‘সঞ্জু’ দেখলে সঞ্জয় দত্তের জন্য মন কেমন করে উঠবে

সঞ্জু

মেঘ চক্রবর্তী


সঞ্জু দেখার আগে ভেবেছিলাম আরও একটা বায়োপিক দেখতে যাচ্ছি। যা নিজের অভিনয়ের জোরে একটা পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন রণবীর কাপুর। কিন্তু, যত সিনেমা গড়িয়েছে ততই বদলেছে ধারণা। ডুবে যেতে হয়েছে সঞ্জয় দত্তের ফেলে আসা জীবনে। যা আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। উচ্ছন্নে যাওয়া এক বাবার ছেলে থেকে টাডা… বাবার প্রাসাদ থেকে নোংরা জেলের কুঠুরি… প্রচুর নারী সঙ্গ… সংসার, সন্তান— সবই কেমন যেন ভাবিয়ে তোলে।

শুরুটা কিছুটা মন্থর। টান টান হয়ে ওঠে দ্বিতীয়ার্ধের পর থেকে। যেখানে জীবন্ত হয়ে ওঠে প্রেম থেকে বন্ধুত্ব। বাবা-মায়ের স্নেহ থেকে স্ত্রী-র পাশে থাকা… সেই স্ত্রীর সামনেই জোর গলায় সঞ্জয় দত্ত হাতে গুণে বলতে পারেন তাঁর নারী সঙ্গের সংখ্যা… মুচকি হাসেন স্ত্রী।

অন্য দিকে রয়েছে এক বাবার লড়াই। যা অনেকেই জানেন। জানেন, কী ভাবে ছেলের জন্য শেষ দিন পর্যন্ত লড়ে গিয়েছেন সুনীল দত্ত। সুনীল দত্তের ভূমিকায় পরেশ রাওয়াল অনবদ্য। নার্গিসের ভূমিকায় মনীষা কৈরালাও অসাধারণ। ছেলেকে ঘিরে কী ভাবে এই দম্পতির জীবন যুদ্ধ এগিয়েছে সেটাও দেখার। মাঝ পথেই বিদায় নার্গিসের। পরের লড়াইটা একা সুনীল দত্তের।

এমন সোনার পাহাড়ই তো সবাই চায়

সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে একটা চরিত্র। সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়েছে সেই চরিত্র প্রতি মুহূর্তে। কখনও দেশে, কখনও দেশের বাইরে। বিদেশের মাটিতে হাসপাতালে মায়ের ঘরের বাইরে নার্গিসের এই ‘ফ্যান’কে ধরে ফেলা সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে কী ভাবে যেন বন্ধুত্ব হয়ে গেল কমলির (কানহাইয়ালাল কাপাসি)। তার পর দু’জনে হয়ে উঠলেন বুজম ফ্রেন্ড।  তার পর বিচ্ছেদ… আবার মিলন। কমলির ভূমিকায় অনবদ্য বিকি কৌশল। চোখে জল আসে বন্ধুত্বের অধ্যায়ে। ছোট্ট চরিত্রে সোনম কাপুরকে ধরে নেওয়াই যায় টিনা মুনিমের ভূমিকায়। যদিও তা পরিষ্কার করে বলা হয়নি ছবিতে।

সঞ্জুর স্ত্রী মান্যতার ভূমিকায় দিয়া মির্জা আবার অনেক দিন পর সিনেমায়। অনুষ্কা শর্মা সেই লেখিকা, যাঁর কলমের অলঙ্করণে তৈরি হয়েছে সঞ্জু বায়োগ্রাফি। উইনি ডায়াসের ভূমিকায় অনুষ্কাও প্রাণবন্ত। আর যে মানুষটা সঞ্জয় দত্তকে বাস্তব জীবনে ড্রাগের নেশায় ডুবিয়ে দিয়েছিলেন, সেই জুবিন মিস্ত্রীর ভূমিকায় চেনা গেল জিম সারভকে। জানা গেল, কী ভাবে একটু একটু করে সঞ্জয় দত্তকে বিপথে চালিত করেছিলে‌ন ওই ব্যক্তি।

এর পর মুম্বই বিস্ফোরণে জড়িয়ে গেল নাম। শুরু হল অন্য লড়াই। ‘এ কে ৪৭’ রাখার অন্যায়ে নাম জড়িয়ে গেল বিস্ফোরণের সঙ্গে। গ্রেফতার, জেল, ভয়ঙ্কর জীবন কাটিয়ে বাস্তব জীবনের সঞ্জয় দত্ত বার বার ফিরেছেন বলিউডে। তাঁর লড়াই থামেনি। থামেনি সমস্যাও। তিনি আজও রাজ করেন তাঁর ফ্যানের মনে। আজও তাই তাঁর ছবি হাউসফুল হয়। আর তাঁর বায়োপিক প্রমাণ করে দিয়েছে, সঞ্জয় দত্ত আসলে রাজ করে মানুষের মনে।

পরিচালক রাজকুমার হিরানি, প্রযোজক বিধুবিনোদ চোপড়া এই পদক্ষেপটি না করলে হয়তো অনেক কিছুই না জানা থেকে যেত। সঞ্জয় দত্তের চরিত্রে অনবদ্য রণবীর কাপুর। হাঁটা, কথা বলা থেকে শুরু করে মেকআপ— যেন এক ঝলকে স্বয়ং সঞ্জয় দত্ত। এ এক খলনায়কের কাহিনি।

শুধু একটা বড় অংশ হয়তো ইচ্ছে করেই মিস করে গিয়েছেন পরিচালক। যখন মুম্বই বিস্ফোরণ বা জেল, অনিন্ত্রিত জীবন কাটাচ্ছেন সঞ্জয় দত্ত তখন তাঁর জীবনে মান্যতা ছিলেন না। যে ভূমিকায় দেখা গিয়েছে দিয়াকে।

সঞ্জয় দত্তের প্রথম স্ত্রী রিচা শর্মা ও দ্বিতীয় স্ত্রী রেহা পিল্লাইকেও এই ছবিতে কোথাও রাখা উচিত ছিল। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সঞ্জয়ের জীবনে ছিলেন রিচা। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ ছিলেন রেহা।  রিচা ও সঞ্জয়ের কন্যা ত্রিশলাও রয়েছেন। যে বিদেশেই থাকে। ক্যান্সারে ১৯৯৬-এ মৃত্যু হয় রিচার নিউ ইয়র্কে তাঁর বাবা-মায়ের কাছে। এর পর রেহা পিল্লাই। তার পর সঞ্জয়ের জীবনে আসেন মান্যতা।

এই অংশটি সঞ্জয় দত্তের বায়োপিকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যা সম্পূর্ণ হতে দিল না ‘সঞ্জু’কে।