এমন শক্তিশালী প্রোপাগান্ডা মেশিন যা গোয়েবলস কিংবা অর্ণব গোস্বামীর অধরা স্বপ্ন। তাদের হাতে এত বেশি অর্থ ও সম্পদ, যা গায়ত্রী দেবী, বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া কিংবা আমাদের নবাব সিরাজদৌল্লারও স্বপ্নের অতীত।

এই দু’দিন আগে পোল্যান্ডে নিজের শরীরের ওপর নারীর নিজের অধিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমেরিকায় সুপ্রিম কোর্টে নতুন বিচারপতি নিযুক্ত হলেন গত সপ্তাহে। তিনি কোট হ্যাঙ্গার যুগে মার্কিন মহিলাদের নিয়ে যাবেন কথা দিয়েছেন।

আমেরিকা সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের তেমন কোনও ধারণাই নেই। আমাদের দেশের বড় বড় জ্যোতির্বলয় স্বঘোষিত মেন্টর মিডিয়া তাঁদের দেবদূত কিংবা রবীন্দ্রনাথ-নেতাজি-গুরু নানক-শ্রীচৈতন্য-কাবা-মক্কা-মদিনা-রামচন্দ্র-জাতীয় ক্যালেন্ডার আলো দিয়ে আমাদের অন্ধকারে রেখেছেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

তাই, প্রায় কেউই কিছু জানে না। তাদের মুনাফা মিডিয়া মাটিতে পেতে বসে আমরা মুড়ি আর চা খাই। কিংবা, আজকের দিনে এগরোল আর বিরিয়ানি।

গরিবরা বিড়ি খায়।

অধিকাংশ জনতা বোঝেই না, আমেরিকার ভোট দিয়ে আমাদের কী কাঁচকলা হবে। কারণ, ওই যে বললাম— বড় বড় জ্যোতির্বলয় স্বঘোষিত মেন্টর মিডিয়া এবং তাঁদের গা থেকে বিচ্ছুরিত আলো আর আমাদের মনের চিরস্থায়ী অন্ধকার?

আসল কথায় ফিরে আসি। কুডাক ডাকছে যে দুশ্চরিত্র মেগালোম্যানিয়াক ট্রাম্প আবার ফিরে না আসে। কারণ? খুব সহজ। আমেরিকার জনসংখ্যার মাত্র এক তৃতীয়াংশ কলেজ শিক্ষিত। পাটিগণিতের হিসেবে তাই দুই তৃতীয়াংশ কলেজ অশিক্ষিত। তারা বিশাল ভাবে হিটলার সমর্থক। মোদী সমর্থক। ট্রাম্প সমর্থক।

এবং তাদের হাতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল, রিভলভার, শটগান আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোণে কোণে গজিয়ে ওঠা বন্দুক ও বারুদ বিক্রির দোকান। তারা ফক্স টিভি দেখে এবং এ এম রেডিওতে দিবারাত্র অতি-দক্ষিণপন্থী টক্ শোনে— ট্রাকে বসে।

তারা করোনাভাইরাসকে গাঁজা মনে করে, ব্ল্যাকদের ইতর মনে করে, নারীদের স্বাধীনতা ও সমানাধিকারকে কমিউনিজম মনে করে, সোশালিজমকে শয়তান মনে করে এবং আমাদের মতো অদ্ভুত নামের অদ্ভুত ধর্মের বিদেশিদের জঞ্জাল মনে করে। তারা ম্যাপ পয়েন্টিং খেলেনি কখনও।

ভারতের সঙ্গে একটু একটু মিল খুঁজে পাচ্ছেন কি? ভাবছেন একটু একটু? ভাবুন, ভাবুন। ভাবা প্রাকটিস করুন।

তার সঙ্গে যোগ করুন আমেরিকার প্রাগৈতিহাসিক ভোট সিস্টেম। যে ভোট সিস্টেমে আপনি তিরিশ লক্ষ বেশি ভোট পেয়েও হারতে পারেন। যেমন হিলারি হেরেছিল।

(বিদেশের আরও খবরের জন্য এখানে ক্লিক করুন)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)