মেডিক্যাল কলেজ ইস্যুতেই কি স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা বদল?

মেডিক্যাল কলেজমেডিক্যাল কলেজে পড়ুয়াদের উল্লাস।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মেডিক্যাল কলেজ ইস্যুতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সোমবার বিধানসভায় এমনটাই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়ারা অনশন আন্দোলন তুলে নেন। কারণ, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি মেনে নিয়েছেন। আর সন্ধ্যাবেলায় রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবই বদলে গেলেন। পাল্টে গেলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাও। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি সত্যিই হস্তক্ষেপ করেনি? তা হলে এই রদবদল কেন?

সোমবার সকা‌ল সাড়ে ১১টা। বিধানসভায় মেডিক্যাল কলেজ ইস্যুতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন বিরোধীরা। সেই দাবি মে‌নে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে জানান, মেডিক্যাল কলেজ ইস্যুতে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। কারণ, এই ধরণের ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট কলেজের কাউন্সিলই শেষ কথা বলে। কোন হস্টেলে কোন পড়ুয়ারা থাকবেন, তা দেখার দায়িত্ব সেই কলেজের। এবং সেই সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যা মেটানোর দায়িত্বও সেই কলেজ কর্তৃপক্ষের। সরকার কোনও ভাবেই এর মধ্যে থাকতে পারে না বলেই জানিয়েছিলেন চন্দ্রিমা।

রবিবার মেডিক্যাল কলেজ ঘুরে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য একটি বিবৃতি পাঠিয়েছিলেন। এ দিন বিধানসভায় চন্দ্রিমা সেই বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে জানান, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছেন, মেডিক্যালের পড়ুয়াদের ওটি প্রতীকী অনশন আন্দোলন। এই প্রতীকী অনশন আন্দোলন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন চন্দ্রিমা। ঠিক যেমন ভাবে আগের দিনের বিবৃতিতে দেবাশিসবাবু পড়ুয়াদের একই অনুরোধ করেছিলেন। বিধানসভায় চন্দ্রিমার এই মন্তব্যে বিরোধীরা ভীষণ বিরক্ত হন। এবং তাঁরা ওয়াকআউট করে সভা থেকে বেরিয়ে আসেন।

মেডিক্যাল কলেজের অনশনের দিনগুলো

এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মেডিক্যাল‌ কলেজে দাঁড়িয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জানান, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে ঠিক হয়েছে সিনিয়র পড়ুয়াদের নবনির্মিত হস্টেলের দু’টি তলায় রাখার ব্যবস্থা করা হবে। নতুন করে একটি হস্টেল তৈরি করা হবে। পরে সেখানেই ওই পড়ুয়াদের ফিরিয়ে আনা হবে। এতেই জয়ের রাস্তা খুলে যায় আন্দোলনরত পড়ুয়াদের কাছে। পরে অধ্যক্ষের বিবৃতি দেখে তাঁরা ১৪ দিনের অনশন তুলে নেন। অধ্যক্ষ নিজের হাতে ফলের রস খাইয়ে তাঁদের অনশন থেকে তোলেন। আন্দোলনে বিজয়ী হয়ে পড়ুয়ারা মিছিল বার করেন কলেজ স্ট্রিটে।

সন্ধ্যায় ফের নতুন তিনটি খবর এসে পৌঁছয়। এক, ১৯৮৯ ব্যাচের আইএএস অফিসার অনিল বর্মাকে সরিয়ে ১৯৮৬ ব্যাচের আইএএস রাজীব সিন্‌হাকে স্বাস্থ্য সচিবের দায়িত্ব দিয়েছে নবান্ন। দুই, স্বাস্থ্য-শিক্ষা সচিব দেবাশিস ভট্টাচার্যকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। এবং তিন, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে উচ্ছল ভদ্রকে। আর এই তিন বদল প্রশ্ন তুলে দিল চন্দ্রিমার সকালের বয়ানে।

মেডিক্যালে অনশন উঠল অবশেষে, ছাত্রদের দাবি মেনে নিল কর্তৃপক্ষ

সত্যিই কি সরকার কোথাও কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করল না? তা হলে এ দিনের সমস্ত ঘটনাই কি কাকতালীয়? সবই স্বাভাবিক ভাবে হয়েছে? বদলিগুলিও কি রুটিন মাফিক? প্রশাসনের এক কর্তার মতে, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সব যে এক নিমেষেই হয়, এ দিনের ঘটনা তারই প্রমাণ। আর এক রাজনীতিকের মন্তব্য, ‘‘সচিব বা অধিকর্তা পর্যায়ে বদল আনতে হল কেন সরকারকে? তা হলে নিশ্চয়ই কোথাও কোনও গলদ ছিল! আর সেই গলদের খেসারত দিচ্ছিল ওই বাচ্চাগুলো!’’

বামেদের একটি প্রতিনিধি দল এ দিন দুপুরে মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিল। সেখানে প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু বলেছিলেন, ‘‘একটা সামান্য বিষয় এত দূর গড়াল কী ভাবে?’’ একই প্রশ্ন করেছেন বিদ্বজ্জনদের অনেকেই। সাধারণ মানুষেরও একটাই কথা, পড়ুয়াদের হস্টেলে খাকার একটা দাবির জন্য অনশনে বসতে হয়? শিক্ষকরা কি বাবা-মা নন? সরকারই বা কী করছিল?

সরকার কী করছিল তা জানা যায়নি। তবে, সরকার যে স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার ভূমিকায় খুশি নয়, সেটা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছে নবান্ন।