রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি—ওয়েব সিরিজ কেমন হল

রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি উপন্যাসটি লিখেছেন বাংলাদেশের সাহিত্যিক মহম্মদ নাজিম উদ্দিন। যা নিয়ে আগেও তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ তবে ইংরেজিতে, ‘বেটার বি শেফ দেন বি সরি’। তবে আমার বিষয় পরিচালক সৃজিত মুখোপ্যাধ্যায়ের নতুন বাংলা সিরিজ রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি বা রেক্কা। যার পড়তে পড়তে থাকার কথা ছিল চমক। তারকা ছড়াছড়ি। মূল চরিত্র মুসকান জুভেরির চরিত্রে বাংলাদেশের অভিনেত্রী আজমেরি হক বাধন। এ ছাড়া বিভিন্ন ভূমিকায় নীরুপম চন্দের ভূমিকায় রাহুল বোস, আতর আলির ভূমিকায় অনির্বাণ ভট্টাচার্য, খরজা খাশনবিশের ভূমিকায় অঞ্জন দত্তরা যাঁর যাঁর জায়গায় সেরাটাই দিয়েছেন। কিন্তু তবুও কোথাও একটা খামতি থেকে গিয়েছে পুরো সিনেমাটা।

এবার আসি সিরিজের গল্পে। রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি একটি রেস্টুরেন্টের নাম। সেখানের খাবারের এক অদ্ভুত টেস্ট সবাই একবার খেলেই মুগ্ধ হয়ে যায়। এরকমই একদিন সেখানে এসে হাজির হন রাহুল বোস। প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর পরিচয় দেন সাংবাদিক বলে। শুরু হয় তাঁর খোঁজ। লক্ষ্য রেস্টুরেন্টের মালকি মুসকান। তাঁর হাতের ছোঁয়াতেই এখানকার খাবার বাকি সব জায়গা থেকে আলাদা হয়ে ওঠে। আর সেখানে খেতে এসেই নিখোঁজ হয়ে যান একে একে ৫ জন।

রাহুল বোসের আসল পরিচয় পড়ে সামনে আসে তদন্তকারী অফিসার হিসেবে। তাঁকে সাহায্য করতে শুরু করেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য মানে আতর আলি। এদিকে মুসকানে রূপে, গুনে মুগ্ধ এলাকার নেতা থেকে পুলিশ অফিসার সকলেই। খুলতে থাকে একটু একটু করে মুসকানের রহস্য। মানুষ থেকে মানুষখেঁকো হয়ে ওঠার নেপথ্যের কাহিনী। সঙ্গে ৭২ বছরের নারী হয়েও তিনি নিজেকে কীভাবে ৩৫-এর করে রাখলেন সেটাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুসকানকে ধরতে পারে না পুলিশ। সবার চোখে ধুয়ো দিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই পালিয়ে যান তিনি। শেষে রেখে যান, তদন্তকারী অফিসারের জন্য একটি বার্তা।

৯ এপিসোডের এই সিরিজের সব থেকে মূল্যবান সম্পদ তার সিনোমাটোগ্রাফি আর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ব্যবহার। মূল চরিত্রকে যতক্ষণ বেশি সংলাপ দেওয়া হয়নি ততক্ষণ চলনে-বলনে, লুকে, ব্যবহারে অনবদ্য একটা হাই স্ট্যাটাস নারী চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন মুসকান জুবেরি। একটা দীর্ঘ সময় তাঁকে স্ক্রিনে পুরোপুরি সামনে থেকে দেখা যায়নি। সারাক্ষণ আলো-আধারিতে বা দূর থেকে ধরা হয়েছে। একটা সময়ের পর অতিরিক্ত কঠিন কঠিন সংলাপ, দীর্ঘ লাইন সব আকর্ষণের জলাঞ্জলী ঘটায়।

এবার আসি যেখান থেকে শুরু হচ্ছে এই সিরিজ। একটা বিমান দুর্ঘটনা ও তার বেঁচে যাওয়া চরিত্ররা। পরবর্তীতে মুসকান জুবেরির মুখে যখন সেই ঘটনার বর্ণনা করা হচ্ছে তখন সিন এতটাই দীর্ঘায়িত হয়েছে যে থ্রিলারে টানটান বিষয় কেটে গিয়ে মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করবে। এক কথায় রহস্য বাক্স থেকে অনেক আগেই বেরিয়ে এসেছিল। যে জমিদার বাড়ি নিয়ে এই রহস্যের মোরক তৈরি করা হয়েছিল তার একটা ইতিহাস রয়েছে। আর সেখানে রবীন্দ্রনাথের যোগ বলতে জমিদারের নিমন্ত্রণ রাখেননি রবী ঠাকুর। নামের সঙ্গে একমাত্র যোগ এটাই। তা ছোট্ট করে দেখানো হয়েছে বৈকি। তবে মনে রাখার মতো নয়।

কাহিনী ও চরিত্রগুলো একাত্ম হয়ে উঠতে উঠতেও ওঠেনি। তবে ভাল প্রচেষ্টা সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের। একটান‌ে দেখে নেওয়া যেতে পারে পুরো সিরিজটা। শেষ হওয়ার পর মাথায় অনেক প্রশ্ন কিলবিল করে আসবে ঠিকই তবে একবার দেখা যেতেই পারে। কিন্তু এখান থেকে থ্রিলার, টানটান উত্তেজনার মতো কিছু আশা না করে দেখতে বসতে হবে।

প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)