মৃত আইনজীবীর স্ত্রী অনিন্দিতা গ্রেফতার, ভেঙে পড়লেন পুলিশি জেরার সামনে

মৃত আইনজীবীর স্ত্রী অনিন্দিতামৃত আইনজীবী রজত দে। ছবি তাঁর ফেসবুক থেকে

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: মৃত আইনজীবীর স্ত্রী অনিন্দিতা শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেন। বিভিন্ন রকম পরিস্থিতি সাজিয়ে, পরিকল্পনা করেও শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারলেন না অনিন্দিতা। পুলিশের সামনে স্বীকার করেই নিতে হল তাঁর দোষ। গত তিন ধরে টানা জেরার মুখে অনিন্দিতা শেষ পর্যন্ত মেনে নিলেন তিনিই খুন করেছেন তাঁর স্বামীকে। শনিবারই গভীর রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে বিধাননগর কমিশনারেট।

ঠিক এক সপ্তাহের মধ্যেই রজত  দে খুনের কিনারা করে ফেলল‌ পুলিশ। প্রথমে আত্মহত্যা মনে হলেও বেশ কিছু বয়ান, পাল্টা বয়ান ও রজতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে  নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয় পুলিশ। শুরু হয় তদন্ত, সন্দেহভাজনদের জেরা করতে শুরু করে পুলিশ। সবার আগে কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে অনিন্দিতারই নাম। সঙ্গে তাঁর বাপের বাড়ির পরিবারের আরও কয়েকজনের এই ঘটনার পিছনে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এর পর শুরু হয় টানা জেরা। আর সেই সময় বার বার বয়ান বদল করেন অনিন্দিতা। তাতেই আরও পুলিশের বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে রজতের খুনের পিছনে রয়েছেন তাঁর স্ত্রীরই হাত।

প্রথমে অনিন্দিতা বলেন, ঘটনার রাতে হঠাৎই বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় তিনি উঠে স্বামীর ঘরে আসেন। কারন সেই রাতে তিনি অন্য ঘরে শুয়েছিলেন। দেখেন মেঝেতে বসে রয়েছেন রজত। গায়ে হাত দিতেই পরে যান তিনি। ভয়ে নাকি সেই সময় প্রতিবেশির বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন অনিন্দিতা।

নিউটাউনে আইনজীবীর রহস্যমৃত্যু, এ বার সন্দেহের তীর তাঁর স্ত্রীর দিকে

দ্বিতীয়বার জেরায় অনিন্দিতা হলেন, গলায় চাদর জড়িয়ে আত্মহত্যা করেছেন তাঁর স্বামী। তার প্রমাণ স্বরূপ পুলিশকে একটি চাদরও দেন তিনি। কিন্তু রজতের গলায় সরু দাগ ছিল। যেটা মোটা চাদরের কোনও ভাবেই হতে পারে না। এবং ময়না তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে শ্বাসরোধেই মৃত্যু হয়েছিল রজতের। সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় চোট ছিল যেটা ধ্বস্তাধ্বস্তির ফলে লাগতে পারে।

এর পর ময়দানে নামেন  বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার স্বয়ং জ্ঞনবন্ত সিং। অনিন্দিতাকে তার পর থানায় ডেকে আরও একপ্রস্থ জেরা করা হয়। আর সেখানেই পুলিশের প্রশ্নর মুখে ভেঙে পড়ে‌ন তিনি। মেনে নেন মোবাইল টার্জারের তার গলায় জড়িয়েই রজতকে খুন করেছেন তিনি।

তবে পুলিশের বিশ্বাস এই কাজ তিনি একা করতে পারেন না। অনিন্দিতার পিছনে আরও কেউ রয়েছেন যাঁরা তাঁকে এই খুন করতে সাহায্য করেছেন। অনিন্দিতা যদিও নিজেই খুনের দায় নিয়েছেন। অনুমান দাম্পত্য কলহ এই খুনের পিছনে একটা বড় কারন।

খুনের আধঘণ্টা আগেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চ্যাট করেছিলেন রজত। শেষ মেজেসের আধঘণ্টার মধ্যেই তিনি খুন হন। এবং সেই রাতে বাড়ির পোষ্য ও শিশু পুত্রকে বাপের বাড়িতেও পাঠিয়ে দিয়েছিলেন অনিন্দিতা। এবং রজতকে খুন করার পর নিজের সব চ্যাটও ডিলিট করে দেন রজতের স্ত্রী।

অনিন্দিতার বিরুদ্ধে খুন, তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং ষড়যন্ত্রসহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।