মেডিক্যালে অনশন ১৩ দিনে পড়ল, কর্তৃপক্ষের হুঁশ নেই, আন্দোলনকারীদের পাশে বিদ্বজ্জনেরা

মেডিক্যালে অনশনমেডিক্যালে অনশন। ছবি ফেসবুকের সৌজন্যে।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মেডিক্যালে অনশন ১৩ দিনে পড়ল, অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের দাবি মেনে নেওয়ার পথে কোনও ভাবেই হাঁটলেন না। বরং রবিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বিবৃতি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ‘প্রতীকী’ ওই অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ইতিমধ্যেই অনশনরত কয়েক জন ছাত্রের স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে। কিন্তু, কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড়। অনড় ডাক্তারি পড়ুয়ারাও।

প্রায় দু’সপ্তাহ হয়ে গেল। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমবিবিএস পড়ুয়াদের একটা অংশ ওই ক্যাম্পাসেই আমরণ অনসনে বসেছেন। তাঁদের দাবি, পড়ুয়াদের হস্টেল বন্টনের ক্ষেত্রে একটা সুষ্ঠু পদ্ধতি মানা হোক। মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা যে হস্টেল‌ে থাকেন, সেটা রীতিমতো থাকার অযোগ্য। শুধু তাই নয়, হস্টেলের ওই ঘরগুলোতে সকলের থাকার সঙ্কুলান হয় না।

নতুন একটি হস্টেল তৈরি হয়েছে। সেখানে সকলকে থাকতে দেওয়ার দাবি নিয়ে এই পড়ুয়ারা প্রথমে অধক্ষের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, নতুন ওই হস্টেল কেবলমাত্র প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের জন্য। এর পরেই হস্টেল বন্টনের সুষ্ঠু ব্যবস্থার দাবিতে পড়ুয়াদের একাংশ আমরণ অনশনে বসেন। সেই অনশন রবিবার ১৩ দিনে পড়ল।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ছাত্র বিক্ষোভ অব্যহত

ইতিমধ্যেই আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবির পাশে দাঁড়িয়েছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। এ দিন মেডিক্যাল চত্বরে হাজির হয়ে তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন গায়ক কবীর সুমন। তিনি প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদও বটে। এসেছিলেন শিলাজিৎ, উপল, পল্লব কীর্তনিয়া-সহ অনেক গায়কই। রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপিত, বিভাস চক্রবর্তীর মতো মানুষও আন্দোলনকারীদের সপক্ষে মুখ কুলেছেন। তাঁদের পাশে থাকার কথা বলেছেন অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ও। কিন্তু, সরকারের তরফে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি কেউই। মুখে কুলুপ এঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি শিক্ষামন্ত্রীকেও এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে শোনা যায়নি। মেডিক্যালে যাওয়া তো অনেক দূরের বিষয়।

গত ১৩ দিনে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তিন বার বদল হয়েছে। প্রথম যখন পড়ুয়ারা আন্দোলনে নামেন, তখন দায়িত্বে ছিলেন উচ্ছ্বল ভদ্র। শারীরীক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি ছুটিতে যান। এর পর দায়িত্বে আসেন রামানুজ সিন্‌হা। তিনি পদত্যাগ করেন গত সপ্তাহেই। এর পর রবিবার কার্যনির্বাহী অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেন অশোক ভদ্র। কিন্তু, অধ্যক্ষ বদল হলেও পড়ুয়াদের দাবি যে তিমিরে ছিল, রয়েছে সেখানেই।

পড়ুয়াদের দাবি, নতুন ১১ তলা হস্টেলে প্রায় ৮০০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার সংখ্যা মাত্র ২৫০। বাকি থাকার জায়গায় সিনিয়রদের থাকার ব্যবস্থা করা হোক। এটাই তাদের দাবি। এবং সেই থাকার ব্যবস্থা করার জন্য নতুন করে কাউন্সেলিং-এর দাবিও তোলেন তাঁরা। কিন্তু, কলেজ কর্তৃপক্ষের মত, ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র নিয়ম মানলে ওই নতুন হস্টেলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ছাড়া আর কাউকেই রাখা যাবে না। র‍্যাগিং ঠেকাতে নাকি এমসিআই-এর ওই ব্যবস্থা। কিন্তু, পড়ুয়ারা তা মানতে নারাজ। পুরনো হস্টেলের ছাদ থেকে জল পড়ে। জায়গাও অল্প। তাই দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষের অনেক পড়ুয়াই বাইরে বাড়ি ভাড়া করে থাকে।

গত ৫ জুলাই উচ্ছ্বল ভদ্রকে প্রথম ঘেরাও করে রেখেছিলেন পড়ুয়ারা। তার পাঁচ দিন পর ৬ পড়ুয়া অনশনে বসেন। পরে তাঁদের সঙ্গে অনেকেই যোগ দেয়। এই মুহূর্তে অনশনে বসে আছেন ২১ জন।

এ দিন দেবাশিসবাবু এক লিখিত বিবৃতিতে পড়ুয়াদের অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘পুরনো হস্টেলের উন্নতি এবং সারাই করার সমস্ত রকম প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। অনুরোধ করছি সকলেই তাঁদের প্রতীকী অনশন তুলে পড়াশোনায় ফিরে যান। স্বাস্থ্য পরিষেবা যাতে না বিঘ্নিত হয়, সেটাও আমাদের দেখা উচিত।’