দাড়িভিট কাণ্ডে ওই গ্রামে দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ, গ্রেফতার বিজেপি নেতা

দাড়িভিটদাড়িভিটে বিজেপির প্রতিনিধি দল। ছবি রাজ্য বিজেপির টুইটার থেকে নেওয়া।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: দাড়িভিট রবিবারও রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেল। পাশাপাশি দাড়িভিট নিজেও উত্তপ্ত থাকল দিনভর।

এ দিন সকালে যেমন কলকাতা থেকে বিজেপি-র এক প্রতিনিধি দল পৌঁছেছিল ওই গ্রামে, তেমনই দাড়িভিট কাণ্ডে মৃত দুই ছাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক এবং রাজ্যের এক মন্ত্রী। পাশাপাশি, দাড়িভিট হাইস্কুলের প্রাক্তন ওই দুই ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি আগামী বুধবার যে বাংলা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে, তা ব্যর্থ করতে এ দিন তৃণমূল ভবনে বৈঠক করলেন দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব।আর দিনের শেষে দাড়িভিট কাণ্ড নিয়ে ওই গ্রামে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করার অভিযোগে গ্রেফতার হতে হল উত্তরদিনাজপুরের জেলা বিজেপি সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীকে।

মুকুল রায় এবং প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দাড়িভিট পৌঁছয় বিজেপি-র পাঁচ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। ওই দলে ওঁরা দু’জন ছাড়াও ছিলেন বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার। ছিলেন বিজেপি-র উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তীও। দাড়িভিট কাণ্ডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত ছাত্র রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণের বাড়ি গিয়ে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে ওই প্রতিনিধি দল। ওই দুই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি, তারা যদি আদালতে যেতে চায়, সে ব্যাপারেও সাহায্য করা হবে বলে ওই প্রতিনিধি দল জানায়।

দাড়িভিট কাণ্ড

গ্রেফতার হওয়া শঙ্কর চক্রবর্তী

আগামী বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলা বন্‌ধের ডাক বিজেপির

শঙ্কর চক্রবর্তী সেই সময়ে দাড়িভিট-এ দাঁড়িয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করেন। সেখানকার একটি পথসভায় তিনি বলেন, ‘‘প্রাণ কেড়ে নেওয়ার অধিকার খালি পুলিশের আছে? পুলিশকে পেটানোর অধিকারও আমাদের আছে। আজকের পরে একটা গ্রামে যদি পুলিশ বেআইনি ভাবে কোনও কর্মীকে গ্রেফতার করে, সেই গ্রামবাসীরা পুলিশকে গাছে বেঁধে পেটাবে।’’ এই বক্তব্য পেশের অভিযোগে এ দিন সন্ধ্যায় করণদিঘি থানার পুলিশ প্রথমে শঙ্করবাবুকে আটক করে। পরে তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়।

এ দিন সকালে মৃত দুই ছাত্র রাজেশ সরকার এবং তাপস বর্মণের বাড়িতে গিয়েছিলেন এলাকার বিধায়ক কানহাইয়ালাল অগ্রবার এবং রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি। কিন্তু, ওই দুই চাত্রের পরিবার এবং প্রতিবেশীরা তাঁদের দু’জনকে দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। পরে ওই তৃণমূল-প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পুত্রহারা হওয়ার পর ওই পরিবারের ক্ষোভে ফেটে পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, এই সময়ে ওই দুই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চায় শাসকদল। সে কারণেই তাঁরা গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন ওই বিধায়ক এবং মন্ত্রী।

দাড়িভিট কাণ্ড

দাড়িভিট কাণ্ডে মৃতদের বাড়িতে বিজেপির প্রতিনিধি দল।

আগামী বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর দাড়িভিট কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে ১২ ঘণ্টা বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। সেই বন্‌ধ ব্যর্থ করতে এ দিন কলকাতায় তৃণমূল ভবনে বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই মুহূর্তে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিলানে রয়েছেন। তাই তিনি যে মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন, সেই গোষ্ঠীর সকল সদস্যই এ দিনের বৈঠকে ছিলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, অরূপ রায়, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, জাভেদ খানরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। কী ভাবে বন্‌ধের মোকাবিলা করা হবে, তৃণমূল কী ভাবে ময়দানে নামবে, তা নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। বৈঠক শেষে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বন্‌ধের বিরোধিতার আহ্বান জানান। অবিলম্বে রাজ্য জুড়ে বন্‌ধ বিরোধী প্রচারে নামার নির্দেশও দেওয়া হয় গোটা দলকে।