আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধ রাত গড়াতেই পৌঁছল চরমে

আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধআদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সারাদিন ধরে চলছিলই কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে তত বেড়েছে সমস্যা। ট্রেনের মধ্যে আটকে থাকা যাত্রীদের সময় কাটছে প্রমাদ গুণে। দফায় দফায় অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনায়ও কোনও ফল মেলেনি। শালবনীর বিস্তির্ণ অঞ্চল ঘিরে রেখেছে প্রায় ৪ হাজার মানুষ। তার মধ্যেই বেলদা স্টেশনে এক রেলকর্মীর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এখনও চলছে বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ। 

আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধ, আর তাতেই বিপর্যস্ত রাজ্যের একটা বিস্তীর্ণ অংশ। ‘সাঁওতালি ভাষা জানা অলচিকি জানা বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে, সরকারি আদেশ মতো ইচ্ছুক সমস্ত শিক্ষককে সাঁওতালি মাধ্যম স্কুলে আনতে হবে, সমস্ত বই সরবরাহ এবং পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, অ-আদিবাসীদের আদিবাসী সার্টিফিকেট বাতিল করা এবং সংরক্ষিত আসনে চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে, আদিবাসী শিক্ষক এবং সরকারি কর্মীদের রাজনৈতিক বদলি বন্ধ করতে হবে, সংবিধানে উল্লিখিত পঞ্চম তফসিলি আইন চালু করতে হবে’— এমনই ৯ দফা দাবি নিয়ে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্ট কালব্যাপী রাজ্য সড়ক, রেল এবং জাতীয় সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল। সেই অবরোধেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের একটা বড় অংশ।

এ দিনের অবরোধে সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পরিষেবা। আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধ-এর জেরে একাধিক জায়গায় আটকে পড়ে ট্রেন। যার জেরে বিড়ম্বনায় পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। বাতিলও করতে হয় বেশ কিছু ট্রেন। এ দিন সকাল ৬টা নাগাদ ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর খেমাশুলিতে পথ অবরোধ শুরু করেন ওই আদিবাসী সংগঠনের সদস্যেরা। পাশাপাশি, রাজ্যের একাধিক জায়গায় রেল অবরোধও করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব রেলের বালিচক, খেমাশুলি, ছাতনা, শালবনি, বিষ্ণুপুরে আপ ও ডাউন লাইনে অবরোধে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা।

বাতিল করতে হয় বহু লোকাল ট্রেন। পাশাপাশি শতাব্দী এবং জনশতাব্দীর মতো ট্রেনও বাতিল করতে হয়েছে রেলকে। ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, সকাল ৬টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে।  যত ক্ষণ না সরকার তাঁদের দাবি মানছে, তত ক্ষণ তাঁরা ওই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় একের পর ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে। লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি মেল, এক্সপ্রেসও অবরোধের জেরে আটকে যায়। এ দিন বিকেলের দিকে কোনও কোনও জায়গায় অবরোধ উঠে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও তা মোটেও স্বাভাবিক হয়নি।

দাড়িভিট কাণ্ডে ওই গ্রামে দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ, গ্রেফতার বিজেপি নেতা

আদিবাসী সংগঠনের ডাকা রেল-রাস্তা অবরোধ নিয়ে রাজ্য প্রশাসন এবং রেল পুলিশের ভূমিকায় যথেষ্ট ক্ষুব্ধ সাধারণ যাত্রীরা। এত জায়গায় রেল অবরোধ হল, অথচ কোথাও তা তোলার ব্যবস্থা করা হল না কেন, প্রশ্ন তুলছেন তাঁরা। আগামিকাল ফের অবরোধ হলে, ভোগান্তি যে আরও বাড়বে, সেটা ভেবেই আতঙ্কিত তাঁরা।

সকাল থেকে রাত হয়ে যাওয়ার পরেও অবরোধ না ওঠায় রেলের পক্ষ থেকে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হয় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে। কিন্তু বার বার বৈঠকের পরেও ওঠেনি অবরোধ। বাতিল হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের প্রায় সব ট্রেন। বিভিন্ন জায়গায় এখনও দাড়িয়ে রয়েছে ট্রেন।

সোমবার নবান্নকে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়ে অবরোধ তুলতে রাজ্য সরকারে সাহায্য চায় রেল। কারণ দাবিটা আসলে রেলের কাছে নয় সরকারের কাছে। আর তারই প্রভাব পড়ছে রেলের উপর। অবরোধের জেরে দক্ষিণ-পূর্ব রেল পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে থাকা ট্রেনের যাত্রীদের কাছে ফুরিয়ে গিয়েছে খাওয়ার, জল। সমস্যা ক্রমশ জটিল হচ্ছে। অবরোধ ওটার কোনও ইঙ্গিতই পাওয়া যায়নি এখনও।