রাজ্য নির্বাচন কমিশন এখন কাঠগড়ায়

রাজ্য নির্বাচন কমিশন, পঞ্চায়েত ভোটরাজ্য নির্বাচন কমিশন

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন কমিশন পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। ‘শ্যাম’ রাখতে গিয়ে সোমবার বেশি রাতে নির্দেশ জারি করে আরও এক দিন বাড়িয়ে দিয়েছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার মেয়াদ। কিন্তু, রাতারাতি ‘কুল’ বজায় রাখতে গিয়ে সেই নির্দেশকেই বেমালুম হজম করে মঙ্গলবার সকালে নয়া নির্দেশিকা জারি করে কমিশন। সেখানে জানানো হয়, আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। কাজেই মনোনয়নের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না। তবে, এই শ্যাম-কুলের চক্করটা মেনে নেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট। এ দিন বিকালে আদালত এ দিনের জারি করা কমিশনের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। পাশাপাশি আদালত জানিয়েছে, যাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননিতাঁদের মনোনয়ন জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে কমিশনকেই।

সেই মামলার রায়েই সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানায়, রাজ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় তারা নাক গলাতে চায় না। বিরোধীদের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে বলে।

গত ২ এপ্রিল রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্দেশিকা জারি করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সেই দিনই জানা গিয়েছিল রাজ্যে তিন দফায় ভোট হবে, আগামী ১, ৩ এবং ৫ মে। আর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ নির্ধারিত হয় ৯ এপ্রিল। কিন্তু, রাজ্য জুড়ে এই মনোনয়ন জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারছে না বলে অভিযোগ তোলে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের মারধর করে, এলাকায় বোমা-গুলি-ভাঙচুর চালিয়ে সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করা হয়। সর্বত্রই অভিযোগের নিশানায় ছিল শাসকদল তৃণমূল। অভিযোগ নিয়ে বিরোধীরা রাজ্যপাল, রাজ্য নির্বাচন কমিশন এবং সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। সেই মামলার রায়েই সুপ্রিম কোর্ট সোমবার জানায়, রাজ্যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় তারা নাক গলাতে চায় না। বিরোধীদের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাতে বলে।

ইন্ডিগো, ফের সংবাদ শিরোনামে

এর পরেই সুপ্রিম কোর্টের সেই রায়কে উল্লেখ করে একটি নির্দেশিকা জারি করেন অমরেন্দ্র কুমার। সেখানে জানানো হয়, আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ৩টে পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়া নেওয়া হবে। সেই মতো বিরোধীরা প্রস্তুতি শুরু করে। কিন্তু, এ দিন সাতসকালে ফের এক নির্দেশিকা। সেখানে আগের দিন নিজের জারি করা নির্দেশকেই খারিজ করে দেন কমিশনার। জানিয়ে দেন, আইনি জটিলতার কারণে মনোনয়ন জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়ানোর নোটিস বাতিল করা হল। এর পরে কমিশন এবং কমিশনারের বিরুদ্ধে সরব হয় বিরোধীরা। অভিযোগ ওঠে, শাসকদলের চাপের কাছে মাথা নত করেই এমন সিদ্ধান্ত বদল।

যদি ভোট গ্রহণের দিন এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হত, তা হলে একটা পথ থাকত মুখ বাঁচানোর।

তবে আইনজীবীদের একাংশের মতে, এ ভাবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর তা বাড়ানো যায় না। ভোট গ্রহণের দিন নির্ধারিত। মনোনয়নপত্র জমা শেষ এবং ভোট গ্রহণের দিনের মধ্যে অন্তত ২১ দিনের ব্যবধান থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেই ব্যবধান থাকছিল না। তাঁদের মতে, যদি ভোট গ্রহণের দিন এক দিন পিছিয়ে দেওয়া হত, তা হলে একটা পথ থাকত মুখ বাঁচানোর। আবার একটা অংশের মতে, সোমবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল বিকেল ৩টে। তার মধ্যে যদি মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হত, সেটাও আইনমাফিক হত। কিন্তু, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে রাতে গিয়ে নির্দেশ জারি করা হয়। কাজেই সোমবারের নির্দেশিকা তাদের মতেও আইনসম্মত নয়।

এ দিনের নির্দেশ প্রত্যাহার নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিল বিজেপি। আদালত এ দিন বিকেলে কমিশনের নির্দেশ বাতিলের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দিয়েছে।