কাফে কফি ডে: কর্ণধার সিদ্ধার্থের রহস্যমৃত্যুতে কি থমকে যাবে সিসিডি 

কাফে কফি ডেকাফে কফি ডে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানিয়েছে তাদের প্রাক্তন কর্ণধারকে।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: কাফে কফি ডে যদি ভাল নাম হয়, ডাক নামটা তবে নির্ঘাত সিসিডি। আদরের সে ডাক নামই কফিপ্রেমীদের বড্ড প্রিয়। নাম নাকি সুবাস? ছোট তিনটে শব্দ আরও ছোট্ট হয়ে উচ্চারিত হলেই ভেসে আসে কড়া কফির গন্ধ। কাপুচিনো হোক বা আইরিশ, আমেরিকানো হোক বা মোচা, কিংবা ‌লাতেও হতে পারে— কিন্তু সিসিডি মানেই জাস্ট কফি, কফি এবং স্রেফ কফি।

আবার শুধু কফিও নয়! সঙ্গে কারও অপেক্ষা, অফিস মিটিং, কেজো বৈঠক, একাকি কফি পান, যুগলে প্রেমালাম, বন্ধুত্বে আড্ডা, ব্রেকআপে কান্না— সবেতেই জড়িয়ে আদরের ডাক নাম সিসিডি। কারণ, ‘এ লট ক্যান হ্যাপেন ওভার এ কাপ অব কফি’।

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন…

ভারতের সবচেয়ে বড় কফি বারের চেন এই কাফে কফি ডে। তৈরি হয়েছিল ভিজি সিদ্ধার্থ নামে এক উদ্যোগপতির হাতে। বাবার ছিল কফি-বাগান। আর ছেলে তৈরি করেছিলেন কফি বারের চেন, কাফে কফি ডে। মার্কিন মুলুকে স্টারবাকস-এর মতো কফি শপ চেন ছিল। কিন্তু ভারতে, নাহ্, ভিজি সিদ্ধার্থের আগে এমন কোনও কফি বার চেন, কেউই ভাবেননি। তাঁর সিসিডি যখন সাফল্যের এভারেস্টে, ঠিক সেই রকম সময়েই রহস্যমৃত্যু হল সিদ্ধার্থের।

২৯ জুলাই সোমবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে সকলেশপুরের দিকে রওনা হয়েছিলেন ভিজি সিদ্ধার্থ। মাঝপথে গাড়িচালক বাসবরাজ পাতিলকে ম্যাঙ্গালুরুর দিকে যেতে বলেন তিনি। পরে চালক দাবি করেন, ম্যাঙ্গালুরুর কাছে নেত্রাবতী নদীর উপরে একটি সেতুতে গাড়ি থামিয়ে সিদ্ধার্থ তাঁকে ‘একটু হেঁটে আসছি’ বলে নেমে গিয়েছিলেন। ব্যস, তার পর থেকেই নিখোঁজ সিসিডি-র কর্ণধার। বুধবার সকালে সিদ্ধার্থের দেহ মেলে ওই নেত্রবতী নদী থেকে। পরে এ দিন বিকেলে চিকমাগালুরুতে সিদ্ধার্থের বাবার কফি বাগানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।

সিদ্ধার্থ নিখোঁজ হওয়ায় পর থেকেই কাফে কফি ডে-র ভবিষ্যৎ নিয়ে নানাবিধ জল্পনা তৈরি হয়। শেয়ার বাজারে তাদের শেয়ারের দর পড়তে শুরু করে। তবে কি এ বার বন্ধ হয়ে যাবে ভারতের সবচেয়ে বড় কফি বারের চেন? সিদ্ধার্থের স্ত্রী মল্লিকা হেগড়ে ওই সংস্থার পরিচালন পর্ষদের সদস্য। সিদ্ধার্থ-মল্লিকার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বুধবার মধ্য রাতে কাফে কফি ডে-র ওয়েবসাইট-সহ সব সোশ্যাল মিডিয়া পেজে সিদ্ধার্থের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখা হয়, ‘উই রিমেমবার আওয়ার বিলাভড চেয়ারম্যান ভিজি সিদ্ধার্থ উইদ প্রাইড অ্যান্ড ইউল মিস হিম ডেয়ারলি। উই স্ট্যান্ড কমিটেড টু হিজ ভিশন অ্যান্ড উইল কন্টিনিউ বিল্ডিং অন হিজ লিগ্যাসি।’ ফলে সংস্থার হাল যে এ বার শক্তপোক্ত হাতে ধরতে চলেছেন মল্লিকা, সেটা ভীষণই স্পষ্ট এই বার্তায়।

‘এ লট ক্যান হ্যাপেন ওভার এ কাপ অব কফি’— এই ক্যাচলাইন নিয়ে ১৯৯৪-তে বেঙ্গালুরুর অভিজাত ব্রিগেড রোডে আত্মপ্রকাশ করে কাফে কফি ডে। এখন দেশ-বিদেশ মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৭৫০টি কফি শপ রয়েছে এই সংস্থার। প্রায় ১৪০ বছর ধরে কফি চাষের ব্যবসা সিদ্ধার্থের পরিবারের। সেটাই বড্ড পরিকল্পিত ভাবে ধীরে ধীরে কফি শপের ব্যবসায় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন সিদ্ধার্থ।

কিন্তু সিদ্ধার্থের এই রহস্যমৃত্যুর কারণ কী? পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ভিজি সিদ্ধার্থ আত্মহত্যা করেছেন। কোম্পানির কর্মীদের উদ্দেশে লেখা শেষ চিঠিতে তিনি আয়কর দফতরের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। ২০১৭-য় তাঁর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ২০টি জায়গায় তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। তিনি নাকি আয়কর দফতরের কাছে প্রচুর কালোটাকার কথা স্বীকার করেছিলেন। আয়কর দফতর যদিও সেই বয়ানে সিদ্ধার্থের সই নিয়ে এখনও নিশ্চিত নয়। তা হলে মৃত্যুর কারণ? আত্মহত্যা করলে তার কারণই বা কী? পুলিশ তদন্ত করছে।

কফি বাগান থেকে এক উদ্যোগপতি কফির ভাণ্ডার নিয়ে এসেছিলেন বারে। দামি কফি বিক্রি করে তার চেন শপ বানিয়ে সাফল্যকে তুলে এনেছিলেন আঙুলের ডগায়। সেই ভিজি সিদ্ধার্থকে মনে রাখবেন তাঁরা, যাঁরা মনে করেন, ‘এ লট ক্যান হ্যাপেন ওভার এ কাপ অব কফি’

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)