মার্ডার ইন দ্য হিলস জমল না, থ্রিলারের নামে চরিত্রগুলোর বিক্ষিপ্ত চলাচলই সার

মার্ডার ইন দ্য হিলস

মার্ডার ইন দ্য হিলস নিয়ে একটা উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছিল। এক তো থ্রিলার, দ্বিতীয়ত প্রেক্ষাপট সেই চির চেনা দার্জিলিংয়ের পাহাড় আর সবার উপরে অনেকদিন পর অঞ্জন দত্ত। কিন্তু পুরোটাই হতাশাজনক। লিখলেন সুচরিতা সেন চৌধুরী


দার্জিলিংয়ের পাহাড়ে অঞ্জন দত্তর পরিচালনায় ছবি মানেই অন্যমাত্রা পাবে ধরে নেওয়াই যায়। অঞ্জন দত্ত আর দার্জিলিং অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এবার তেমনটা ঘটল না। বরং ম্যাড়ম্যাড়ে গল্প আর চিত্রনাট্যের প্রভাবে না খুঁজে পাওয়া গেল সেই চিরচেনা পরিচালক অঞ্জন দত্তকে না অভিনেতা অঞ্জনকে। বরং একগুচ্ছ চরিত্রের মাঝে থ্রিলারের ফ্লেভারটাই হারিয়ে গেল। বাংলা সিরিয়ালের মতো শুধু সংলাপময় ৮ এপিসোড দাঁড়িয়ে থাকল।

সম্প্রতি হইচই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে অঞ্জন দত্ত পরিচালিত সিরিজ মার্ডার ইন দ্য হিলস। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তালিকাটা নেহাৎই ফেলে দেওয়ার মতো ছিল না। অর্জুন চক্রবর্তী ছিলেন সাংবাদিকের ভূমিকায়। তাঁর মুখ দিয়েই পুরো ঘটনাটি বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁর প্রেমিকার ভূমিকায় অনিন্দিতা বসু। তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের ভূমিকায় সুপ্রভাত। পরিচালকের ভূমিকায় সৌরভ চক্রবর্তী, পুলিশের ভূমিকায় রাজদীপ গুপ্তা। ডাক্তার সন্দীপ্তা সেন। অঞ্জন দত্তের বন্ধুর ভূমিকায় রজত গঙ্গোপাধ্যায়। অঞ্জন দত্তর স্ত্রীর ভূমিকায় শাশ্বতী গুহ ঠাকুরতা।

গল্প শুরু হয় বিখ্যাত অভিনেতা টনি রয়ের ৬৬তম জন্মদিন দিয়ে। তাঁর জন্মদি‌নের পার্টিতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্থানীয় সব বন্ধুরা। সেখানেই প্রেমিকার সঙ্গে পৌঁছন সাংবাদিক। সেই পার্টিতেই একটি খেলা খেলতে খেলতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় টনি রয়ের। হার্ট অ্যাটাক বলে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলেও সেটা যে খুন ধরে ফেলেন সাংবাদিক। শুরু হয় তাঁর তদন্ত। সেই তদন্ত করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন টনি রয়ের জীবনের অন্ধকার দিক। যেখানে রয়েছে একাধিক খুন। আর তাতে বাধা দিতে শুরু করে এই চরিত্রগুলো। মাঝে একজন প্রোমোটারও ঢুকে পড়েন। তাঁর ভূমিকা স্পষ্ট হল না। দর্শকদের নজর ঘোরানোর জন্যই এই প্রচেষ্টা। তবে তা পুরোপুরি ব্যর্থ।

তিনি সাংবাদিককে অপহরণ করলেন। মারধোর করলেন। এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচালেন তাঁর প্রেমিকার প্রাক্তন প্রেমিক। ইত্যাদি ইত্যাদি। এর পর একের পর এক উঠে আসতে থাকল টনি রয়ের অতীতে কেচ্ছা। কীভাবে তিনি মানুষকে ব্যবহার করতেন এবং তার পর ছুড়ে ফেলে দিতেন। আর এই সবই করতেন টনি রয়ের বাবা। তিনিই দার্জিলিংয়ে এই বাংলো বানিয়েছিলেন। শেষে জানা গেল, এই যে চরিত্রগুলো টনি রয়ের মৃত্যু ঘিরে চারদিকে ঘোরাফেরা করছিল তাঁরা সকলেই সেই সব মানুষগুলোর সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে সম্পর্কিত যাঁদের মৃত্যুর কারণ টনি রয়।

তার মধ্যে রয়েছেন টনি রয়ের স্ত্রীও। একটা সময় তিনিও সাংবাদিকের সন্দেহের তালিকায় ঢুকে পড়েন। এই নিয়েই চলতে থাকে এপিসোডের পর এপিসোড। যা দেখে এক মুহূর্তের জন্যও থ্রিলড হওয়ার কোনও জায়গা নেই। বা শেষ সিনে কোনও চমক, না কোথাও কিছু নেই। চূড়ান্ত দুর্বল চিত্রনাট্যের সঙ্গে দুর্বল সংলাপ মার্ডার ইন দ্য হিলস-কে ক্রমশ বোরিং করে তুলেছে। দার্জিলিংয়ের প্রেক্ষাপট হওয়ায় সিনেমাটোগ্রাফিতেও অনেক কিছু করার ছিল কিন্তু সেখানেও হতাশা ছাড়া আর কিছুই ভাগ্যে জোটেনি দর্শকদের। অঞ্জন দত্তর থেকে আরও অনেকটা আশা ছিল যা এ যাত্রায় পাওয়া গেল না।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)