আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি, ব্রিটিশভূমে দাপট বাংলা ভাষার

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি সেদিন গোত্র গুপ্তকে বাঁচার রসদ দিয়েছিল। গোত্র গুপ্ত, সংবাদ মাধ্যমের অফিসে ছবি আঁকে। মিলনের ছবি আঁকলেন তিনি। ব্রিটিশ ভূমি সেই মিলনের দৃশ্য তৈরি করলেন রবি ঠাকুর। লিখলেন কুনাল দাশগুপ্ত

সাত সকালে পৌঁছে গিয়েছি অফিসে। সম্পাদক মহাশয় তলব করেছেন। সময় মতো না পৌঁছলে চাকরীর ডেথ সার্টিফিকেট অনিবার্য।

অফিসে পৌঁছেই রং-তুলি নিয়ে সম্পাদকের ঘরে ঢুকলাম। দেখি মাথা নীচু করে বসে আছেন। আমাকে দেখে বললেন, ‘‘গোত্র গুপ্ত এত হানাহানি সহ্য হচ্ছে না, এই তো আমারই কাগজে পাতার পর পাতা মারামারি, কাটাকাটির খবর। তুমি তো শিল্পি, একটা মিলনের ছবি এঁকে দাও না।’’ আমি বললাম, ‘‘এ কী এমন বিষয় স্যার, এখুনি এনে দিচ্ছি।’’ এমনভাবে বললাম যেন টু মিনিটস নুডুলস।

আত্মবিশ্বাসটা যেন কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়োয় উঠে বসে আছে। যাই হোক একটা মিলনের ছবি এঁকে নিয়ে গেলাম। কাচুমাচুভাবে দেখালাম। স্যার বললেন, ‘‘কী এঁকেছো বোঝাও। একটা পার্কের চেয়ারে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে আছে। আর কিশোর-লতার তেরে মেরে মিলন কি র‍্যায়না গাইছে। মিলন মানে কি আমি এই সব বুঝিয়েছি?’’ বললাম, ‘‘ও স্যার এ বার আমি ঠিকঠাক ছবিই নিয়ে আসছি।’’

মাথায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে মিলন। এঁকে নিয়ে গেলাম। ক্যাপশন দিলাম, ‘‘সাবন কা মাহিনা পবন করে শোর।’’ সম্পাদক মশাই দেখে দাআঁত মুখ খিঁচিয়ে বললেন, ‘‘সুনীল দত্ত আর নুতনের ছবি এঁকে নিয়ে এলে কেন?’’ বললাম, ‘‘আপনি তো মিলনের ছবি আঁকতে বলেছিলেন। মিলন ছবিতে সুনীল দত্ত আর নুতন এই গানটা গাইছিল।’’ স্যার বললেন, ‘‘গোত্র গুপ্ত একটা রিভলভার এনে দেবে?’’ ‘‘কেন’’, মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করলাম। বললেন, ‘‘তোমায় গুলি করব।’’ রকেটের মতো ঘর থেকে বেরিয়য়ে এলাম। ভাবছি, ছবি আঁকতে না পারলে এখানে গলা ধাক্কা খাব আর এখানে চাকরী না থাকলে বাড়িতে গিয়ে তল্পিতল্পা গুটিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই গাইতে গাইতে সংসার ছাড়তে হবে।’’

সাত পাঁচ ভাবছি আর টিভির দিকে তাকিয়ে রয়েছি। ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচ দেখব। দুই দল ব্রিটিশ ভূমে নামল। সেই ব্রিটিশ যাদের আশীর্বাদেই এই বিচ্ছেদ। দুই দেশের দুই জাতীয় সঙ্গীত। ক্রিকেট মাঠে একে অপরের বিরুদ্ধে। সারিবদ্ধ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। বেজে উঠল, ‘‘জনগনমন অধি নায়ক জয় হে।’’ শেষ হতে না হতে ‘‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি।’’ গায়ে কাটা দিয়ে উঠল। টেনিদার মতো, ডিলাগ্র্যান্ডি বলে লাফিয়ে উঠলাম। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন কবিগুরু। দুই রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীতের একই রচয়িতা।

জনগন যেভাবে নাড়া দেয় ঠিক সেভাবেই শিহরণ জাগায় আমার সোনার বাংলা। কাটাতারের বেড়া উধাও হয়ে গিয়েছে তাঁর অদৃশ্য উপস্থিতিতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মাথার উপর দিব্বি জীবন্ত। এটাই নিয়ে গেলাম। স্যার বললেন, ‘‘এটাই চেয়েছিলাম। তা ক্যাপশন কী দেবে?’’ বললাম, ‘‘… আমাদের শক্তি মেরে তোরাও ও বাঁচবি নেরে।’’ স্যার একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, ‘‘তোমাকে কিন্তু ফেকু, মাকু এই সব শব্দগুলো শুনতে হবে। সহ্য করতে পারবে তো?’’ একটু সাহসের সঙ্গে বললাম, ‘‘তোমরা যা বল তাই বল আমার লাগে না মনে।’’

‘‘মানুষ হয়ে গেলে গোত্র গুপ্ত।’’ খুবই ধীর ললয়ে কথাটা বললেন স্যার। কিন্তু রাশভারী লোকটার চোখের কোনটা চিক চিক করছে কেন? ভাবতে ভাবতে চলে এলাম নিজের ঘরে।