স্বাস্থ্য বিপ্লব রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়াল গোটা দেশে, মিলল না সমাধান সূত্র

স্বাস্থ্য বিপ্লবস্বাস্থ্য বিপ্লব: আন্দোকারীদের মধ্যে এনআরএসে অপর্ণা সেন।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: স্বাস্থ্য বিপ্লব রাজ্যের গণ্ডি পেরিয়ে এ বার গোটা দেশেই ছড়িয়ে পড়ল। কলকাতায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে আগামী সোমবার দেশ জুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। একমাত্র জরুরি পরিষেবা বিভাগ ছাড়া ওই দিন হাসপাতালগুলিতে বাকি সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আগামিকাল শনিবার কাল ও পরশু দেশ জুড়ে চলবে প্রতিবাদ কর্মসূচিও। শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠন জানিয়েছে, শনিবার রাজধানীর ১৪টি সরকারি হাসপাতালে ধর্মঘট পালিত হবে।

এ দিন দিল্লি, গুয়াহাটি, মুম্বই, তিরুঅনন্তপুরম, হৃষীকেশের মতো গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকেরা কলকাতার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নামেন। কর্মবিরতিও পালন করেন তাঁরা অনেক জায়গায়। দিল্লিতে এইমস ও সফরদরজঙ্গ হাসপাতালে এ দিন অধিকাংশ চিকিৎসকই কাজে যোগ দেননি। তবে জরুরি বিভাগ খোলা ছিল। প্রায় দু’হাজার চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মী এ দিনের ধর্নায় যোগ দিয়েছিলেন। মহারাষ্ট্রে এ দিন ২৬টি সরকারি হাসপাতালের প্রায় সাড়ে চার হাজার চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি। তেলঙ্গানায় বিক্ষোভ অবস্থান বসেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কাজ বন্ধ ছিল ভোপাল ও হৃষীকেশের এইমসে।

স্বাস্থ্য বিপ্লব যখন গোটা দেশের চিকিৎসা পরিষেবা বিঘ্নিত করে তুলছে, তখন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন চিঠি পাঠালেন।। এ দিন সন্ধ্যায় মমতাকে চিঠি লিখে দ্রুত ওই সমস্যার যথাযথ সমাধান খোঁজার কথা বলে‌ন হর্ষ বর্ধন। কলকাতার ঘটনার প্রতিবাদে গোটা দেশে চিকিৎসকেরা যে ভাবে কর্মবিরতি বা দেশ জুড়ে আগামী সোমবার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তাতে বিব্রত কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। ওই চিঠিতে মমতাকে ব্যক্তিগত ভাবে এগিয়ে এসে হস্তক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছেন হর্ষ বর্ধন— এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের সঙ্গে সংবেদনশীল হয়ে আলোচনা বসতে হবে। তাঁদের সমস্যা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। তবেই ওই অচলাবস্থা কাটতে পারে।

স্বাস্থ্য বিপ্লব

স্বাস্থ্য বিপ্লব: মমতাকে লেখা হর্ষ বর্ধনের সেই চিঠি

যে কলকাতাকে থেকে স্বাস্থ্য বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেশে, সেখানেও আজ ঘটনার ঘনঘটা। এ দিন সকালেই বিপ্লবের সেই সূত্রস্থল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছ‌ন অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। সঙ্গে ছিলে‌ন কৌশিক সেনের মতো নাট্য পরিচালকেরাও। সেখানে আন্দোলনকারীদের সহ্গে কথা বলেন তাঁরা। বিকেলে একটি মিছিল এনআরএস হাসপাতাল তেকে বার হয়। বিকেল সানে চারটেয় বার হওয়া ওই মিছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পৌঁছয় সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ। সেই মিছিলে চিকিৎসকদের সঙ্গেই হাঁটতে দেখা যায় দেখা যায় কলকাতার বিদ্বজ্জনদের। অপর্ণা সেন, অনুপম রায়, বিভাস চক্রবর্তী, সমাজকর্মী তথা চিকিৎসক বিনায়ক সেন এবং কলকাতা শহরের বিভিন্ন পেশার নানান মানুষ ছিলেন ওই মিছিলে।

আরও পড়তে…
এনআরএস-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, বিক্ষোভে অনড় ডাক্তাররা

অন্য দিকে এ দিন সকালেই কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেন প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা। সেই মামলার শুনানিতে আদালত জানায়, অসুস্থ মানুষের বৃহত্তর স্বার্থের কথা মাথায় রেখে চিকিৎসকদের বিরোধ মিটিয়ে নেওয়া উচিত। আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ডাক্তারদের উপরে হামলার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। গোটা ঘটনায় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা নিয়ে একটি পূর্নাঙ্গ রিপোর্ট আগামী ২১ জুনের মদ্যে আদালতের কাছে জমা দেওয়া নির্দেশও দিয়েছে ওই বেঞ্চ।

এ দিন সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রচুর চিকিৎসক ইস্তফার দেন। এনআরএস, এসএসকেএম, আরজি কর, উত্তরবঙ্গ— বাদ যায়নি কোথাও। তবে দিনের শেষে তাদের কারও ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে কি না তা জানা যায়নি। বিভিন্ন হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিপ্লব চলছে বলে পরিষেবা কার্যত সিঁকেয় উঠেছে। কোথাও আউটডোর বন্ধ তো কোথাও এমারজেন্সি। রোগীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতালে। আন্দোলনকারীদের একটাই দাবি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এনআরএসে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তিনি যদিও এ দিন বীজপুরে দলের কর্মীসভায় ব্যস্ত ছিলেন।

তবে কি সমাধানের কোনও রাস্তা আপাতত নেই? সেই সমাধান সূত্র খুঁজতেই শুক্রবার এগিয়ে এলেন রাজ্যের পাঁচ প্রবীণ চিকিৎসক— সুকুমার মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ চৌধুরী, মাখনলাল সাহা, প্লাবন মুখোপাধ্যায় ও অমলেন্দু ঘোষ। এ দিন সন্ধ্যায় তাঁরা নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন। পরে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের শনিবার বিকেলে নবান্নে আসার অনুরোধ করেন তাঁরা। সেই ডাকে যদিও শুক্রবার মাঝরাত পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সাড়া দেননি।

স্বাস্থ্য বিপ্লব

স্বাস্থ্য বিপ্লব: দিল্লির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনের সেই চিঠি।

 

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)