করোনাতঙ্ক কেড়ে নিয়েছে মনুষ্যত্ব, মরছে মানুষ, দেখছে মানুষ

সরকারি কোভিড নির্দেশিকায় অনলাইন শপিং

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: করোনাতঙ্ক… এ এক আতঙ্কের নাম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃত্যুর খবর প্রতিদিন আসছে কিন্তু কতজনের মৃত্যু হচ্ছে এই আতঙ্কের কারণে তা হিসেব করে দেখেছেন কি? করোনাতঙ্ক যেভাবে প্রতিদিন মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়ার নজির রাখছে তাতে করোনাভাইরাসকে ছাঁপিয়ে যাচ্ছে তার আতঙ্ক। পর পর এমন ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সেই সব কিছুকে। সাধারণ মানুষ থেকে হাসপাতাল করোনাতঙ্কে চোখ বন্ধ করেছে মনুষ্যত্ব। এই মানুষরাই লকডাউন উঠলে ভিড় জমাচ্ছেন বাজারে।

রবিবার বাংলার বুকে এমনই দুটো জ্বলন্ত নজির তৈরি হল। একটি ঘটনা খোদ কলকাতার বুকেই। উত্তর কলকাতার শ্যামপুকুর থানার বৃন্দাবন পাল লেনের। সেখানে ভাড়া থাকতেন একা বৃদ্ধা ছায়া চট্টোপাধ্যায়। একই বাড়িতে থাকতেন তাঁর দেওরও।

৭০ বছরের বৃদ্ধা অসুস্থই ছি‌লেন। তাঁর পায়ে সংক্রমণ ছিল। এদিন সকালে হঠাৎই তাঁর দেওরই প্রথম দেখতে পান তিনি ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। পাড়ার লোককে খবর দেন তিনি। পাড়ার লোক খবর দেন পুলিশে। এই টানা-পড়েনে কেটে গিয়েছে অনেক ঘণ্টা। কেউ চেষ্টাও করেননি এটা জানার সেই বৃদ্ধার আদৌ কী পরিস্থিতি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তো দূরঅস্ত।

সকলেই ভাবছিলেন যদি তাঁর করোনা হয়ে থাকে। পুলিশ যখন পৌঁছন ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে বৃদ্ধার। কে জানে ওভাবে কতক্ষণ বেঁচে ছিলেন তিনি। কতক্ষণ তিনি আশায় ছিলেন কেউ তাঁকে এসে উদ্ধার করবে। ভয়, করোনাতঙ্ক তাঁর সেই আশা পূরণ করতে দেয়নি।

ইতিমধ্যে রবিবার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘটনা বনগাঁর। শনিবার ৬৮ বছরের মাধব নারায়ন দত্ত নামে এক ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাঁকে স্থানীয় বনগাঁ সাবডিভিশনাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বিকেল পাঁচটা নাগাদ কোভিড আক্রান্তদের ওয়ার্ডে। কিন্তু তাঁর শরীর বেশি খারাপ হওয়ায় তাঁকে রাত আটটা নাগাদ কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়।

আসল লড়াই শুরু হয় তখন। ব্যবস্থা হয় অ্যাম্বুলেন্সেরও। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে একা একা ওঠার ক্ষমতা ছিল না সেই ব্যাক্তির। সঙ্গে ছিলেন শুধু তাঁর স্ত্রী। তিনি সাহায্য চাইতে থাকেন কিন্তু কেই এগিয়ে আসেনি। ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অনেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন চারদিকে। কেউ একজন ভিডিও করছিলেন কোথাও থেকে। এমনকী সেই ভিডিওতে এমনও দেখা গিয়েছে, একজন মানুষ পুরো পিপিই পোষাক পড়ে  কাছেই রয়েছেন। হয়তো তিনি অ্যাম্বুলেন্সের চালক।

সেই ভিডিওতে অসুস্থ ভদ্রলোকের স্ত্রীকে বলতে শোনাও যায়, ‘‘দাদা আপনি পিপিই পোষাক পরে রয়েছেন, একটু সাহায্য করুন।’’ কেউ এগিয়ে আসেননি। ভদ্রমহিলাকে দেখা যায় তাঁর স্বামীকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলার চেষ্টা করে যেতে কিন্তু তিন ব্যর্থ হন। আধঘণ্টা প্রায় চলে এই চেষ্টা এবং শেষ পর্যন্ত সেখানেই মৃত্যু হয় সেই ভদ্রলোকের।

এর আগেও, এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে মৃত্যু হয়েছে কারও। এদিন এমনও ঘটনা ঘটেছে, শ্বাসকষ্টে ছটফট করা রোগীকে একঘণ্টার উপর ফেলে রাখা হয়েছে হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে ভর্তি নেবে বলে। সামান্য অক্সিজেন টুকুও দেওয়া হয়নি। করোনাতঙ্ক এ ভাবেই গ্রাস করেছে সমাজকে। মানুষ যে এখন আক্রান্ত আতঙ্কে। যে ভাইরাসের ভয়াবহতা আরও ভয়ঙ্কর। মানুষ এখানে নিরুপায়।

ব্যাতিক্রমও কী নেই, অবশ্যই আছে আর সেটাই আশা বেঁচে থাকার।

(করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)