ফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহ তিন বছর ধরে! ছেলেকে গ্রেফতার করল পুলিশ

ফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহ

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: বড় একটা ফ্রিজার, তার মধ্যেই গত তিন বছর ধরে মৃত মা-কে রেখে দিয়েছিলেন ছেলে শুভব্রত মজুমদার। বুধবার মাঝ রাতে সূত্র মারফৎ এই খবর পায় পুলিশ। তার পর বেহালার জেমস লং সরণির মজুমদার বাড়ি থেকে তারা বীণা মজুমদার নামে ওই বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে। কিন্তু কী কারণে, মায়ের দেহ ওই ভাবে বছরের পর বছর ফ্রিজারে রেখে দিয়েছিলেন শুভব্রত, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে, ফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহ তিন বছর ধরে রেখে দেওয়ায় ছেলেকে প্রথমে আটক করে পরে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

শুধু মৃতদেহ নয়, মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশও সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন শুভব্রত। ঘর থেকে মিলেছে বেশ কিছু রাসায়নিক জিনিসপত্র। মিলেছে দেহ এবং চর্ম প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত বেশ কিছু বইপত্র। দেহ এবং দেহাংশ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। ফ্রিজার, বই, রাসায়নিক জিনিসপত্র— এ সব পাঠানো হয়েছে ফরেন্সিক বিভাগে। সেখানে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে। ওই বাড়ির নীচের তলায় এই ফ্রিজার রাখা ছিল। নতুন একটি ফ্রিজারও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটি কেন কেনা হয়েছিল, তা এখনও অজানা।

ওই বাড়ির নীচের তলায় এই ফ্রিজার রাখা ছিল। নতুন একটি ফ্রিজারও উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটি কেন কেনা হয়েছিল, তা এখনও অজানা।

প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, ঠিক তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল বীণাদেবীর মৃত্যু হয়। তখন প্রতিবেশীদের বেশ কয়েক জন ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, পরে দাহকাজ করা হবে বলে তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জানানো হয়েছিল, পিস হাভেনে কয়েক দিন বীণাদেবীর দেহ রাখা হবে। কিন্তু, শেষকৃত্যের পাশাপাশি বৃদ্ধার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আদৌ সম্পন্ন হয়েছিল কি না তা প্রতিবেশীরা কেউ জানেন না। বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ যখন বৃদ্ধার দেহ ওই বাড়ি থেকে উদ্ধার করে, তখনই সকলের স্মৃতিতে ফের ফিরে এসেছিল বছর তিনেক আগের এই ঘটনা।

কমনওয়েলথ গেমস ২০১৮: প্রথম দিনের শেষে ভারত

শুভব্রত বীণাদেবী এবং তাঁর স্বামী গোপাল মজুমদারের একমাত্র সন্তান। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ ‘ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া’য় চাকরি করতেন। অবসরের পর বেশ ভাল টাকা পেনশনও পেতেন দু’জনে। মায়ের মৃত্যর পর সেই পেনশনের টাকাটা হাতছাড়া করতে চাননি শুভব্রত, সে কারণেই ফ্রিজারে দেহ রেখে দিয়েছিলেন? খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কিন্তু, পেনশন তোলার ক্ষেত্রে তো ‘লাইফ সার্টিফিকেট’ সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কাছে নিয়ম করে দাখিল করতে হত। সেটা কী ভাবে করতেন শুভব্রত, ব্যাঙ্ক সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

তবে, মৃতদেহ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে রাখলে তা বেঁচে ওঠে বলে নাকি বিশ্বাস করতেন শুভব্রত। তাই, ফ্রিজারে মায়ের মৃতদেহ রেখেছিলেন। পুলিশের একটা অংশ তেমনটাই দাবি করেছেন। কিন্তু, জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যাবে।

মৃতদেহ নির্দিষ্ট প্রক্রিয়াকরণের মধ্যে রাখলে তা বেঁচে ওঠে বলে নাকি বিশ্বাস করতেন শুভব্রত।

প্রতিবেশীদের দাবি, এলাকার কারও সঙ্গেই তেমন ভাবে কথা বলতেন না ওই পরিবারের লোকজন। শুভব্রত বেশ কয়েক বছর আগে সম্পর্কে এক তুতো বোনকে বিবাহ করে অন্যত্র থাকতেন। মা মারা যাওয়ার পর থেকেই তিনি নাকি এ বাড়িতে ফের থাকা শুরু করেন। গোপালবাবু উপরের তলায় থাকতেন। তাঁর কথাতেও প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।