আমপানে রাজ্যের ক্ষতি ১ লাখ কোটিরও বেশি, কেন্দ্রীয় দলকে হিসেব নবান্নের

আমপানে রাজ্যের ক্ষতি ১ লাখ কোটিরও বেশিআমপানে রাজ্যের ক্ষতি ১ লাখ কোটিরও বেশি

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: আমপানে রাজ্যের ক্ষতি ১ লাখ কোটিরও বেশি, শনিবার কেন্দ্রীয় দলকে এমন হিসেবই দিয়েছে নবান্ন। আমপান পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করতে গত বৃহস্পতিবার রাজ্যে এসেছে সাত সদস্যের কেন্দ্রীয় আন্তঃমন্ত্রক প্রতিনিধি দল। দু’দিন ধরে তারা ঘুরে দেখে উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গা। তার পর এ দিন নবান্নে গিয়ে মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ এবং স্বরাষ্ট্র সচিব আসাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে ওই প্রতিনিধি দল। আমপানে রাজ্যের কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে বৈঠক়ও হয়। সেই বৈঠকেই রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় দলের কাছে প্রায় ১ লাখ আড়াই হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পেশ করে নবান্ন।

গত ২০ মে রাজ্যে আমপান ঘূর্ণিঝড় হয়। তাতে কলকাতা-সহ বেশ কয়েকটি জেলা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তার দু’দিন পরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আকাশপথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটে প্রশাসনিক বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। এর পর তিনি রাজ্যকে ১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিলের বরাদ্দ করেন রাজ্যের জন্য।


ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব খবর পড়তে এখানে ক্লিক করুন…

রাজ্যে যে সাত সদস্যের আন্তঃমন্ত্রক দল এসেছে, তার নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব অনুজ শর্মা। রয়েছেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অধিকর্তা নরেন্দ্র কুমার। দলে মৎস্য চাষ দফতর, শক্তি মন্ত্রক এবং পরিবহণ ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। যদিও যে যে এলাকায় তাঁরা দুটো দলে ভাগ হয়ে ঘুরেছেন, সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় দল সব জায়গায় যাননি। হাইওয়ে দিয়ে তাদের কনভয় গিয়েছে। এবং সেই হাইওয়ের ধারেকাছের কয়েকটি জায়গাই তাঁরা পরিদর্শন করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের কাছে উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বরুণ দে অভিযোগ করেছেন, ‘‘সত্যিকারের ছবিটা দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল প্রত্যন্ত এলাকায় যায়নি। তাদের কনভয় হাইওয়েতে দাঁড়িয়েছে। বড় জোর তাঁরা রাস্তার আশপাশের কয়েকটি জায়গায় গিয়েছেন। এবং ফিরে এসেছেন। আমপানের দাপটে যে কত্ত এলাকায় জলের তলায় চলে গিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। ওঁরা সেই সব জায়গা ঘুরেও দেখেননি। এমন পরিদর্শনের মানেটা কী?’’

নবান্নের ওই হিসাবে বলা হয়েছে, আমপানের জেরে রাজ্যে ২৮ লাখ ৫৬ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে ধ্বংস হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। ১৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান, মুগ, তিল, পাট, বাদাম, আখ, ভুট্টা এবং তুলোর চাষ নষ্ট হয়েছে। পানের বরোজ, আম-লিচুর বাগান এবং ফসল নষ্ট হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমিতে। ক্ষতির আর্থিক মূল্য প্রায় ৬ হাজার ৫৮১ কোটি টাকার। মৎস্যজীবীদের প্রায় ৮ হাজার মাছ ধরার নৌকো ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হয়েছে তাঁদের ১ লাখ ৪৮ হাজার কুঁড়ে ঘর। ওই ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

নবান্নের পেশ করা রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজ্যে প্রায় ২১ লাখ ২২ হাজার গবাদি পশু মারা গিয়েছে। আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৬৪০টি স্কুল এবং ৩০১টি কলেজ-সহ ১২ হাজার ৬৭৮টি আইসিডিএস শিক্ষাকেন্দ্র। নদী বাঁধ ভেঙেছে প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার এবং প্রায় ৪ কিলোমিটার সমুদ্র বাঁধ। নবান্নের পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রায় ১ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমির বনভূমি ধ্বংস হয়েছে এই ঘূর্ণিঝড়ে। তার বেশিটাই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ। শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, আমপানের তাণ্ডবে শহরাঞ্চলে রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ স্তম্ভ, ভূগর্ভস্থ নিকাশি ব্যবস্থা, জল সরবরাহ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। নবান্নের দেওয়া হিসাবে সব মিলিয়ে আমপানে রাজ্যের ক্ষতি ১ লাখ ২ হাজার ৪৪২ কোটি টাকার।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)