শর্ট ফিল্ম শুরু: সলতে পাকানোর গল্পটা বললেন পরিচালক নিজেই

শর্ট ফিল্ম শুরুশুরুর পরিচালক শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শর্ট ফিল্ম শুরু একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প, যা ভালবাসা দিয়েই বুনেছেন পরিচালক, লেখক চিত্রনাট্যকর স্বয়ং। সেই অভিজ্ঞতার কথাই জাস্ট দুনিয়ার সামনে তুলে ধরলেন তিনিই শুভঙ্কর চক্রবর্তী


‘নাই বা ছুঁলাম তোমায়। দেখতে পেলেই অনেকখানি।’— এটা ভেবে লেখা ‘শুরু’ করি। আসলে লকডাউনে প্রেমের মানে তো ‘টাচ মি নট’। তাই, যা হচ্ছে ভার্চুয়াল। প্রেমিকা টুক করে ডালগোনা কফি বানিয়ে, ছবি তুলে বয়ফ্রেন্ডকে পাঠিয়ে দিল। আবার বয়ফ্রেন্ড কোনও এক মিম পোস্টে গার্লফ্রেন্ডকে ট্যাগ করে দিল। মানে যাকে বলে ‘স্মার্ট’ প্রেম। ঘ্যানঘ্যানানি, প্যানপ্যানানি নেই। সে রকম একটা প্রেমের গল্প ‘শুরু’। চরিত্রগুলো আবার নাইনটিজ বর্ন। তাই আমায় ভাবতে হয়েছে, সংলাপে এমন শব্দ থাকবে যা, রিলেটেবেল হবে। অতএব ‘নেটফ্লিক্স’ও আছে ‘মার্ডার ২’-ও আছে।

এক স্বপ্ন দেখানোর গল্প ‘শুরু’। ছেলেটি সিরিয়াস টাইপের। আর মেয়েটি নয়। ছেলেটি দেখাচ্ছে, অ্যাকোয়ারিয়াম। মেয়েটি বলছে, মাছ খাব। ছেলেটি বলছে, নীল দেওয়াল তো মেয়েটি বলছে লাল। অদ্ভূত দুই চরিত্র। কিন্তু, তাদের স্বপ্ন এক। মেয়েটি বলছে, দেওয়ালের রং পেস্তা করতে কারণ, সে জানে হালকা রং আলোর ব্রাইটনেস আরও বাড়িয়ে দেয়। অন্য দিকে ছেলেটি বলে, মেয়েটিকে নিয়ে লাইট-ডেকরের জিনিসপত্র কিনবে।

কোথাও তাদের মধ্যে মিল আছে। কিন্তু, অমিলও আছে। তাতে যে কারও খুব বেশি অসুবিধে হচ্ছে তা-ও নয়।
ওদের মিল— স্বপ্ন দেখে দু’জনেই। অমিল— কায়দা আলাদা।

ছবি করব বলে ‘শুরু’ গল্প লিখিনি। তবে গল্প লিখে ছবি করব ভেবেছি।

আমাদের গোটা দলে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা প্রত্যেকে প্রফেশনাল। মিউজিক থেকে কালার কারেকশন। শুট কিংবা এডিটিং থেকে মোশন গ্রাফিক্স। সব হয়েছে নিয়ম মতে। শুধু পরিচালক হিসেবে আমিই ছিলাম একেবারে নতুন। তার উপর পুরো কাজটাই হয়েছে হোম সেট আপে। দরজা-জানলা বন্ধ করে হয়েছে সাউন্ডের কাজ। সাউন্ডের উপর আমরা অনেকখানি জোর দিয়েছিলাম। এবং এ ব্যাপারে অনেকটা খাটতে হয়েছে শুভদীপ মাইতিকে। কারণ? কারণ হিসেবে শুভদীপ আমায় যা পাঠিয়েছিল, সেটাই এখানে হুবহু তুলে ধরছি—

