ভরদুপুরে হুলস্থুল সোদপুর স্টেশনে, পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ

ভরদুপুরে হুলস্থুল সোদপুর স্টেশনেভরদুপুরে হুলস্থুল সোদপুর স্টেশনে

তনুজা দত্ত


দুপুরবেলা হঠাৎই সোদপুর স্টেশনে জোর হট্টগোল। এ দিক ও দিক থেকে ধেয়ে আসছে উর্দিধারী পুলিশ। সঙ্গে বেশ কয়েক জন সাদা পোশাকের ব্যক্তি, যাঁরা রয়েছেন সেই পুলিশের সঙ্গেই।

কী হয়েছে? কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তত ক্ষণে উৎসুক জনতাও উত্তর খুঁজতে শুরু করেছে। যেখানেই পুলিশ, সেখানেই তাঁদের ঘিরে জমে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ভিড়। কোথাও মৃদু স্বরে আকুতি, তো কোথাও উচ্চস্বরে বচসা কানে ভেসে আসতে থাকায় আর প্ল্যাটফর্মের সিটে বসে থাকা গেল না। সাংবাদিকের সুলুকসন্ধানী মনটা নড়েচড়ে উঠল। উঠতেই হল তাই জায়গা ছেড়ে। তার পর যা দেখলাম, বেশ ভালই লাগল। পুলিশকে ধন্যবাদ দিলাম। মনে মনে আবেদন জানালাম, রোজ আসার জন্য। একই ভাবে টহল দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হোক সব নেশার পসরা।

এ বার আসা যাক আসল গল্পে, মানে খবরে। পুলিশ নেমেছে স্টেশন চত্বর থেকে নেশার দ্রব্য সাফ করে দিতে। নিয়ম অনুযায়ী, জনবহুল জায়গায় ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু, কে মানে সে কথা। স্টেশন চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এ পাশ ও পাশ থেকে সব সময়ই উড়ে আসে সিগারেটের ধোঁয়া। তা বাঁচিয়েই চলা। এ বার সে সব থেকে হয়তো কিছু দিনের জন্য মুক্তি মিলবে।

ভিডিয়ো দেখুন…

অন্য সব প্ল্যাটফর্মের মতো সোদপুর স্টেশন জুড়েও ছোট ছোট সব দোকান। কোথাও বিস্কুট, কোথাও চা, কোথাও বা নানাবিধ জিনিসের পসরা। তার ফাঁকফোঁকর থেকেই পুলিশের তল্লাশিতে বেরিয়ে আসতে শুরু করল সিগারেটের প্যাকেট। সঙ্গে সঙ্গে সাদা পোশাকের এক জন এসে বিল কেটে জরিমানা করছেন দোকানদারদের। এর মধ্যেই হঠাৎ এক সহৃদয় ব্যক্তি এসে হাজির। তাঁর আবেগ উথলে উঠল সেই গরিব দোকানদারদের জন্য। তিনি পুলিশকে চিৎকার করে বলতে শুরু করলেন, ‘‘নেশা বন্ধ করতে হলে সিগারেটের সংস্থাগুলোকে বন্ধ করুন। গরিব দোকানদারদের ভাত মারছেন কেন?’’ পুলিশও পাল্টা গলা চড়াল। এক পুলিশ কর্মী বললেন, ‘‘আপনি মনে হয় মানুষ মারার পক্ষে। আপনি জানেন, এই নেশার জন্য কত মানুষের মৃত্যু হয়? শুধু যাঁরা সিগারেট খান তাঁরা ছাড়াও তাঁদের কাছাকাছি থাকা মানুষেরা অসুস্থ হয়। আপনি সেটা চান?’’ শুরু হল বচসা। তার মধ্যে ভাল দিক হল, বেশির ভাগ মানুষকেই দেখা গেল পুলিশের পক্ষে সওয়াল করে সেই ব্যক্তিকে থামিয়ে দিতে।

লোকাল ট্রেনে প্রকৃতির ছোঁয়া, ছুয়ে গেল মন

দুই এবং তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে বসা প্রচুর দোকান ঘিরে চলছিল পুলিশি ধরপাকড়। অন্য দিকে তখন ফাঁকা চার নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে যাঁরা সুখটান দিচ্ছিলেন তাঁদের দিকে নজর গেল পুলিশ বাহিনীর। লাইন টপকে সটান পৌঁছে গেল একটি দল সেখানে। সিগারেট ফেলে তত ক্ষণে পুলিশের হাতে পায়ে ধরতে শুরু করেছেন তাঁরা। কেউ কেউ তো আর জীবনে সিগারেট না খাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন ভয়ে। জরিমানার কবলে পড়লেন তাঁরাও। কারও ৫০০ কারও ১ হাজার টাকা ফাইন দিয়ে আপাতত মিটল সমস্যা। সঙ্গে পুলিশের ভয়ে আশা করা যায় কয়েক দিন সিগারেটের ধোঁয়ামুক্ত হবে সোদপুর স্টেশন। তার পর?

শোনা গেল সব স্টেশনেই আগামী কয়েক দিন চলবে সিগারেটমুক্তি অভিযান। সাময়িক হলেও একটা ভাল কাজ তো হল। যত দিন চলবে তত দিনই লাভ। সেই ভিড়ের মধ্যে থেকেই পুলিশের উদ্দেশে দাবি উঠল, ‘‘রোজ আসুন।’’ পুলিশকেও হেসে ফেলতেও দেখা গেল সেই সময়। হতাশা দোকানদারদের মধ্যে। তাঁদেরও এ বার ভাবার সময় এসেছে যে!