সমান সম্মান-এর জায়গায় সব সময় খালি অসমান একটা ব্যবহার পেলাম ওখানে: তিস্তা

‘সমান সম্মান’‘সমান সম্মান’

‘সমান সম্মান’ জি বাংলা আয়োজিত অনুষ্ঠান। ফিরকি নামের একটি সিরিয়াল উপলক্ষেই গত শুক্রবার ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। হিজড়ে সম্প্রদায়ের মানুষদের কাহিনি নিয়েই ওই সিরিয়াল। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ট্রান্সওম্যান তিস্তা দাসকে। কিন্তু তিস্তার অভিযোগ, ওখানে গিয়ে তাঁরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। ‘সমান সম্মান’-এর জায়গায় সব সময় খালি অসমান একটা ব্যবহার পেয়েছেন ওখানে। পরে তাঁরা এই সব অভিযোগ নিয়ে একটি ফেসবুক লাইভও করেন। ঠিক কী হয়েছিল সে দিন, ফেসবুক লাইভের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতার কথা জাস্ট দুনিয়ার পাঠকদের সঙ্গে শেয়ার করলেন তিস্তা দাস


আমি তখন গুয়াহাটিতে। আমার শ্বশুরমশাই খুব অসুস্থ ছিলেন। আমরা দেখতে গিয়েছিলাম। সেই সময় কলকাতা থেকে এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করেন। জি বাংলা থেকে। তাঁর নাম নীলিমেশ। গত বৃহস্পতিবার তিনি ফোন করে আমাকে জানান, ফিরকি নামে জি বাংলায় একটা সিরিয়াল আসছে। সেই উপলক্ষে ওঁদের একটা ইভেন্ট হচ্ছে ‘সমান সম্মান’ বলে। ‘ফিরকি’কে নিয়েই। তো ওঁরা ‘গেস্ট’ হিসেবে চাইছেন আমাদের।

আমি আগেই সিরিয়ালের ট্রেলারটা দেখেছিলাম। আলোচনাও শুনেছিলাম। হিজড়ে সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে ওই সিরিয়াল। ওদের অনুষ্ঠানটা ছিল শুক্রবার। ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে। তো নীলিমেশ ফোনে আমন্ত্রণ জানানোর পর আমি বলি, আমাকে একটা মেল করতে হবে। আমি তখন কলকাতায় থাকব কি না বলতে পারছি না। যদি আমি কলকাতায় থাকি, তা হলে নিশ্চিত ভাবে যাওয়ার চেষ্টা করব।


এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়তে ক্লিক করুন

তো নীলিমেশ আর মেলটা করেননি। বরং তিনি আমাকে বললেন যে, আপনাকে আমন্ত্রণপত্র এবং অনুষ্ঠানের কার্ডটা হোয়াটসঅ্যাপ করে দিচ্ছি। এর পর হোয়াটসঅ্যাপে উনি ডিটেলটা পাঠিয়ে দেন। সকাল সাড়ে ১০টায় ওঁদের অনুষ্ঠানটা ছিল। আমন্ত্রণপত্র ও কার্ড পেয়ে আমি বললাম যে, ঠিক আছে। যদি আমি কলকাতায় ওই সময়ের মধ্যে পৌঁছতে পারি তা হলে যাব। কি‌ন্তু ঘটনাচক্রে আমি ওই দিন সাড়ে ১০টায় কলকাতায় পৌঁছতে পারিনি। শুক্রবারই আমি পৌঁছেছিলাম। কিন্তু নামতে নামতে আমাদের প্রায় ১২টা বেজে গিয়েছিল।

যাতায়াতের খরচটা রি-ইমবার্স করে দেওয়া হবে। তখনও আমি জানতাম না যে, রি-ইমবার্সমেন্টটা শুধু যাওয়ার জন্যই হবে। ওখানে যাওয়ার পর সেটা জানতে পারি।

বিমানবন্দরে নেমেই ওঁদের ওখানে সরাসরি চলে গিয়েছিলাম। তার আগে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনারা কি আমাদের যাতায়াতের খরচটা দেবেন? তো আমাদের বলা হয়, কথা বলে জানানো হবে। কারণ, ওঁরা নাকি কাউকেই যাতায়াতের খরচ দিচ্ছেন না। আমি তখন বলি, আমার পক্ষে সে ক্ষেত্রে যাওয়াটা একটু সমস্যার। ওঁরা তখন বলেন, আপনারা চলে আসুন। যাতায়াতের খরচটা রি-ইমবার্স করে দেওয়া হবে। তখনও আমি জানতাম না যে, রি-ইমবার্সমেন্টটা শুধু যাওয়ার জন্যই হবে। ওখানে যাওয়ার পর সেটা জানতে পারি।

তো সেটা নিয়েও আমি কোনও রকম প্রশ্ন করিনি। কিন্তু যেটা সব থেকে খারাপ ব্যাপার, সেটা হচ্ছে যে, আমি ওদেরকে আগে থেকেই বলেছিলাম, ওই অনুষ্ঠানে অর্থাৎ ‘সমান সম্মান’-এ আমি কথা বলতে চাই। শুধু গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স নয়, কিছু কথাও বলতে চাই অ্যাক্টিভিজমের জায়গা থেকে। নীলিমেশ কিন্তু প্রথমে আমাকে এক বারের জন্যও বলেননি যে, কথা বলতে দেওয়া হবে না। সেটা সবটাই আমি জানতে পারলাম অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে।

