আমিরের আমিরি-গরিবি, মিস্টার পারফেকশনিস্টের ৩০ বছর

আমির খান

ডোডো রে


আমিরের আমিরি-গরিবি লেখা থাকবে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে। কারণ তিনি আলাদা, সবার থেকে। কেন তা জানতে আর কারও বাকি নেই। অ্যাওয়ার্ড পান, কিন্তু অ্যাওয়ার্ড নিতে যান না। বছরে একটার বেশি ছবুও করেন না। কিন্তু, তাঁর ছবির অপেক্ষায় থাকেন ইন্টেলেকচুয়াল থেকে আম দর্শক।

তিনি আমির খান। বিগত ৩০ বছরের ফিল্মি কেরিয়ারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ব্যতিক্রমী হিসাবে। বলিউডের মেনস্ট্রিমেই আছেন। কিন্তু, নিজস্ব নিয়মে। আমির খানের ছবি মানে বিনোদনের সঙ্গেই কিছু বার্তা। যা আপনাকে ছবি দেখার পরেও ভাবাবে।

ইদানীং আমির খান এক একটি ছবির জন্য নিজের বডি এবং লুক এতটাই বদলান যে, কোনও ভাবেই তাঁকে ‘টাইপকাস্ট’ বলা যায় না।

‘দিল চাহতা হ্যায়’, ‘রং দে বসন্তী’, ‘তারে জমিন পর’, ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘পিকে’, ‘দঙ্গল’— কোনও ছবির আমির খানকে অন্য ছবির আমির খানের সঙ্গে মেলাতে পারবেন না। আবার ‘গজনি’ এবং ‘ধুম থ্রি’-র বাণিজ্যিক ফর্মুলা ছবিতেও আমিরের উপস্থিতি এবং অভিনয় ব্যতিক্রমী।

কী ভাবে চিত্রনাট্য বাছাই করেন আমির?

তাঁর কথায়, ‘‘সৃজনশীল ব্যক্তি হিসাবে আমি ভাল কাজ করতে চাই। এবং আমি এটাও চাই যে, আমার অভিনয় বেশির ভাগ মানুষের ভাল লাগুক। এই দুটোকে মেলানোর প্রচেষ্টাই ফুটে ওঠে আমার কাজে, যা একসঙ্গে বাণিজ্য সফল আবার সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিতও।’’

দেখুন ‘আহারে মন’ এর ট্রেলার

আমির আরও বলেন, ‘‘আমার ভাবনা এখনও একই রকম। আমি যখন ‘তালাশ’-এর মতো ছবি করি, আমি জানি, তা ব্লক ব্লাস্টার হিট হবে না। কিন্তু, তা-ও আমি করি, কারণ আমি ছবিটায় বিশ্বাস করি।’’

প্রযোজক আমির খানও একই ভাবে ব্যতিক্রমী। তাঁ নামের ব্যানারে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলি বিষয় ভাবনায় স্বতন্ত্র্য এবং কোনও বিশেষ একটি ঘরানায় নয়। ‘লগান’, ‘জানে তু ইয়া জানে না’, ‘ধোবি ঘাট’, ‘দেল্লি বেলি’, ‘পিপলি লাইভ’, ‘দঙ্গল’, ‘সিক্রেট সুপারস্টার’— বিভিন্ন জ্যঁর-এর ছবিগুলি হিন্দি ছবির এক একটি মাইলস্টোন।

‘পদ্মশ্রী’ এবং ‘পদ্মভূষণ’প্রাপ্ত এই শিল্পী কিন্তু বিগত তিন দশক ধরে তিল তিল করে পরিশ্রমের মাধ্যমেই আজ বলিউডে নিজের স্বতন্ত্র্য সাম্রাজ্য বানিয়েছেন।

বলিউডের বক্স-অফিসে ১০০ কোটি ক্লাবের জন্ম হয়েছে আমির অভিনীত ছবি (গজনী)-র মাধ্যমেই।

১৯৭৩-এ ‘ইয়াদোঁ কি বারাত’ ছবিতে শিশু শিল্পী হিসাবে সিনেমার পর্দায় পা রাখেন আমির খান। প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে আমিরের প্রথম ছবি ‘হোলি’ (১৯৮৪) পরীক্ষামূলক। কিন্তু ‘চকোলেট বয়’ ইমেজ নিয়ে পুরোদস্তুর নায়ক হিসাবে আমির খানের আবির্ভাব ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ (১৯৮৮)-এ অথচ সেই ছবির জন্য আমির প্রতি মাসে পেতেন এক হাজার টাকা। ছবিটির শুটিং হয়েছিল ১১ মাসব্যাপী, ফলে আমিরের রোজগার হয় মোট ১১ হাজার টাকা। কিনে উঠতে পারেননি একটা গাড়ি। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করতেন। ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ সুপারহিট হয়ে যাওয়ায় মানুষ তাঁকে চিনে ফেলতে থাকেন। বাধ্য হয়েই পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত ছাড়তে হয় আমিরকে।

তবে ছবি হিট করলেও রাতারাতি সুপারস্টার হননি আমির। বহু ছবি ফ্লপ করেছে। একটা সময়ের পর নিজেকে সংযত করেছেন। চিত্রনাট্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে খুঁতখুঁতে হয়েছেন। সেটা এখন এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বলিউডে তাঁ নতুন নাম ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’। সমসাময়িক সলমন খান এবং শাহরুখ খান যখন বছরে একাধিক ছবি করেন, তখন আমির খান এখন বছরে একটি ছবির জন্য নিজের একশো শতাংশ উজাড় করে দেন। কারণ তিনি বোঝেন দর্শকমহলে যে হিমালয়সম প্রত্যাশার পারদ তিনি তৈরি করেছেন তা বজায় রাখতে গেলে তাঁকে অন্যদের থেকে ‘আলাদা’ হতেই হবে।