বিজেপির নবান্ন অভিযান ছত্রভঙ্গ, চলল কাঁদানে গ্যাস-লাঠি-জলকামান

বিজেপির নবান্ন অভিযান ছত্রভঙ্গ

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: বিজেপির নবান্ন অভিযান ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস-লাঠি-জলকামান চালাতে হল পুলিশকে। বৃহস্পতিবারের ওই অভিযানে পুলিশি হস্তক্ষেপের কারণে তাদের অনেক কর্মী-সমর্থক গুরুতর জখম হয়েছেন বলে বিজেপির দাবি। পুলিশের তরফে এ দিন বিকেল পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করা না হলেও, ওই অভিযান চলাকালীন একাধিক বোমা এবং আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পরে বিজেপির দলের যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি তেজস্বী সূর্য জানান, তাঁদের ১ হাজার জন কার্যকর্তা আহত হয়েছেন। পুলিশ গ্রেফতার করেছে প্রায় ৫০০ জনকে।

যুব মোর্চার ডাকে এ দিনের অভিযানে বিভিন্ন দিক থেকে একাধিক মিছিল একত্রিত হয়ে নবান্নে পৌঁছবে বলে বিজেপির পরিকল্পনা ছিল। দুপুর ১২টা থেকে ওই মিছিল শুরুর করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি আটকে দেওয়া বলে তাঁদের পৌঁছতে দেরি হয়েছে। ফলে মিছিল শুরু করতে কিছুটা দেরি হয়। ঘুরপথে ওই কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলে যোগ দেন। কিন্তু তাঁরা যাতে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর দফতরের কাছে ঘেঁষতে না পারেন, সে জন্য নবান্নের চার পাশে ত্রিস্তরীয় বলয় গড়ে তোলা হয়। হাওড়া এবং কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাতেও ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। এক্সাইড মোড় থেকে সাঁতরাগাছির দিকের সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি হাওড়া ময়দান ও সাঁতরাগাছিতেও রাস্তা বন্ধ রাখে পুলিশ।

প্রায় চার হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তার কারণে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালায় পুলিশ। গতকাল রাতেই রাস্তার ধারের ইট-পাথর সরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের তরফে। পুলিশের পুরনো অভিজ্ঞতা, মিছিল থেকে রাস্তার ধারের এই সব ইট-পাথরই তাদের লক্ষ্য করে ছোড়া হয়। সে কারণেই ও সব সরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দিন তার থেকে রেহাই মেলেনি বলেই দাবি পুলিশের। তাদের লক্ষ্য করে একাধিক জায়গায় ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের দাবি, হাওড়া ময়দানের কাছে বিজেপির এক কর্মীর কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার হয়েছে।

সাদা পাঞ্জাবিতে তেজস্বী সূর্য। বেঙ্গালুরু দক্ষিণের বিজেপি সাংসদ তথা যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি।

কিন্তু বিজেপির দাবি, পুলিশ কোনও প্ররোচনা ছাড়াই তাদের কর্মী-সমর্থক-নেতানেত্রীদের উপর আক্রমণ চালিয়েছে। কাঁদানে গ্যাস-জলকামানের পাশাপাশি বেধড়ক লাঠিচার্জ করেছে। এমনকি কোথাও কোথাও জলকামানের জলের সঙ্গে কোনও রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ছোড়া হয়েছে বলেও তাদের অভিযোগ। রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় জলকামানের আঘাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সাঁতরাগাছিতে রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আহত হয়েছেন জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো।

ডানকুনিতে বিজেপি সমর্থকদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। ইএম বাইপাসে বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। হাওড়া ব্রিজের পাশাপাশি দ্বিতীয় হুগলি সেতুও বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

এ দিন মুরলীধর সেন রোডে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে এই অভিযানে অংশ নেওয়া তেজস্বী সূর্য বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পেয়ে গিয়েছেন। সে কারণেই দু’দিন ধরে নবান্ন বন্ধ রেখে দিয়েছেন। আমি অবাক হয়েছি, হাওড়া ব্রিজ বন্ধ করে রেখেছে! আমাদের অনেক কার্যকর্তা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পুলিশ বেধড়ক লাঠি চালিয়েছে। জলকামানের মধ্যে রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও জলকামানের জলে কোনও রং মেশানো হয় নমা। এখানে জলের রং নীল ছিল। কোনও রাসায়নিক মেশানো হয়েছে। আমার এটা প্রথম আন্দোলন ছিল। এই আন্দোলন চলবে।’’

পরে এ দিন বিকেলে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আগে থেকেই বিজেপির যুব মোর্চাকে অতিমারি পরিস্থিতিতে নিয়ম মেনে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু বিজেপির সেই মিছিল ঘিরে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। ফলে যথেষ্ট সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। মিছিল থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘অনেক পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত কলকাতা এবং হাওড়া মিলিয়ে ১১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।’’ তাঁদের মধ্যে কাদের ছাড়া হবে, কাদের গ্রেফতার করা হবে, তা পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন আলাপন।

জলকামানের জলের রং কেন নীল ছিল, এ দিন তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ওটা হোলির রং ছিল।’’ কেন? আলাপনের ব্যাখ্যা, গোটা পৃথিবী জুড়েই এই ব্যবস্থা চালু আছে। জলকামারে জলে রং থাকার ফলে, যাদের গায়ে জল পড়ল, তদন্তের প্রয়োজনে পরে তাদের দরকার হলে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।

(বাংলার আরও খবর জানতে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)