‘কী ভাবে সাউন্ড হয়েছে ‘শুরু’-র সেটা বলাটা বেশ জরুরি। জরুরি কারণ, যে কোনও ছবির শেষে যখন নাম দেখানো হয়, সেখানে আমরা বাকি সব ডিপার্টমেন্টের মতো অডিও ডিপার্টমেন্টের বেশ একটা বড় টিমের নাম দেখি। সিনেমায় কোনওটাই একা একা করে ফেলা যায় না। সিনেমা মানেই একটা টিম ওয়ার্ক। বাঙালি দর্শক খুব বেশি নাম পড়তে আগ্রহী নয়, তাই সিনেমা হলগুলোয় ওই সময়ে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম আমাকে কিছুটা হলেও বিনোদন দিয়েছে, তাঁদের নাম না পড়া শুধু অন্যায় নয়, অবিচার ও অপরাধ বলে মনে হয়। আমাদের ছবি ‘শুরু’-র শেষে যে ভাবে নাম দেখানো হয়েছে সেটার বেশ প্রশংসা পেয়েছে ইতিমধ্যে। তবে ওই সাবলীল কথোপকথনের মাঝে টেকনিক্যাল বিষয় টেনে আনলে বোধ হয় সেই ব্যাপারটা আর থাকতও না।

তাই সেটা আর হয়নি।

আমাদের এই ছোট ছবিতে বেশিরভাগ কাজ সবাইকে একা একাই সামলাতে হয়েছে। তা হলে আচমকা কেন সাউন্ড নিয়েই কথা বলছি? বলছি কারণ, সিনেমায় শব্দের ব্যবহারের ক্ষেত্রে দু’রকম ভাবে শব্দগ্রহণ করা যেতে পারে। এক, সিঙ্ক সাউন্ড বা শুটিং চলাকালীন শব্দগ্রহণ, যেটার সুযোগ আমাদের কাছে ছিল না। আর দুই, প্রচলিত কথায় ডাবিং বা পোস্ট প্রোডাকশন সাউন্ড, ফলি, রি-রেকর্ডিং। আমরা এই দ্বিতীয় পথটাকেই বেছে নিয়েছি। কিন্তু সমস্ত স্টুডিও তো বন্ধ, সেটাও কি সম্ভব ছিল আদৌ? রেকর্ড কী ভাবে হবে? কী ভাবে হবে ফলি? ভাল ভাবে ডায়লগ রেকর্ড না হলে কোয়ালিটি খারাপ হবে যে। চুলোয় যাক কোয়ালিটি, এটাই হবে লকডাউন ফ্লিমস এর ল্যাঙ্গোয়েজ। আমরা মোবাইলেই রেকর্ড করলাম ডায়ালগ। অর্থাৎ ডাবিং হল মোবাইলে। ফলি হয়েছে অন্য ভাবে। আমরা এই কাজটা করেছি বন্ধুবান্ধবরা মিলে। তাদের কারও বাড়িতেই স্টুডিও সেটআপ নেই। তার পরেও আমাদের ছবির এডিট হয়েছে। সাউন্ড হয়েছে। ছবির শেষে গান ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হয়েছে। কালার কারেকশন হয়েছে। গ্রাফিক্স হয়েছে। সব শেষে ছবিটা আপনাদের কাছে গিয়ে পৌঁছেছে। প্রচুর মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। সমালোচনাও শুনছি। ভাল লাগছে এই লকডাউনে ঘরে বসে পরিকাঠামোগত দুর্বলতা থাকা সত্বেও আমরা মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি।”

