স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আপনি এটা বলে কী প্রমাণ করতে চাইলেন?

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়

স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় একটি ফেসবুক পোস্ট করেছেন। তার প্রেক্ষিতে লিখলেন মেঘ চক্রবর্তী


স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আপনি এটা কী বললেন? স্বজন-পোষণের বিরুদ্ধে কথা আপনি বলতেই পারেন। কিন্তু, তা বলে সত্যিটাকে নস্যাৎ করে আপনি সবাইকে মহান বানিয়ে দেওয়ার যে চেষ্টা করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা মশাই ধোপে টেকার মতো নয়।

আপনি শ্রীলেখা মিত্রকে অপছন্দ করতেই পারেন। শ্রীলেখা ভুল বললেন, কি ঠিক বললেন, সেটা তাঁরা বলবেন যাঁদের বিরুদ্ধে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। আপনিও বলতে পারেন। শুনে এসেছি টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি নাকি একটা পরিবারের মতো। সেখানেও যে এই সব বনিবনা স্বজন-পোষ‌ণ থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কেউ বিরিয়ানি পাবে, কারও পাতে সেদ্ধভাতও জুটবে না, এমনটাও হবে। তা বলে এমন যুক্তি? হাসালেন বটে।

শ্রীলেখা মিত্র আঙুল তুলেছেন টলিউড ইন্ডাস্ট্রির মাই-বাপের দিকে। তিনি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বাংলা সিনেমাটাকে এক সময় টেনে তুলে এনেছিলেন তলিয়ে যাওয়ার হাত থেকে। সে কারণে তিনি এই ইন্ডাস্ট্রির ‘ভগবান’। বাংলা সিনেমার জগতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় শেষ কথা হবেন এটাই স্বাভাবিক।

শ্রীলেখা জানিয়েছেন, একটা সময় প্রসেনজিৎ এবং ঋতুপর্ণার ‘প্রেম’ ছিল। ছিল ‘প্রেম’ তাতেই বা কী হয়েছে। থাকতেই পারে। আপনার যদি সংস্থার মাই-বাপের সঙ্গে ‘প্রেম’ থাকে তা হলে আপনি এলিট ক্লাসে স্থান পাবেন এবং আপনার সব শখ-আহ্লাদ পূরণ হবে সেটাও স্বাভাবিক।


বিনোদন জগতের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্ক

শ্রীলেখা অর্জুন চক্রবর্তীর দিকেও আঙুল তুলেছেন। যদিও এক টেলিভিশন চ্যানেলে দেখলাম, অর্জুন পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করে গেলেন। এটাই স্বাভাবিক, আপনার কাছে প্রমাণ নেই যে শ্রীলেখা।

শ্রীলেখা অনেক দিন পরে কেন মুখ খুললেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। উনি হয়তো ভেবেছিলেন, স্বজন-পোষণের বাইরে থেকে কাউকে না চটিয়ে যদি ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে থাকা যায়। তখন মুখ খুলে ফেললে হয়তো শ্রীলেখাও হারিয়ে যেতেন।

কিন্তু স্বস্তিকা আপনি যতই পুরুষ আর নারীকে এক করে নিজের চোখে কালো কাপড় বেঁধে ভাবেন সবাই দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন তা হলে আপনি ভুল ভাবছেন। নারীবাদীরা যতই নারী-পুরুষ এক বলে দাবি করুক না কেন, আজও আমাদের সমাজে মেয়েরাই ধর্ষিতা হন, কোনও পুরুষ হন না। আজও চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে মেয়েদের, পুরুষদের নয়।

আমরা আধা মর্ডান হয়ে নারী-পুরুষকে যতই শক্তির মালিক করার চেষ্টা করি না কেন, আজও ভিড় বাসে পুরুষদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন মহিলারা। তাই কোনও এক ‘পরিচালকের সঙ্গে সৌমিক হালদার ১১টা, অনুপম রায় ৯টা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ৭টা, যীশু সেনগুপ্ত ৭টা, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ৬টা এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ৬টা কাজ করেছেন’— তা হলে এক জন মহিলার জন্যও তাই হবে তেমনটা নয় কিন্তু।

কী বলেছিলেন শ্রীলেখা?

আজ পর্যন্ত কখনও শুনেছেন, কোনও ছেলেকে কোনও পরিচালক বলেছেন, তাঁকে সঙ্গে শুতে হবে? কেনই বা বলবেন। আর তাঁরা যদি উভকামী হন তা হলে আপনি থোড়াই জানতে পারবেন স্বস্তিকা। উভকামী হওয়ার কথাও যে কারও কারও নামে বাতাসে ঘোরে না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু প্রমাণ নেই তার কোনও। কে বলতে পারে আপনি যেটা বলছেন সেটাও ঠিক।

শুধু কি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি? এই ঘটনা তো সর্বত্র। কারণ যাঁরা এই অ্যাপ্রোচ করছেন তাঁরা খুব ভাল করে জানেন যাঁকে করছেন সে ‘না’ করলে পরের জন তৈরি রয়েছেন ‘হ্যাঁ’ করার জন্য। যে কোনও জায়গায় এই একই ঘটনা ঘটে চলেছে। পুরুষরা বাদ যান অন্য কারণে বা অন্য ভাবে। যা হয়তো বা সুশান্ত সিং রাজপুতের ক্ষেত্রে ঘটেছিল। ওর সাইন করা ১০টির মধ্যে নাকি সাতটি ছবিই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল বলিউড ইন্ডাস্ট্রির মাই-বাপদের জন্য। যেমনটা সদ্য জানিয়েছেন, ‘ইয়ে জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র অভিনেতা অভয় দেওল।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

এই সিনেমাটা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা চরিত্রগত দিক থেকে কি আলাদা করতে পারবেন অভয় দেওল, ফারহান আখতার ও ঋত্বিক রোশনকে? এ ক্ষেত্রে পরিচালক কিন্তু তিন জনকে সমান ভাবে ব্যবহার করেছেন। যে কোনও এক জনকে ছাড়া এই সিনেমা হত না বলেই মনে হয়। কিন্তু যখন ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডের সময় এল, তখন দেখা গেল সেরা হিরোর মনোনয়নে এই ছবির জন্য নাম যাচ্ছে ঋত্বিকের এবং সহ-অভিনেতা হিসেবে মনোনীত হচ্ছেন অভয় ও ফারহান। স্বজন-পোষণটা কোথায় হল বুঝতে পারলেন তো?

কী বললেন স্বস্তিকা?

এ রকম নানা কারণের জন্য হয়তো সিনেমা জগতে ছেলেদের স্ট্রাগল করতে হয়, কিন্তু মেয়েদের সব থেকে বড় স্ট্রাগলটা করতে হয় তিনি মেয়ে শরীরের অধিকারী বলে। বাকিগুলো তার অনেক পরে আসে। এর মধ্যেও কি ভাল কেউ নেই? নিশ্চই আছে‌ন। শ্রীলেখা যে ক’টা কাজ করেছেন, হয়তো তাঁকে নায়িকার চরিত্রে দেখা যায়নি কিন্তু যা পেয়েছেন সেখানে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন তিনি, তাই বাংলা সিনেমার জগতে তিনিও আজ একটা নাম। প্রসেনজিতের নায়িকা না হয়েও…