ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট সেতু, ঠিক যেন ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন ৫’

মাঝেরহাট সেতুভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতু।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট সেতু, মঙ্গলবার বিকালে। ওই ঘটনায় এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত এক জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। বেহালার শীলপাড়ার বাসিন্দা মৃত ওই যুবকের নাম সৌমেন বাগ। তাঁর বয়স ২৭ বছর। জখম অবস্থায় শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্তত ২৫ জন। নিখোঁজও রয়েছেন বেশ কয়েক জন।

মাঝেরহাট সেতু যে ভাবে এ দিন ভেঙে পড়েছে, তাতে অনেকেরই মনে পড়ে গিয়েছে দুটো দৃশ্য। প্রথমটা বাস্তব। বছর আড়াই আগে ভেঙে পড়া পোস্তা সেতু। আর দ্বিতীয়টি সিনেমা। স্টিভেন কোয়ালে নির্দেশিত ছবি ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন ৫’।

২০১৬ সালের ৩১ মার্চ দুপুরে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল পোস্তার নির্মীয়মান সেতু। ওই ঘটনায় ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আহত হয়েছিলেন বহু মানুষ। এ দিনের মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার খবরে প্রথমেই পোস্তার সেই ঘটনার কথা মনে যায়। সকলের মধ্যেই আতঙ্ক ছড়ায়।

মাঝেরহাট সেতু

মাঝেরহাট সেতু

২০১১ সালের ৪ অগস্ট মুক্তি পেয়েছিল স্টিভেন কোয়ালের ‘ফাইনাল ডেস্টিনেশন ৫’। সেখানে দেখা যায়, স্যাম লওটন নামের একটি চরিত্র বাসে করে তাঁর সহকর্মীদের সঙ্গে কোম্পানি রিট্রিটের জন্য যাচ্ছেন। মাঝে নর্থ বে ব্রিজের উপর তাঁদের বাসটি পৌঁছনোর পর সেতুটি ভেঙে পড়ে। ওই ঘটনায় স্যাম বেঁচে গেলেও অনেকের প্রাণহানি হয়। ঘটনাটি ঘটার আগে স্যামের কল্পনায় কোনও ভাবে গোটা বিষয়টি ধরা পড়ে। পরে সিনেমার বাস্তবে বিষয়টি ঘটেও যায়। ওই ছবিতে যে ভাবে নর্থ বে সেতুটি ভেঙে পড়েছিল, এ দিন যেন অনেকটা সে রকম ভাবেই ভেঙে পড়ল মাঝেরহাট সেতু।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ আচ মকাই ভেঙে পড়ে মাঝেরহাট সেতু। অথচ ছ’মাস আগে পূর্ত দফতরের তরফে এই সেতুকেই ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিয়েচিল পূর্ত দফতর। সেতুর ভাঙা অংশের সঙ্গে সঙ্গে নীচে পড়ে যায় একটি মিনি বাস, তিনটি প্রাইভেট গাড়ি, দু’টি অ্যাপ ক্যাব এবং দু’টি বাইক।

মাঝেরহাট সেতু

মাঝেরহাট সেতু

সেতুটি ভেঙে পড়ার পর পরই উদ্ধারকাজে নেমে পড়েন স্থানীয় মানুষজন। আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় এসএসকেএম হাসপাতাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল রিসার্ট ইনস্টিটিউট (সিএমআরআই)-এ। কিছু ক্ষণের মধ্যেই উদ্ধারকাজে নামে দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনি। সরকারি ভাবে ডাকা না হলেও, উদ্ধার কাজে হাত লাগায় সেনা ও নৌবাহিনীর জওয়ানরাও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, এ দিন বিকালে সেতুর মাঝের অংশ ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। সেতুর উপরে গাড়িগুলি মুখ থুবড়ে পড়ে। ঘটনার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছন কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। পৌঁছন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার-সহ একাধিক পদস্থ কর্তা।

কনস্টেবলের তৎপরতায় এ দিন প্রাণে বাঁচলেন হৃদরোগে আক্রান্ত ওই যুবক

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন দার্জিলিঙে। সেখান থেকেই তিনি উদ্ধারকাজ এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এই ঘটনার তদন্ত হবে বলেও জানিয়ে দেন তিনি। দোষীদের কড়া শাস্তি হবে বলেও মন্তব্য করেন মমতা। আগামিকালই তিনি সহরে ফিরে আসবেন বলে জানিয়েছেন।

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।