শোভাবাজার রাজবাড়ি দিয়েই শুরু হোক পুজোর হুল্লোড়, বনেদি হোক  এ বারের উৎসব

শোভাবাজার রাজবাড়িশোভাবাজার রাজবাড়ি

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: শোভাবাজার রাজবাড়ি দিয়েই হোক না পুজোর শুরু। প্রতি বছর এই চার দিনের অপেক্ষায়ই তো থাকা। আর সেই শুরুটা যদি হয় বনেদি বাড়ি দিয়ে তা হলে তো সোনায় সোহাগা। সে তিনি কলকাতায় থাকুন বা দিল্লি, মুম্বই থাকুন বা আমেরিকা, বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে কে না ভালবাসেন।

এই ক’টা দিনের জন্য সকলেই মুখিয়ে থাকে। কলকাতার পুজো অবশ্য বেশ কয়েক বছর ধরে প্রায় সাত দিনের হয়ে গিয়েছে। এ বার তো দেখা গেল মহালয়ার পর থেকেই রাস্তায় ঠাকুর দেখার ঢল নেমেছে।

আমরা আর পিছিয়ে থাকি কী করে। বেরিয়ে পড়লাম। প্যান্ডেল হোপিংয়ে খুব একটা টান নেই। তবে, প্রতিবারই টানে ওই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। বাড়ির পুজোর একটা অদ্ভুত ভাললাগা রয়েছে। পায়ে পায়ে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলাম পঞ্চমীতেই। ভেবেছিলাম লোকজন এই সাত তাড়াতাড়ি নিশ্চই ঠাকুর দেখতে বেরবে না। কিন্তু শোভাবাজার মোড়ে উবার ছেড়ে দিয়ে হাঁটা ধরতেই টের পেলাম সে সুখ নেই।

ভাসমান বাজারে এ বার মা দুগ্গার আগমণ

রাজবাড়ির গলিতে ঢুকতেই বুঝতে পারলাম আমাদের দলে এখন অনেক লোক। রাজবাড়ির সিংহদুয়ার পেরিয়ে মূল বাড়িতে ঢুকতেই আবহটা বদলে গেল। মূল গেটের দু’পাশ দিয়ে দোতলা দালান গিয়ে মিশেছে সামনে নাট মন্দিরে। যেখানে ইতিমধ্যেই অধিষ্ঠিত হয়েছেন মা দুর্গা। যদিও তিনি আপাতত বন্ধ গ্রিলের ওপারে। এখনও তাঁর বোধন হয়নি। আগামিকাল বোধন। আলোর সাজে সেজে উঠেছে রাজবাড়ির আনাচ-কানাচ।

আগের দিন সারা দিনই বৃষ্টি হওয়ায় সামনের চত্বরের ঘাসের নীচের মাটিতে কাদা জমেছে। তাতে কী? তার মধ্যেই চলছে নতুন প্রেমিকপ্রেমিকাদের সেলফি টাইম। দালানের বারান্দা জুড়ে বসে কত মানুষ। কেউ এই পরিবারের নন। কিন্তু দুর্গা পুজোয় যেন দেব পরিবার পুরো কলকাতার। ১৭৫৭ সালে যখন নবকৃষ্ণ দেব এই পুজো শুরু করেছিলেন তখন কী ভেবেছিলেন এই পুজো এ ভাবে গোটা শহরের হয়ে যাবে?

২৬১ বছরে পা দিল শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গা পুজো। প্রথম থেকেই একচালা প্রতিমা ছিল সোনালি রঙের। কিন্তু একটা সময়ের পর টাকার সমস্যার জন্য সেই রং রূপোলি হয়ে যায়। টানা ১০০ বছর রূপোলি ছিল শোভাবাজার রাজবাড়ির প্রতিমা। কিন্তু গত বছরই ফিরিয়ে আনা হয়েছে মায়ের সোনালি রং। সঙ্গে ফিরেছে বারাণসীর সানাই।

শোভাবাজার রাজবাড়ির উলটোদিকে রয়েছে ছোটো রাজবাড়ি। সেখানে আলাদা করে পুজো হয়। সেই পুজোও ২২৮ বছরের। তারা অবশ্য রুপোলি দুর্গাই ধরে রেখেছে। এ ছাড়া দুই বাড়ির প্রতিমার মধ্যে আর কোনও পার্থক্য নেই। ডাকের সাজে একচালা মা দুর্গা। এই পুজোকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা দেব পরিবারের সব সদস্যরা এক জায়গায় হন।

রাজবাড়ির দাওয়ায় এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে পুজোর নানা সরঞ্জাম তৈরি। মিষ্টি থেকে খিচুড়ি, মোরব্বা থেকে পায়েস— সবই তৈরি হয় এই ঘরের রান্নাঘরেই। সেই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে জোরকদমে। পঞ্চমীর সন্ধেতেই দেখা গেল, চলছে মিষ্টি তৈরির কাজ। মায়ের ভোগে লাগবে সেই সব। তাই তাতে পুরো দস্তুর নজর সেখানকার দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তিদের। জুতো পায়ে উঠে পড়লেই ধমক খেতে হচ্ছে।

এই চারটি দিনের জন্যই সারা বছর ধরে অপেক্ষা, সারা বছর ধরে প্রস্তুতিও।