সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত, সব ‘ফাইট’ শেষ হয়ে গেল ‘ক্ষিদ্‌দা’র

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াতসৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৩৫-২০২০)

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হলেন। রবিবার বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করল বেলভিউ ক্নিনিক।

গত ৬ অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে তিনি এই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার পর থেকে সৌমিত্রের শারীরিক পরিস্থিতির নানা টানাপড়েন চলে। একটা সময়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু তার পরেও পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি তিনি। শুক্রবার রাতেই চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থা সৌমিত্রের। শনিবার বিকেলে সকালেই সেই বার্তা বদলে গেল, ‘অলৌকিক’-এর ভরসা রাখছেন চিকিৎসকেরা। আর রাতে সৌমিত্রের চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, কোনও সিস্টেমেই সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। এ দিন দুপুরে জানানো হয়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত, বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

বেলা ১টা নাগাদ বেলভিউ-তে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পর সৌমিত্রর মেয়ে পৌলমী বসু বলেন, ‘‘বেলভিউ ক্লিনিক থেকে দুপুর দুটো নাগাদ বেরিয়ে আমরা বাবাকে গলফ গ্রিনের বাড়ি নিয়ে যাব। সেখান থেকে টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে কিছু ক্ষণ থেকে আমরা সাড়ে তিনটে নাগাদ রবীন্দ্রসদনে পৌঁছব। সেখানে দু’ঘণ্টা বাবাকে রাখার পর আমরা পদযাত্রা করে কেওড়াতলা শ্মশানে যাব।’’ এর পর কাঁদতে কাঁদতে পৌলমী বলেন, ‘‘বাবাকে এত যত্ন করে, ভালবেসে দেখাশোনা করার জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। বেলভিও ক্লিনিকের কাছেও কৃতজ্ঞ আমরা। চিকিৎসক অরিন্দম করের মতো ডাক্তার আরও প্রয়োজন।’’

soumitraগল্ফ গ্রিনের বাড়ির সামনে সৌমিত্রর মরদেহ…

এর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র জগতের এক স্মরণীয়, বরণীয় প্রতিভাবান এক জন মানুষকে হারিয়েছি আমরা। সিনেমা, নাটক, কবিতা, সর্বোপরি গণ আন্দোলন এবং মানবিক আন্দোলনে সৌমিত্রদা সব জায়গায় ছিলেন। আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল সৌমিত্রদার, আমি তখন মেদিনীপুরে। ওঁর গলা শুনে মনে হয়েছিল, উনি একেবারে সুস্থ। কোভিডের কারণে তিনি হারেননি। অন্যান্য সমস্যা ছিল। চিকিৎসকরাও চেষ্টা করেও পারেননি। সৌমিত্রদা পার্থিব ভাবে হয়তো চলে গিয়েছেন, কিন্তু তাঁর প্রাণের স্পন্দন মানুষের প্রতি ভালবাসা যুগ যুগ ধরে তিনি যা দিয়েছে এসেছেন, আমরা তার রিটার্ন দিতে পারব না। আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে… সৌমিত্রদা আপনি যেখানেই থাকুন, ভাল থাকুন, শান্তিতে থাকুন। আবার ফিরে আসুন এই বাংলায়।’’

গত ৬ অক্টোবর সৌমিত্রকে ভর্তি করা হয় বেলভিউ ক্লিনিকে। উপসর্গ থাকায় পরীক্ষা করানো হয়েছিল। তাতেই কোভিড-১৯ পজিটিভ পাওয়া যায়। সেই সময় তিনি কার্যত সুস্থই ছিলেন। কিন্তু তার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইটিইউতে স্থানান্তরিত হয়। এর পর  প্লাজমা থেরাপি শুরু হলে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। চিকিৎসায়ও সাড়া দিচ্ছিলেন। তবে তিনি আইটিইউতেই ছিলেন। কিন্তু মস্তিষ্ক, স্নায়ুতে সংক্রমণের অভিঘাতে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। নানা ভাবে চেতনা ফেরাতে চেষ্টা করেছেন ডাক্তারেরা। প্লাজমা ফেরেসিস বা রক্তরস বদলের চিকিৎসাও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকেই পরিস্থিতি দুরূহ হয়ে ওঠে। সৌমিত্রবাবুর বিভিন্ন অঙ্গের অবস্থাও বিপন্ন হয়ে যায়। প্রবীণ শিল্পীকে নিয়ে গভীর উৎকণ্ঠায় পড়েন চিকিৎসকেরা।

অভিনেতার ক্ষেত্রে সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় তাঁর বয়স। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এর আগে ক্যানসারকে হারিয়ে নতুন জীবন পেয়েছিলেন। গত বছর তিনি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন হাসপাতালে ছিলেন। পরে সুস্থ হয়ে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফেরেন। কিন্তু এ বার আর জিততে পারলেন না।

soumitra

সৌমিত্রের চিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম করের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই বোর্ডে দু’জন সরকারি ডাক্তারকেও রাখা হয় পরবর্তী সময়ে। অরিন্দম বলেন, ‘‘আমরা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছি। কিন্তু, কিছু করা গেল না।’’

লকডাউনের সময় থেকেই টলিউডে শ্যুটিং বন্ধ ছিল। সৌমিত্রও সেই সময় শ্যুটিং বন্ধ রেখেছিলেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। আনলক শুরু হতেই তিনি কাজে যোগ দেন। তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রের কাজ সম্প্রতি শেষ করেছেন। তার আগে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় নির্দেশিত সৌমিত্রের বায়োপিক ‘অভিযান’-এও কাজ করেছিলেন তিনি। সেই বায়োপিকের মুক্তি দেখে যাওয়া হল না সৌমিত্রের। সৌমিত্রর মৃত্যুতে শোকের ছায়া বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে।

 

(বিনোদন জগতের আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন এই লিঙ্ক)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)