আমি ওদেরকে আগে থেকেই বলেছিলাম, ওই অনুষ্ঠানে অর্থাৎ ‘সমান সম্মান’-এ আমি কথা বলতে চাই। শুধু গেস্ট অ্যাপিয়ারেন্স নয়, কিছু কথাও বলতে চাই অ্যাক্টিভিজমের জায়গা থেকে। নীলিমেশ কিন্তু প্রথমে আমাকে এক বারের জন্যও বলেননি যে, কথা বলতে দেওয়া হবে না।

ওখানে পৌঁছে আমি নীলিমেশকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমার স্টেজ কখন? তো উনি আমাকে বললেন, এখন তো ‘ফিরকি’র টিমের সঙ্গে টক শো হবে। এই টক শো-টা হয়ে গেলে তার পর আপনাদের মঞ্চে তোলা হবে। তো আমি তো সেই বিশ্বাস নিয়েই বসে ছিলাম। তার পর দেখলাম, সেটাও তোলা হল না। মিডিয়া সব সেলিব্রিটিদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বাকি সেলিব্রিটি সব যাঁরা ছিলেন সিরিয়ালের তাঁদের ইন্টারভিউ এবং কথাবার্তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)

আমার সঙ্গে আরও দু’জন বক্তা ছিলেন। তাঁরাও ট্রান্সওম্যান। তাঁদেরকেও বক্তব্য রাখার কথা বলা হয়েছিল একই ভাবে। শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকেও কিছু বলতে দেওয়া হয়নি। এই পরিকল্পনাটা হঠাৎ কেন ওদের বদলে গেল, অনুষ্ঠানের দিন একেবারে শেষ মুহূর্তে, সেটা আমরা কিছু জানি না। নীলিমেশ মানে আমাদের ওই কোঅর্ডিনেটর বললেন, না, আসলে ম্যানেজমেন্ট থেকে কিছু রদবদল করেছে। ম্যানেজমেন্ট থেকে বলা হয়েছে, এখন এই মঞ্চে কিছু বলা যাবে না।

জি বাংলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলব। সেটা তো কিছুতেই ওঁরা বলতে দিলেন না। তখন বাধ্য হয়ে আমরা বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসে ফেসবুকে লাইভটা করেছিলাম।

আমরা সত্যিই চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করি। তার পর তো এটা নিয়ে তো খুব বাক্‌বিতণ্ডা-তর্কাতর্কি হল। সে সব হওয়ার পর নীলিমেশ আমাদের কাছে ক্ষমা চাইলেন। আমরা বললাম যে, ক্ষমা আপনি চাইছেন কেন? আপনি তো কোঅর্ডিনেটর। আপনি তো কর্তৃপক্ষ নন। জি বাংলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলব। সেটা তো কিছুতেই ওঁরা বলতে দিলেন না। তখন বাধ্য হয়ে আমরা বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসে ফেসবুকে লাইভটা করেছিলাম।

ফোটোসেশনের সময় যখন বলা হল যে, সবাই মিলে একসঙ্গে ফোটোসেশন হবে, তখন দেখলাম, সেলিব্রিটিদের মানে ওখানকার আর্টিস্ট যাঁরা তাঁদের আলাদা ফোটোশেসন, আর ট্রান্সপার্সনদের আলাদা ফোটোশেসন। কারও সঙ্গে কাউকে মেলাচ্ছেন না ওঁরা। নানা রকম অসাম্য ছিল।

ওখানে গিয়ে দেখলাম নানা রকম বৈষম্য। আমরা ‘সমান সম্মান’-এর জায়গায় সব সময় খালি অসমান একটা ব্যবহার পেলাম ওখানে। আমাদের বসার জায়গাগুলো আলাদা। সেলিব্রিটিদের বসার জায়গা আলাদা। ফোটোসেশনের সময় যখন বলা হল যে, সবাই মিলে একসঙ্গে ফোটোসেশন হবে, তখন দেখলাম, সেলিব্রিটিদের মানে ওখানকার আর্টিস্ট যাঁরা তাঁদের আলাদা ফোটোশেসন, আর ট্রান্সপার্সনদের আলাদা ফোটোশেসন। কারও সঙ্গে কাউকে মেলাচ্ছেন না ওঁরা। নানা রকম অসাম্য ছিল।

তার পরেই আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে, বেরিয়ে আসব। বেরিয়েও আসি। আমরা চেষ্টা করেছিলাম, ওই অনুষ্ঠানস্থল থেকেই ফেসবুক লাইভটা করব। কিন্তু, সেটা ওঁরা কিছুতেই করতে দিলেন না। তার পর আমরা গাড়িতে বসেই লাইভটা করলাম। আমাদের আর এক যে বান্ধবী এসেছিল, বক্তা হিসেবে, তাঁর গাড়িতে বসে লাইভটা করি।

সে দিনের সেই ফেসবুক লাইভ…