জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: স্ট্র্যান্ড রোডের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ আগুন লাগল সোমবার সন্ধ্যায়। সেই আগুন নেভাতে গিয়ে রাত পর্যন্ত ৯ জন মারা যাওয়ার খবর মিলেছে। ঘটনাস্থলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু-সহ স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে দমকল ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা। মৃতদের মধ্যে ৪ জন দমকলকর্মী, ১ জন রেল সুরক্ষা বাহিনীর কর্মী, ১ জন পুলিশকর্মী রয়েছেন। বাকি তিন জনের দেহ উদ্ধার হলেও এখনও তাঁদের পরিচয় জানা যায়নি।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ স্ট্র্যান্ড রোডের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। ওই ভবনের ১৩ তলায় প্রথমে আগুন লাগার খবর মিললেও মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে ১২ তলায়। সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকলের ১০টি ইঞ্জিন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। আগুনের প্রকোপ একটু কমতেই লিফ্টে করে কয়েক জন দমকলকর্মী ১৩ তলায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। পরে তাঁদের দেহই উদ্ধার হয় লিফ্ট থেকে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, লিফ্ট বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সকলেরই মৃত্যু ও ভাবে হয়েছে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সঙ্গে পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথাও বলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘মৃত্যুর বিকল্প কিছু হয় না। তবু পরিবারগুলোর কথা মাথায় রেখে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এবং পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়া হবে। এটা রেলের ভবন। অনেক পুরনো। ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দমকলের কাছে শুনেছি, তাঁরা লিফট দিয়ে উঠতে গিয়েছিলেন। সেই লিফটই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় এবং তাঁরা ঝলসে মারা যান।’’
প্রায় ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ন্ত্রণে আসে। মমতা পৌঁছন রাত সওয়া ১১টা নাগাদ। তিনি বলেন, ‘‘আগুন লাগলে লিফ্ট ব্যবহার করতে নেই। হয়তো ওঁরা খুব দক্ষ ছিলেন। তাড়াহুড়োর জন্য উঠেছিলেন। লিফ্ট বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ওঁদের।” দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১২ তলায় একটি লিফ্টের মধ্যে পূর্ব রেলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল এবং তাঁর রক্ষী সঞ্জয় সাহানির দেহ পাওয়া যায়। অন্য লিফ্টে মিলেছে ৪ দমকলকর্মী-সহ ৭ জনের দেহ।
একের পর এক দেহ উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই দেহগুলির ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা। মুখ্যমন্ত্রীও ঘটনাস্থল থেকে পৌঁছন এসএসকেএমে। তাঁর সঙ্গেই অ্যাম্বুল্যান্সে পৌঁছয় ৩টি দেহ। পরে সব মিলিয়ে ৯টি দেহই ওই হাসপাতালে পৌঁছয়। ময়নাতদন্তের পর ওই দেহ তুলে দেওয়া হবে তাঁদের পরিজনদের হাতে।
নিউ কয়লাঘাটে রেলের ওই ভবনে রয়েছে সার্ভার। আগুন লাগার পর ওই ভবনের সমস্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ফলে সার্ভার বসে যায় এবং রেলের টিকিট সংরক্ষণের কাজ সম্পূর্ণ ভাবে ব্যাহত হয়। তবে খুব দ্রুততার সঙ্গে ওই পরিষেবা ফিরিয়ে আনা হবে বলে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কমল দেওদাস জানিয়েছেন।
(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)