রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই, মেট্রো চ্যানেলে ‘সংবিধান বাঁচাতে’ ধর্নায় মমতা

৫ আইপিএসমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই কেন? এর পিছনে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে। রবিবার এমন অভিযোগই তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু অভিযোগ নয়, এই ঘটনাকে ‘সংবিধান অভ্যুত্থান’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদে পথে নামে তৃণমূল। ‘সংবিধান বাঁচাতে’ এ দিন রাত থেকে ধর্মতলা চত্বরের মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য রয়েছেন। রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ, এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মার সঙ্গে মমতার ওই ধর্নায় রয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারও।

শনিবার সিবিআইকে উদ্ধৃত সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা। তার পর রবিবার সকালে মমতা টুইট করে রাজীবের পাশে থাকার বার্তা দেন। তিনি রাজীবকে বিশ্বের সেরা পুলিশ অফিসার বলে মন্তব্য করেন। এর পর এ দিন সন্ধ্যায় কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারে বসে যুগ্ম কমিশনার জাভেদ শামিম সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন খবর ছড়ানো হচ্ছে। সিবিআই অফিসাররা রাজীব কুমারকে খুঁজছেন— এই তথ্য ঠিক নয়। হাইকোর্টের আদেশানুসারে তা করতে পারে না সিবিআই।

তার পর এক ঘণ্টাও কাটেনি। লাউডন স্ট্রিটে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সরকারি বাসভবনে পৌঁছয় সিবিআই-এর একটি দল। কিন্তু, কলকাতা পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সিবিআই গোয়েন্দাদের টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয় বলে অভিযোগ। তাঁদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় শেক্সপিয়র সরণি থানায়। কারণ, পুলিশ কমিশনের বাসভবন ওই থানার আওতায় পড়ে।

সিবিআই আধিকারিকদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পরই লাউডন স্ট্রিটে রাজীব কুমারের বাসভবনে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যান রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, এডিজি আইনশৃঙ্খলা অনুজ শর্মা, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মমতা সেখানে বলেন, “কোনও রকম সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া সিবিআই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিক্রেট অপারেশনে এসেছিল। যিনি কয়েক কোটি মানুষের নিরাপত্তা দেন, তাঁর নিরাপত্তা নিয়েই সংকট তৈরি করে দিতে চাইছে ওঁরা!” তিনি আরও বলেন, কী সাহস! কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে সিক্রেট অপারেশন চালাবে! আমার ফোর্সকে প্রোটেকশন দেওয়া আমার সরকারি দায়িত্ব।

এর পরেই তিনি মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসার সিদ্ধান্তের কথা জানান। পৌঁছেও যান সেখানে। তাঁর এই সিদ্ধান্তের পাশে দাঁড়িয়েছেন রাহুল গান্ধী-সহ বিরোধী মহাজোটের সব গুরুত্বপূর্ণ নেতা। মেট্রো চ্যানেলে ধর্নায় বসা মমতাকে ফোন করেন রাহুল, মায়াবতী, ওমর আবদুল্লা, তেজস্বী যাদব, অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। রাহুল পরে টুইট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি মমতাদির সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁকে জানিয়েছি, আমরা তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করব। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর মোদী ও বিজেপি যে আঘাত করছে, বাংলার ঘটনা তারই অঙ্গ। বিরোধীরা একজোট হয়ে এই ফ্যাসিস্টদের মোকাবিলা করব।’

সংবাদসংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, এ দিন সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সিবিআই প্রধান এম নাগেশ্বর রাও তাদের জানিয়েছেন, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তথ্য ও প্রমাণ লোপাট করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে প্রমাণ রয়েছে।

অন্য দিকে, ধর্না মঞ্চে ভিড় ক্রমশই বাড়ছে। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে বিক্ষোভ-অবরোধ। সোমবার সারা রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী কাল রাজ্যপালও রাজ্যের প্রশাসনিক আদিকারিকদের ডেকে পাঠিয়েছেন রাজভবনে।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত।

মোদী-দিদি তরজা, শনিবাসরীয় পশ্চিমবঙ্গ তাতেই জমে থাকল দিনভর

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ দেখতে এখানে ক্লিক করুন)