(বিনোদন জগতের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

শুভদীপ মাঝরাতে গোটাটা লিখে আমায় বলে, এটা কিন্তু জানিও দর্শককে, গোটাটা জানা দরকার। জানিয়ে দিলাম শুভদীপ। ঠিক এ ভাবেই গোটা দলের থেকে যে টুকরো টুকরো সাহায্য পেয়েছি, তা অনস্বীকার্য! প্রত্যেকে আমাকে নিয়মিত ভাবে শিখিয়েছেন। রুমেলা চক্রবর্তী, উৎসব দাঁ, ইশিতা সোম, দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, শুভদীপ, অরিত্র দত্ত বণিক, অভিব্রত সরকার, একতা ভট্টাচার্য— সবাই কিছু না কিছু আমাকে শিখিয়েছে। এবং আগামী দিনেও এই শেখাটা আমার থেকে যাবে।

শুরু ছবির একটি মুহূর্তে রুমেলা চক্রবর্তী

অনেকে মেসেজে জানাচ্ছেন, ‘শুরু’-র তিনটে সিরিজ হোক। আমি বলছি, আচ্ছা। অনেকে লিখছেন, থ্রিলার। অনেকে বলছেন, সিরিয়াস ছবি। আমি তা-ও বলছি, আচ্ছা। কিন্তু আপাতত আমি ছবি করব বলে ভাবছি না। যা ভেবেছি গল্প। কিছু ঘটনা যা আমাকে ভাবিয়েছে, এবং তা নিয়ে ভেবে চলেছি, সে রকম এক গল্প। জানি না আদৌ তা ছবি হবে কি না। কিন্তু খুব সত্যিকারের ঘটনা ছবিতে দেখতে নিজেই ভয় পাই। দেখা যাক-এর উপর ছেড়ে দিচ্ছি।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

‘শুরু’ ভাল লাগছে। গতকাল ভিউয়ার্স পেরল ২৭ হাজার। আমি অবাক হচ্ছি। এবং অবাক হওয়াটা কাটছে না যখন লোকজন ফোন করে বার বার কারণটা মনে করিয়ে দিচ্ছে। ‘শুরু’ একটা ছবি হয়ে থেকে যায়নি। একটি উদ্যোগ হয়েছে। লোকজন ফোন করে বলছে, ‘‘আমি শেয়ার করেছি ছবিটা আমার স্কুলের গ্রুপে। নিশ্চয়ই কিছু আসবে,’’— কিছু মানে টাকাকড়ি। সর্বহারা মানুষজনের জন্য কিছু অর্থসাহায্য। আমপানদুর্গত কিংবা আমার প্রিয় বইপাড়ায় পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় আমাদের দর্শক। এ কঠিন সময় তো পেরতেই হবে আমাদের। তাই সবাই উঠেপড়ে লেগেছে। শুধু আমআদমিই নয়, ‘শুরু’ পাশে পেয়েছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, পার্নো মিত্র, সোমক ঘোষ, অগ্নিজিৎ সেন, রাজর্ষি দে, সুমন মুখোপাধ্যায়, দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়, সৌরভ পালোধি, অনিন্দ্য চক্রবর্তী, কিরণ দত্তের মতো মানুষকে। যাঁরা শেয়ার করেছেন এ ছবি বিভিন্ন সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে। ধন্যবাদ ছাড়া আর বোধহয় কিচ্ছু নেই আমার দেওয়ার মতো।
দর্শকদের উদ্দেশে এটাই লিখতে চাই। আমাদের ‘শুরু’টা দারুণ করে দিলেন কিন্তু…

পুনশ্চ: একটা শেষ অনুরোধ আবারও সবাইকে করব। ছবি শুরুর প্রথম দিকে আমপান বিধ্বস্ত এলাকার এবং বইপাড়ার মানুষকে সাহায্য করার জন্য কিছু আর্থিক অনুদানের কথা বলা আছে। ছবিটা আপনাদের কিছুটা হলেও আনন্দ দিয়ে থাকলে এই অনুদানের বিষয়টা একটু দেখবেন। আর অবশ্যই ছবিটা শেয়ার করবেন যাতে আরও অনেকের কাছে আমরা পৌঁছে যেতে পারি এই একই আবেদন নিয়ে।


(বিনোদন জগতের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)