দীপশিখা বাঁচবেন অন্যের শরীরে

স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই মতো চলছিল পড়াশোনাও। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন দীপশিখা। কিন্তু এত দ্রুত যে তাঁর জীবনের দীপটাই নিভে যাবে কে ভেবেছিল। দীপশিখাও কি জানতেন আনন্দ করতে গিয়ে আর ফেরা হবে না ঘরে। ঘরে হয়তো ফিরেছেন দীপশিখা। কিন্তু নিজেকে বিলিয়ে এসেছেন অন্যদের মধ্যে। হলদিয়ার দুর্গাচকের সামন্ত পরিবারে ফিরেছে অচেনা দীপশিখা। একটা নিথর দেহ।

গত রবিবার হলদিয়া মেলায় গিয়েছিলেন একটি অনুষ্ঠান দেখতে। আশা ভোঁসলের গান খুব ভালবাসতেন। সেটাই শুনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফেরার পথে স্কুটার দুর্ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গে দীপশিখাকে নিয়ে আশা হয়েছিল কলকাতায়। সোমবার সকালে তাঁকে ভর্তি করা হয় এসএসকেএম-এ। কিন্তু আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে ডাক্তাররা কোনও ভরসাই দিতে পারেননি।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই ধিরে ধিরে দীপশিখার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। বুধবার সম্পূর্ণ ব্রেন ডেথের খবর তাঁর পরিবারকে দেন ডাক্তাররা। এর পরই ছোটমেয়ে দেহ দানের সিদ্ধান্ত নেন তাঁর বাবা সমর সামন্ত। সমরবাবু জানান, ‘‘ওর কম্পিউটার ইঞ্জিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তাই হলদিয়ায় ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করল কিন্তু মেয়েকে ফেরাতে পারলাম না। ডাক্তাররাই বলেন ওর অঙ্গ দান করে অন্য কারও জীবন বাঁচাতে। মনে হল যদি এ ভাবেই মেয়েটা বেঁচে থাকে। তাই আর অমত করিনি।’’ গলা ধরে আসছিল সমরবাবুর। মেয়েকে আর ফিরে পাবেন না জানেন। কিন্তু মনে থাকবে তাঁর মেয়ের অঙ্গ নিয়ে এই বিশ্বে বেঁচে রয়েছে দুটো মানুষ।

তবে সব অঙ্গ কাজে লাগানো যায়নি। দুটো কিডনি দেওয়া হয়েছে দু’জনকে। ২১ বছরের দীপশিখার ত্বক ও দুই চোখের কর্নিয়া সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে হাসপাতালে। এখনও কোনও গ্রহিতা পাওয়া যায়নি। কিন্তু হার্ট আর লিভার কাজে লাগানো যায়নি। কারণ দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দীপশিখা এই দুই অঙ্গ।