প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল থেকে ‘উধাও’ হস্তমৈথুনের ভিডিও পোস্ট

প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল

তনুকা বসু, কলকাতা


ঘটনাটি ঘটে শনিবার। নিজের ফেসবুক প্রোফাইলেই সেই ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেন কলেজ ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দাস। সেই ভিডিওর জেরে সংবাদমাধ্যম থেকে পুলিশ— সকলেই তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু, হঠাৎই দেখা যায় প্রিয়াঙ্কার ফেসবুক থেকে সেই ভিডিও ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছে।

‘উধাও’ প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল-কভার পিকচার। তাঁর ফেসবুক ওয়ালে ২০১৮ সালের কোনও পোস্টই নেই! সেই ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পর একটা পোস্ট করেছেন প্রিয়াঙ্কা। শনিবার গভীর রাতেসবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেই পোস্ট করার পাশাপাশি নিজের প্রোফাইল থেকে সব ছবি সম্ভবত মুছেও ফেলেছেন তিনি।

ঘটনাটি নিশ্চই সবার মনে আছে। তবুও এক বার মনে করিয়ে দিই। শনিবার ঠিক কী হয়েছিল?

শ্যামবাজারের কাছের ঘটনা। বাসটা চলছিল। সামনে বসে থাকা দু’টি মেয়েকে দেখে এক প্রৌঢ় পিছনের সিটে বসে টানা হস্তমৈথুন করে যাচ্ছিলেন। কেউ দেখলেন, কেউ দেখলেন না। তবে, কেউ প্রতিবাদ করলেন না। ওদের চিৎকারেও কোনও সাড়া পাওয়া গেল না। বাসের কন্ডাকটর বললেন, ‘‘কী করব বলুন তো, কার যে কী মানসিকতা!’’ অদ্ভুত? ভাবলেও অবাক লাগে এই সমাজেই প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া অপরাধ, ঘুষ খাওয়া নয়। নচিকেতা সুরে সুরে অনেক দিন আগেই সে কথা বলে গিয়েছিলেন।

বুড়ো লোকটি পিছনের সিটে বসে টানা হস্তমৈথুন করে যাচ্ছিল

শনিবার হেদুয়া থেকে টিউশন নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন দমদমের প্রিয়াঙ্কা। ৩০বি/১ বাসে উঠেছিলেন। কিছু ক্ষণ চলার পরই দু’জনে দেখেন পিছনে বসে থাকা এক জন তাঁদের দিকে তাকিয়ে নানা মুখভঙ্গি করছে আর হস্তমৈথুন করছে। ভর দুপুরে বাসের মধ্যে এমন কাণ্ডে চমকে যান দুই ছাত্রীই। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘প্রথম চিৎকার করে লোকের নজরে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু কেউ কোনও প্রতিবাদ করে না। তার পরই মাথায় আসে ভিডিও করার কথা। ওই লোকটি সেটি দেখেও থামেনি। আমার বন্ধু ভয় পাচ্ছিল। আবার দু’জনে চিৎকার শুরু করি। কেউ এসে পাশে দাঁড়ায়নি।’’ যখন ওঁরা দু’জন চিৎকার জুড়ে দেন তখন শ্যামবাজারের কাছে চলন্ত বাস থেকেই নেমে যায় সেই লোকটি। তাকে কেউ ধরারও চেষ্টা করেনি।

প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল

প্রিয়াঙ্কার ফেসবুক প্রোফাইল।

এই সাহস দেখানোর পর কেন প্রিয়াঙ্কা এটা করলেন সেটাই প্রশ্ন। একটা হতে পারে, ঘটনা মিটে গিয়েছে। সেই লোকটির শাস্তি চেয়েছিলেন শাস্তি হয়েছে। আর এই বিষয়ের মধ্যে থাকতে চান না তিনি। আবার ঠিক যে ভাবে মেট্রোয় আলিঙ্গন করা যুবক গনপ্রহারের পরও যখন তাঁদের হয়ে গোটা শহর গলা চড়াল তখনও তাঁরা সামনে এলেন না। না হলে তাঁর পাশেও তো সবাই দাঁড়িয়েছিল। মঙ্গলবার ফোন করেও পাওয়া গেল না প্রিয়াঙ্কাকে। রিং হয়ে গেল।

প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল

প্রিয়াঙ্কার শেষ পোস্ট ১৩ এপ্রিল।

কোন সামাজিক ভয়ে? সেই যুগলের পর এই প্রিয়াঙ্কা। সেই সামাজিক ভয়ই কি প্রিয়াঙ্কাকেও গ্রাস করল? প্রশ্নটা থাকলই।