ষষ্ঠ দফা ভোট: ঝাড়গ্রামে মৃত ১, ঘাটালে নাস্তানাবুদ ভারতী

ষষ্ঠ দফা ভোটষষ্ঠ দফা ভোট: ঘাটালে আক্রান্ত ভারতী ঘোষ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ষষ্ঠ দফা ভোট ছিল রবিবার। কিন্তু, সেই ভোট শুরুর আগের রাতেই বাড়ির সামনে বিজেপির এক বুথ স্তরের নেতাকে খুনের অভিযোগ উঠল।

শনিবার রাতে ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি অঞ্চলের ধবনি গ্রামে মারধরে মারা গিয়েছেন বছর বিয়াল্লিশের রমেন সিং। তিনি বিজেপির স্থানীয় জুনশোলা বুথের সহ-সভাপতি ছিলেন। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ জুনশোলায় দলীয় পতাকা টাঙানো নিয়ে রমেনের সঙ্গে তৃণমূলের লোকজনের গোলমাল বাধে। তখনকার মতো সমস্যা থিতোলেও রাতে ফের তৃণমূলের বাইক বাহিনী গ্রামে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রমেন খাওয়াদাওয়া সেরে বাড়ির উঠোনে মুখ ধুচ্ছিলেন। অভিযোগ, তখনই গোটা দশেক বাইকে জনা পনেরো সোজা চলে আসে রমেনদের বাড়ির কাছাকাছি। শুরু হয় শাসানি। সঙ্গে ফতোয়া— কোনও ভোট বিজেপিকে নয়। সব ঘাসফুলের বোতাম টিপতে হবে। যারা সেটা করবে না তারা ভোট দিতে যেন না যায়।

রমেনের নাম ধরে বাইকে আসা তৃণমূলের লোকজন ডাকাডাকি করছিল। গালি দিচ্ছিল। তা শুনেই রমেন বেরিয়ে যায় বলে তাঁর পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে। বাইরে বেরিয়ে রমেন রুখে দাঁড়াতেই শুরু বচসা, ক্রমে তা গড়ায় হাতাহাতিতে। ওই ছেলেরা রড দিয়ে তাঁর মাথায় মারে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রমেন। সেই অবস্থাতেও তাঁকে লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর গ্রামের লোক বেরিয়ে আসে। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রমেনকে নিয়ে যাওয়া হয় তপসিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রবিবার ষষ্ঠ দফা ভোট-এর দিন সাতসকালেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন ঘাটাল‌ের বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ। ভোটের দিন কেশপুরে হুমকি ও বিক্ষোভে দিনভর আটকে রইলেন তিনি। আক্রান্ত হয়ে মাটিতে পড়ে যান। কেঁদেও ফেলেন। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীর গুলিতে আহত হন এক তৃণমূলকর্মী। তার আগে ও পরে দফায় দফায় তৃণমূলের বিক্ষোভ, ইটবৃষ্টি, লাঠিচার্জ সব মিলিয়ে তৈরি হয় অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। কোনওক্রমে একটি মন্দিরের পিছনের পাঁচিল টপকে কেশপুর থানায় আশ্রয় নিতে হয় ভারতীকে। রবিবার ষষ্ঠ দফার ভোটে এ ভাবেই হিংসায় সবাইকে ছাপিয়ে গেল কেশপুর।

রবিবার ভোটের দিন সাতসকালেই বিক্ষোভের মুখে পড়েন ভারতী। বুথ থেকে দলের এজেন্টকে মেরে বার করে দেওয়া হয়েছে খবর পেয়ে গোটগেড়িয়ায় যেতেই তাঁকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মীরা। মহিলাদের ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান বিজেপি প্রার্থী। পায়ের নখ উপড়ে যায়। কেঁদে ফেলেন তিনি। সেখান থেকে কোনও রকমে বেরিয়ে তিনি যান বগছড়িতে। পরে বড়বরোজ ঘুরে দোগাছিয়ায় পৌঁছতেই ফের বিক্ষোভ। এ বার বিক্ষোভ তুমুল আকার নেয়। ভারতীকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠে।

ভারতীকে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ জওয়ানেরা লাঠিচার্জ করলে চারপাশ তেতে ওঠে। ভারতীর গাড়ি লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি। অল্প জখম হন ভারতী। আর গুরুতর জখম হন ভারতীর নিরাপত্তারক্ষী কিষান কুমার। ইটের ঘায়ে তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে শুরু করে।

এর পরই কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন ভারতীর নিরাপত্তায় নিযুক্ত সিআইএসএফ জওয়ানেরা। গুলি তৃণমূলকর্মী বক্তিয়ার খানের ডান হাত ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। তৃণমূলকর্মীরা ভারতীর গাড়ি তাড়া করেন। কোনও রকমে সেখান থেকে বেরিয়ে জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার কেশপুরে পৌঁছন। সেখানেও ফের বিক্ষোভ। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার অভিযোগে ভারতীর গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে প্রশাসন।

প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুর। বিক্ষোভ সরাতে প্রার্থীর দেহরক্ষীদের গুলি চালনা। রাজনৈতিক সংঘর্ষ। ইভিএম ভাঙচুর। বোমা। মৃত্যু। একাধিক জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর শূন্যে গুলি চালনা। অন্য পাঁচ দফাকে শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছিলেন রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আরিজ আফতাব। রবিবার আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ঘাটালের কয়েকটি অশান্তি ছাড়া এ দিনের ভোট খুবই শান্তিপূর্ণ। বড়সড় আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেনি।’’