আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েনের মধ্যেই নবান্নে যোগ

আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য

জাস্ট দুনিয়া ব্যুরো: আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য টানাপড়েন চলছেই। এর মধ্যেই নিজের দিনক্ষণ মেনে অবসর নিয়ে ফেলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব। নতুন মুখ্যসচিবের নামও ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি অবসরের পর আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরবর্তী কর্মসূচিও তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যউপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছে রাজ্য সরকার। তাতেও পিছু হটতে নারাজ কেন্দ্র। গত কাল রাতেই পাঠিয়েছে শো-কজ নোটিস। যার উত্তর দিতে হবে তিন দিনের মধ্যে। ইতিমধ্যেই নিয়ম মেনে নিজের নতুন চাকরীতে যোগ দিয়েছেন আলাপন। তাঁকে পর পর টুইট করে প্রভূত আক্রমণ শানিয়েছেন‌ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সব মিলে মঙ্গলবারও আলাপন কাণ্ড জমজমাট। আজ সারাদিন কী কী ঘটল দেখে নেওয়া যাক—

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে মঙ্গলবার বিকেলে দায়িত্ব নিলেন আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল সোমবার তিনি মুখ্যসচিব পদ থেকে চাকরি জীবনে অবসর নিয়েছিলেন। ওই দিনই তাঁকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নে যান আলাপন। সেখানে গিয়ে তিনি নিজের দায়িত্ব বুঝে নেন।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত তিনি নবান্নেই বসবেন। রাজ্যের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ যে ঘরে বসতেন সেখানেই আলাপন বসবেন। আগামী তিন বছরের জন্য আলাপনকে নিজের মুখ্য উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ করছেন মমতা। মাসে আড়াই লাখ টাকা বেতন এবং সঙ্গে অন্যান্য সুযোগসুবিধাও পাবেন তিনি।

এর মধ্যেই ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনে আলাপনকে শো-কজল করল কেন্দ্র সরকার। সোমবার সেই চিঠি পৌঁছয়। তিন দিনের মধ্যে দিতে হবে জবাব। সেই চিঠিতে আলাপনকে মুখ্যসচিব বলেই সম্বোধন করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের (২০০৫) ৫১ ধারা অনুযায়ী  সেই আইন লঙ্ঘনের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা তিন দিনের মধ্যে জানাতে হবে।’’ যা খবর সেই চিঠির জবাব সঠিক সময়েই দেবেন তিনি। গত শুক্রবার কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রী ইয়াস সংক্রান্ত বৈঠকে তাঁর উপস্থিত না থাকাকেই সামনে আনা হয়েছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের প্রধান। সেই সংক্রান্ত তাঁর বৈঠকে না থেকে তিনি আইন ভেঙেছেন।

সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পৌঁছেছিলেন আলাপন কিন্তু তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই বেরিয়ে টান সেখান থেকে। কিন্তু তিনি সেই সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী ছিলেন। সে কারণে সরকারি আধিকারিক হিসেবে তাঁর সেখান থাকা উচিৎ ছিল বলে দাবি করা হয়েছে সেই চিঠিতে।

এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা তথা রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাস্তির দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার একাধিক টুইট করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। একই সঙ্গে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আক্রমণ করেন। মঙ্গলবার শুভেন্দু প্রথম টুইটে লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে অলীক কুনাট্য রঙ্গ চলছে। নিজের অহংবোধ এবং অনুশাসনহীন মুখ্যসচিবকে রক্ষা করতে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভাঙতে উদ্যত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী (বিধায়ক নন)। উনি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর এবং সংবিধানের অসম্মান করছেন।’’

এর পরের টুইটে শুভেন্দু প্রশ্ন করেছেন, ‘‘অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব কী এমন গোপন কথা জানেন যে তাঁর জন্য স্বর্গ-মর্ত্য ছুটে বেড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী (বিধায়ক নন)।’’ তৃতীয় একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘‘করদাতাদের পয়সা লুঠ করা তৃণমূলের নেশা। অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী (বিধায়ক নন)-র উপদেষ্টা এবং তিনি আড়াই লক্ষ টাকা মাসিক বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা ভোগ করবেন। করদাতাদের কষ্টার্জিত পয়সা নিশ্চিত ভাবেই এর থেকে অনেক ভাল উপায়ে খরচ করা যেত।’’

এই নাটকের এখনই শেষ হওয়ার কোনও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। চলছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ। এক মুখ্যসচিবকে নিয়ে রাজ্য, কেন্দ্রের এই টানাপড়েন নজিরবিহীন।

(প্রতিদিন নজর রাখুন জাস্ট দুনিয়ার খবরে)

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)