দাড়িভিট কাণ্ডে আগামী বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলা বন্‌ধের ডাক বিজেপির

দাড়িভিট

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দাড়িভিট কাণ্ড নিয়ে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। উত্তর দিনাজপুরের দাড়িভিটে গত বৃহস্পতিবার দুই ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় একের পর এক প্রতিবাদ আন্দোলনে কার্যত বিদ্ধ রাজ্য সরকার। এসএফআইয়ের ছাত্র ধর্মঘট, রাস্তায় নেমে তাদের প্রতিবাদ মিছিল, সিমিএমের প্রতিনিধি দলের দাড়িভিট পরিদর্শন, বিজেপি-আরএসএসের ধর্মঘটের হুঙ্কারের পাশাপাশি জুড়েছে মৃত দুই ছাত্রের দেহ সৎকার না করে মাটিতে পুঁতে রাখার সিদ্ধান্ত। সব মিলিয়ে দাড়িভিট কাণ্ডে শাসক দল এই মুহূর্তে বেশ অস্বস্তিতে।

সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই শনিবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সেই ডাকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ধর্মঘটে সাড়া মিলেছে। তারা বেশ কিছু জায়গায় পথে নেমেও আন্দোলন করে। দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে পথে নেমে তারা দোষীদের শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পদত্যাগের স্লোগানও তোলে।

অন্য দিকে, এ দিন দাড়িভিটের সেই স্কুল-সহ গোটা গ্রাম পরিদর্শনে গিয়েছিল সিপিএমের এক প্রতিনিধি দল। ওই দলে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। দাড়িভিট কাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সুজন বলেন, ‘‘এখনও স্পষ্ট নয় গুলি কে চালিয়েছিল। অথচ তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুলিশ সুপার বলে বসলেন, তাঁরা কোনও গুলি চালাননি। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে যে ভাবে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছেন পুলিশ সুপার, তাতে তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ তদন্ত সম্ভব নয়। এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন।’’

গত বৃহস্পতিবার দাড়িভিট উচ্চবিদ্যালয়ের ওই ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন, বিজেপি-আরএসএস, যারাই ওই ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের চরম শাস্তি হবে। এ দিন সেই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে আরএসএস। ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পার্থবাবুকে ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ‌নেওয়া হবে। আরএসএসের এক শীর্ষ নেতার অভিযোগ, ‘‘কী ভাবে কোনও কিছু না জেনে এমন মন্তব্য করলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়? তাঁকে অবিলম্বে ক্ষমা চাইতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি তিনি ক্ষমা না চান, তা হলে আইনের পথে যাব। পাশাপাশি রাজ্য জুড়ে বৃহৎ আন্দোলনেও যাওয়া হবে।’’

আরএসএস-এর পাশাপাশি বিজেপিও এ দিন দাড়িভিট কাণ্ডে রাজ্য সরকারকে হুমকি দিয়েছে। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে তারা। পাশাপাশি বিজেপির তরফে দাবি তোলা হয়েছে, ঘটনায় ‘বিজেপি-আরএসএস যোগ রয়েছে’ এই মন্তব্য নিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একইসঙ্গে দাড়িভিট কাণ্ডের জন্য সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে হবে। এ দিন দাড়িভিট কাণ্ডের প্রতিবাদে আগামী বুধবার  রাজ্য জুড়ে বন্‌ধের কথা ঘোষণা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় আরও এক গুলিবিদ্ধ ছাত্রের মৃত্যু

তবে, এ সবের মধ্যেই সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন দাড়িভিটবাসী। গত বৃহস্পতিবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত দুই ছাত্র রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণের দেহ এ দিন ময়নাতদন্তের পর তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই দুই ছাত্রের দেহ দাহ না করে দাড়িভিটবাসী তা মাটিতে পুঁতে রেখেছেন। তাঁদের দাবি, পরে দেহ তদন্তের কাজে আসতে পারে। পাশাপাশি তাঁরা এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন। মৃত রাজেশ এবং তাপসের পরিবারের তরফেও সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে আজ। এমনকি ওই দু’টি পরিবারই অভিযোগ করেছে, দুই ছাত্রের মৃত্যু পুলিশের গুলিতেই হয়েছে।

যদিও শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই দিনের ঘটনায় পুলিশ কোনও ভাবেই গুলি চালায়নি। তা হলে গুলি চালিয়েছিল কে? সেই প্রশ্নের কোনও জবাব যদিও দেননি পুলিশ সুপার। এ দিন সুজনবাবু অভিযোগ করেছেন, ‘‘পুলিশ সুপারকে এমনটা বলতে নবান্ন থেকেই নির্দেশ দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’’