ইয়েস ব্যাঙ্কে শুধুই ‘নো’, এটিএমে টাকা মিলছে না, অকেজো নেট ব্যাঙ্কিংও

ইয়েস ব্যাঙ্কে শুধুই ‘নো’,ইয়েস ব্যাঙ্কে শুধুই ‘নো’

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ইয়েস ব্যাঙ্কে শুধুই ‘নো’, এটিএমে টাকা মিলছে না। কাজ করছে না নেট ব্যাঙ্কিং। এমনকি চেক ক্লিয়ারিংও বন্ধ। ফলে ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের অবস্থা রীতি মতো শোচনীয়।

এরই মধ্যে ইয়েস ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে নেমে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত তল্লাশি চালায় ইডি। ইয়েস ব্যাঙ্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, প্রাক্তন সিইও রাণা কপূরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ দিন সকালে তাঁকে বেলার্ড এস্টেটে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দফতরে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। এর পরে রাণার তিন কন্যার দিল্লি ও মুম্বইয়ের বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সূত্রের খবর, রাণার গ্রেফতারি এখন সময়ের অপেক্ষা। তাঁর দেশ ছেড়ে পালানো আটকাতে লুক-আউট সার্কুলারও জারি হয়েছে।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

গ্রাহকদের অভিযোগ, বেশ কয়েক দিন ধরে চেক ক্লিয়ারিং বন্ধ। অনেক শাখাই টোকেন ধরিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টাকা তোলার অঙ্ক ৫০ হাজারে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন এটিএমে দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন। কিন্তু, লাইনে দাঁড়িয়েও বহু এটিএমে টাকাই মিলছে না। কয়েকটা আবার বন্ধ। অনেক ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ডটাই কাজ করছে না। কাজ করছে না নেট ব্যাঙ্কিং। টাকা মেটানো যাচ্ছে না অ্যাপ মারফত।

ইয়েস ব্যাঙ্কের চেক ক্লিয়ারিং বন্ধ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সমস্ত ব্যাঙ্কের কাছে নোটিস পাঠিয়ে তারা নির্দেশ দিয়েছে যে, ব্যাঙ্কটির কোনও চেক যাতে আপাতত ক্লিয়ার করা না হয়। একই সঙ্গে ইয়েস ব্যাঙ্ক থেকে আরটিজিএস বা এনইএফটি করার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ইন্টারনেটেও কোনও টাকা তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য কোনও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে পাঠানোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ দিকে ইয়েস ব্যাঙ্কের নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রশান্ত কুমার এই দিন জানিয়েছেন, ‘‘ইয়েস ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ‘মোরেটোরিয়াম’ বা আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টাকা তোলার অঙ্ক ৫০ হাজার টাকায় বাঁধা হয়েছে। পরিকল্পনা এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ব্যাঙ্কটি মোরেটোরিয়ামের সময়সীমা শেষ হওয়ার অনেক আগেই চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে।’’

শুক্রবার থেকেই ইয়েস ব্যাঙ্কের বেশ কিছু শাখায় টাকা তোলার জন্য গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। অনেকেই আবার লাইন দিয়েও শেষ পর্যন্ত টাকা তুলতে পারেননি। তাঁদের জানানো হয়েছে, ক্যাশে টাকা নেই। ইয়েস ব্যাঙ্কের অনেক এটিএমও এই দিন ছিল অচল। অনেক ক্ষেত্রে টাকাও ছিল না তাতে।

কেন ইয়েস ব্যাঙ্কের এমন হাল হল? বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, যে সব সংস্থার ঋণ শোধ করার রেকর্ড খুব খারাপ, তাদেরই চড়া সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। পরিচালন ব্যবস্থায় বেনিয়ম। অনাদায়ী ঋণ লুকিয়ে রাখা। অনিল অম্বানীর রিলায়্যান্স গোষ্ঠী, এসেল গোষ্ঠী, ডিএইচএফএল, আইএল অ্যান্ড এফএস, ভোডাফোন, কক্স অ্যান্ড কিং, কাফে কফি ডে-র মতো সংস্থাকে দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ শোধ না-হওয়া। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, বিপজ্জনক ক্ষেত্রে ৩১ হাজার কোটি টাকার ঋণ, যার তিন ভাগের এক ভাগ শোধ না-হওয়ার আশঙ্কা। ঋণ শোধ না-হওয়ার ক্ষত ঢাকতে নতুন মূলধন জোগাড় করতে না-পারা। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে দেশ-বিদেশের নতুন লগ্নিকারী নিয়ে আসার মিথ্যে আশ্বাস। ব্যাঙ্ক থেকে লাগাতার আমানতকারীদের টাকা তুলে নেওয়া।

জানা গিয়েছে ইয়েস ব্যাঙ্কের ৪৯ শতাংশ মালিকানা কিনবে স্টেট ব্যাঙ্ক। আনুমানিক ১১,৭৬০ কোটি টাকা ঢালতে হবে। তিন বছর পর্যন্ত স্টেট ব্যাঙ্কের লগ্নি অন্তত ২৬ শতাংশ থাকবে। তৈরি হবে নতুন পরিচালন পর্ষদ। তাতে স্টেট ব্যাঙ্কের দু’জন প্রতিনিধি থাকবেন। অন্তত এক বছর পর্যন্ত পুনর্গঠিত ইয়েস ব্যাঙ্ক কর্মীদের চাকরি ও বেতন সুরক্ষিত থাকবে।


এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন