প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, জীবনমঞ্চে অভিনয় শেষ আন্তিগোনের

প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্তঘরেবাইরে-র বিমলা চরিত্রে স্বাতীলেখা

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: প্রয়াত অভিনেত্রী স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। বুধবার ৭১ বছর বয়সে  শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি। রেখে গেলেন স্বামী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও কন্য সোহিনী সেনগুপ্তকে। দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। সেখানেই এ দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। জীবনের একটা দীর্ঘ সময় নাটকের দল ‘নান্দীকার’-এ কাজ করেছেন। ১৯৭৭ থেকে আমৃত্যু ওই দলেরই কার্যত মেরুদণ্ড ছিলেন। তাঁর স্বামী রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কন্যা সোহিনী। তাঁরাও নান্দীকারের সঙ্গে জুড়ে।

নান্দীকারে স্বাতীলেখা অভিনীত একের পর এক নাটক দর্শককে মুগ্ধ করেছে। তাঁর অভিনীত আন্তিগোনে চরিত্র এখনও থিয়েটারে বহুল চর্চিত। একই সঙ্গে ইপিজেনিয়া, গ্রুসা, সুরধনী এবং অবশ্যই অজ্ঞাতবাসের অনুরাধা ব্যানার্জি— স্বাতীলেখা অভিনীত একাধিক চরিত্র বাংলা নাটককে সমৃদ্ধ করেছে। নান্দীকারের ‘ফুটবল’ হিন্দিতে পরিচালনা করেছিলেন স্বাতীলেখা। এ ছাড়া একাধিক একাঙ্ক নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পাখি, দুলিয়া, তোমার নাম ইত্যাদি।

এই নাটকগুলো কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনীত হয়েছে। একই রকম ভাবে দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে আমেরিকা, সুইডেন, কাতার, ওমান-সহ বিদেশের মঞ্চেও। তবে বাংলা নাটকে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘মাধবী’র জন্য। নান্দীকারে ওই নাটক স্বাতীলেখার পরিচালনাতেই হয়েছিল।

২০১০ সালের নাট্য আকাদেমী পুরস্কার পেয়েছিল। পরের বছরই তিনি সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার পান। ‘পারফর্মিং আর্ট’-এ এটাই দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার। শুধু পরিচালনা বা অভিনয় নয়, বাংলা থিযেটার স্বাতীলেখাকে মনে রাখবে নাটকে তাঁর সঙ্গীতের জন্য। নান্দীকারের একাধিক নাটকের সঙ্গীত তাঁর করা। নিজে ভাল পিয়ানো বাজাতে পারতেন। বাজাতেন বেহালাও। অভিনয় করতে করতেই তিনি এই সব বাদ্যযন্ত্র তাঁর নাটকে বাজাতেন। সে সব নাটক এখনও নাট্যপ্রেমীদের মনে গেঁথে আছে।

তবে শুধু থিয়েটারেই নিজেকে আটকে রাখেননি স্বাতীলেখা। রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরেবাইরে’ উপন্যাসকে যখন সেলুলয়েডে ধরতে চাইলেন সত্যজিৎ রায়, তখন তিনি বিমলার চরিত্রে নিলেন স্বাতীলেখাকে। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সন্দীপ ও নিখিলেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করলেন বিমলা চরিত্রে স্বাতীলেখা। সে ছবি বাংলা সিনেমার এক সম্পদ হয়ে থেকে গিয়েছে আজও।

মঞ্চে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত

সেটা ১৯৮৪ সাল। তার ঠিক ৩১ বছর পর ফের সিনেমায় ফিরে এলেন তিনি। নন্দিতা দাস ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ‘বেলা শেষে’। এ বারও স্বাতীলেখার বিপরীতে সৌমিত্র। জমিয়ে দিয়েছিলেন আরতি চরিত্রে। সেই সাফল্যের পর ‘বেলা শুরু’। পরিচালক একই। কিন্তু সে সিনেমা মুক্তির আগেই চলে গেলেন সৌমিত্র। এ বার বিদায় নিলেন স্বাতীলেখাও।

গত মে ২২ মে ৭১ বছর বয়সে পা দিয়েছিলেন স্বাতীলেখা। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর, লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ থেকে সঙ্গীতে ডিপ্লোমা স্বাতীলেখা নান্দীকারে এসেছিলেন ১৯৭৭ সালে। তার পর থেকে নান্দীকারই হয়ে ওঠে তাঁর ঘরবাড়ি। রুদ্রপ্রসাদের সঙ্গে সংসারও পাতেন। সেই জীবনেই এ বার ছেদ পড়ল।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)