সন্দেশখালিতে সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলে, হত ৩! উদ্বিগ্ন কেন্দ্র অ্যাডভাইসরি পাঠাল রাজ্যকে

সন্দেশখালিতে সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলেসন্দেশখালিতে সংঘর্ষ: নিহতদের শোকার্ত পরিবার।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: সন্দেশখালিতে সংঘর্ষ বিজেপি-তৃণমূলে, প্রাণ গেল তিন জনের। দু’পক্ষেরই দাবি, তাদের বেশ কয়েক জ‌ন করে সমর্থক এখনও নিখোঁজ। শনিবার রাতের সেই ঘটনায় আপাতত রাজ্য রাজনীতি সরগরম। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, কেন্দ্র-রাজ্য— দুই সরকারের মধ্যে যেন কার্যত ‘যুদ্ধ’ বেধে গিয়েছে।

পুলিশ এখনও পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে সংঘর্ষ প্রসঙ্গে তিন জনের মৃত্যুর কথা বললেও নিহত এবং নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। শনিবার রাতে বিজেপি নেতারা দাবি করেছিলেন, তাঁদের দলের পাঁচ জন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে সন্দেশখালিতে। নিহতদের নামও বলে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক জনের দেহ লোপাট করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁরা। তবে রবিবার বিজেপি বসিরহাট হাসপাতাল থেকে নিয়ে গেল দু’জনের দেহ— প্রদীপ মণ্ডল এবং সুকান্ত মণ্ডল। নিখোঁজ হিসেবে এ দিন জানা গিয়েছে এক জনের নাম। তিনি দেবদাস মণ্ডল। অন্য দিকে তৃণমূলের এক সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে ওই দিন রাতে। তাঁর নাম কায়ুম মোল্লা।

রবিবার দিনভর এই রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিয়েই উত্তাল হয়ে রইল রাজ্য রাজনীতি। এ দিন সকালেই বসিরহাটে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু, হুগলি এবং বনগাঁ থেকে সদ্য জিতে সংসদে যাওয়া দুই বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং শান্তনু ঠাকুর-সহ রাজ্য স্তরের বিজেপি নেতারা। বিকেলের বিজেপির প্রতিনিধিদল নিহত দুই দলীয় কর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডলের মৃতদেহ নিয়ে কলকাতার দিকে রওনা দেয়। কিন্তু পুলিশ মিনাখাঁ থানার সামনে মৃতদেহ আটকে দেয়। বিজেপি ওই দু’জনের শেষকৃত্য রাস্তাতে করবে বলে চিতার কাঠও সাজিয়ে ফেলে। পরে যদিও পুলিশি হস্তক্ষেপে দেহ শেষ পর্যন্ত সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়ায় নিহতদের গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।

আরও পড়তে…
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন, দল মানেনি

অন্য দিকে, নিহত তৃণমূল কর্মী কায়ুম মোল্লার দেহ শেষ বিকেলে বসিরহাট হাসপাতালে আনতে গেলেন তাঁর পরিবারের কয়েক জন। তৃণমূলের কোনও নেতাকেই দেখা গেল না। অথচ এ দিন দুপুরে কায়ুমের বাড়িতে গিয়েছিলেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, বিধায়কদের একটি দল। সেই দলে ছিলেন তাপস রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, সুজিত বসু, মদন মিত্রেরা। ছিলেন সন্দেশখালিতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি শেখ শাজাহান।

পরে তাপসবাবুরা বলেন, শনিবার দুপুরে সন্দেশখালির ভাঙ্গিপাড়া গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে নির্বাচন পরবর্তী বৈঠকে বসেছিলেন তৃণমূল কর্মী ও সমর্থকেরা। ওই এলাকায় বিজেপি জেতায় তৃণমূলের পতাকা খুলে বিজেপির পতাকা লাগানো হয়েছিল। দু’দলের পতাকাই যাতে থাকে, সে জন্যই বৈঠক চলছিল। সেই সময়ে বিজেপি কর্মী প্রদীপের বাড়ির সামনে পতাকা লাগাতে যান কায়ুম। তখন বাড়ির ভিতর থেকে গুলি ছুটে আসে। কায়ুম গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করেন বিজেপি সমর্থকেরা। নিজেদের গুলিতেই বিজেপি কর্মীদের মৃত্য হয়েছে বলে তৃণমূলের দাবি।

বিজেপির যদিও দাবি, ওই এলাকায় তৃণমূল হেরেছে বলেই শাজাহানের নির্দেশে পরিকল্পিত ভাবে ওই দিন রাতে ভাঙ্গিপাড়ায় যান কয়েকশো তৃণমূল সমর্থক। বিজেপির পতাকা খুলতে খুলতে তাঁরা গ্রামে ঢোকেন। একই সঙ্গে বিজেপির কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়া হয়। আর তাতেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে। তার আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বাকি দেহ। পুলিশ যদিও সরকারি ভাবে তিন জনের মৃত্যুর কথাই স্বীকার করেছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্য দিকে, এ দিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কড়া ভাষায় অ্যাডভাইসরি পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেখানে লেখা হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাগাতার একই রকমের হিংসা দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্যের প্রশাসন আইনের শাসন বজায় রাখতে এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করতে ব্যর্থ। রাজ্যকে স্পষ্ট ভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা, সর্বজনীন শান্তি বজায় রাখতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হোক। যে সব আধিকারিক নিজেদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কেন্দ্রে এই অ্যাডভাইসরির জবাব দিয়েছে রাজ্য। এ দিন রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছিল, সে ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসন দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতেই আগামিকাল সোমবার ১২ ঘণ্টার বসিরহাট বন্‌ধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য জুড়ে তারা কালা দিবস পালন করবে। সেই সঙ্গে জানানো হয়েছে, আগামী ১২ জুন কলকাতার ওয়েলিংট‌ন মোড় থেকে লালাবাজার অভিযান করা হবে। রাজ্যের যে ১৮টি লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি প্রার্থীরা সদ্য জিতেছেন সেই সাংসদরা ছাড়াও ওই অভিযানে থাকবে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)