জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: নন্দীগ্রাম হাতছাড়া মমতার শেষ বেলায়। যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে নিজের চেনা জমি ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সেখানেই তৃণমূলের পতাকা উড়িয়েও ওড়ানো হল না। যদিও লড়াই ছিল হাড্ডাহাড্ডি। প্রথম থেকে দীর্ঘক্ষণ সেখানে এগিয়েছিলেন মমতার এক সময়ের ছায়া সঙ্গী শুভেন্দু অধিকারী। যিনি শেষবেলায় তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। আর সেদিনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবে নিয়েছিলেন গদ্দারদের জবাবটা তিনি দেবেন ময়দানেই। আজ সব টানাপড়েনের শেষ। গোটা বাংলায় বাজিমাত বাংলার মেয়ের। কিন্তু নিজের কেন্দ্রে হল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিতেছেন ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়ে দিয়েছিল নন্দীগ্রামে ১২০১ ভোটে শুভেন্দুকে পরাজিত করেছেন মমতা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেখা গেল সেখানে জিতে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
এর আগের সময়টা ঘটনাবহুল। শুভেন্দুর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া, তৃণমূলকে, দলের নেতাদের ক্রমশ আক্রমণ করে যাওয়া। মমতার নন্দীগ্রাম থেকে লড়ার সিদ্ধান্ত। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে পায়ে চোট পাওয়া এবং সেই চোট নিয়ে হুইলচেয়ারেই পুরো ভোটটা কাটানো। এই সবই থাকল এবারের নির্বাচনে। তবে সঙ্গে মেনে নিতে হল হারও।
ভোটের ফল মেনে নিয়েও আদালতে যাওয়ার কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন নন্দীগ্রামে কী হয়েছে সেটা খোঁজ নিতে হবে। তিনি বলেন, ভোট লুঠ হয়েছে নন্দীগ্রামে। সরকারিভাবে নন্দীগ্রামের ভোটের ফল প্রকাশ করা হয়নি এখনও। হতে পারে আবার গণনা বলে জানা গিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে জানান, ‘‘আগাম কিছু ধারনা করে নেবেন না গণনা প্রসেস এখনও শেষ হয়নি।’’ তবে তাঁর কিছুক্রণের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয় নন্দীগ্রামে জিতেছেন শুভেন্দু অধিকারীই। সেখানে আর নতুন করে গণনা হবে না।
The counting process for Nandigram has not been completed. Please do not speculate.
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) May 2, 2021
২৯৪টির মধ্যে ২৯২টি আসনের ফল প্রকাশ হচ্ছে এদিন। দুটো আসনে ভোট এখনও বাকি। নন্দীগ্রাম থেকে জয়ের খবর আসার পড়ে সাময়িক বাড়ির বাইরে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ততক্ষণে তাঁর বাড়ির সামনে শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসব। তবে খুব শান্ত গলায় সবাইকে বাড়ি ফিরে যেতে বললেন নেত্রী। করোনার মধ্যে কোনও বিজয় উৎসব হবে না সেটাও তিনি জানিয়ে দিলেন।
ইতিমধ্যেই কালীঘাটে এক এক করে উপস্থিত হয়েছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারা। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক আগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন সেখানে।
২০১১-তে ৩৪ বছরের বাম জমানার সমাপ্তি ঘটিয়ে ইতিহাস রচনা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৬-তে তাঁর সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বিরোধিরা। আর এবার কেন্দ্রের দাদাদের চোখে চোখ রেখে তাঁদের সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিলেন নিস্তব্ধে।
ইতিমধ্যেই যাঁরা জয়ের হাসি হেসেছেন— সুজিৎ বসু (বিধাননগর), অদিতি মুন্সি (রাজারহাট গোপালপুর), চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তী (বারাসত), লাভলী মৈত্র (সোনারপুর দক্ষিণ), বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (বারুইপুর পশ্চিম), মনোজ তিওয়ারি (শিবপুর), বিদেশ বসু (উলুবেড়িয়া পূর্ব), কাঞ্চন মল্লিক (উত্তরপাড়া), নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় (চৌরঙ্গি), ইন্দ্রনীল সেন (চন্দননগর), বেচারান মান্না (সিঙ্গুর), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (বালিগঞ্জ), জাভেদ খান (কসবা), ফিরহাদ হাকিম (কলকাতা বন্দর), শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় (ভবানীপুর), সাধন পাণ্ডে (মানিকতলা), ময়ল ঘটক (আসানসোল উত্তর), রাজ চক্রবর্তী (খড়দহ), জুন মালিয়া (মেদিনীপুর), সোহম চক্রবর্তী (চণ্ডীপুর), অরূপ বিশ্বাস (টালিগঞ্জ), জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (হাবড়া), শশী পাঁজা (শ্যামপুর), মনোরঞ্জন ব্যাপারী (বলাগড়), অতীন ঘোষ (কাশীপুর বেলগাছিয়া), চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (দমদম উত্তর), ব্রাত্য বসু (দমদম), মদন মিত্র (কামারহাটি)
আরও যাঁরা জিতলেন— রহিমা মণ্ডল (দেগঙ্গা), রফিকুর রহমান (আমডাঙা), আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় (রামপুরহাট), সৌমেন মহাপাত্র (তমলুক), অলক জলদাতা (রায়দিঘি), শিউলি সাহা (কেশপুর), মন্টুরাম পাখিরা (কাকদ্বীপ), তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (রানিগঞ্জ), রবিউল আলম (রেজিনগর), আব্দুল গনি (সুজাপুর), নবীন বাগ (খণ্ডঘোষ), শ্রীকান্ত মাহাতো (শাবনি), হুমায়ুন কবীর (ডেবরা), বিবেক গুপ্ত (জোড়াসাঁকো), প্রয়াত কাজল সিনহা (খড়দহ), হরেরাম সিং (জামুরিয়া), সমীর পাঁজা (উদয়নারায়ণপুর), রত্না চট্টোপাধ্যায় (বেহালা পূর্ব), তাপস রায় (বরাহনগর), মানস ভুঁইয়া (সবং)
হারলেন বা পিছিয়ে যাঁরা— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (নন্দীগ্রাম), রবীন্দ্রনাথ ঘোষ (নাটাবাড়ি তৃণমূল), গৌতম দেব (ফুলবাড়ি ডাবগ্রাম), সায়নী ঘোষ (আসানসোল দক্ষিণ), কৌশানি মুখোপাধ্যায় (কৃষ্ণনগর উত্তর), সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁকুড়া)
(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)