প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন কলকাতার বাসে! প্রতিবাদী ছাত্রীর পাশে এগিয়ে আসেনি কেউ

প্রিয়াঙ্কার প্রোফাইল

তনুকা বসু


প্রকাশ্যে হস্তমৈথুন, নাকি প্রকাশ্যে মেট্রোর ভর্তি কামরায় আলিঙ্গন? কোনটা বেশি দোষের? কোনটার জন্য মার খেতে হয়? কোনটাকেই বা বলা যায় জঘন্য অপরাধ?

প্রকাশ্য মেট্রো রেলের মধ্যে আলিঙ্গন করে এক যুগল গত ৩০ এপ্রিল গণধোলাই খেয়েছিলেন প্রবীণদের কাছে। আজ এক কিশোরীকে দেখে প্রকাশ্য বাসের ভেতর বসে হস্তমৈথুন করায় ওই প্রৌঢ়কে কেন কিছুই বললেন না সহযাত্রীরা? প্রিয়াঙ্কা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এ ভাবে সেই ‘অসভ্য’ মানুষটিকে সামনে আনার চেষ্টা করেছেন আপনি। আপনার তৎপরতায় আজ তিনি পুলিশের হাতে। সবাই প্রিয়াঙ্কা হয়ে উঠুক এটাই কাম্য।

আজকের গল্পে আসছি, তার আগে নিজের একটা অনুভূতির কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে। ঠিক এমনই আমার সঙ্গেও ঘটেছে। অনেক বছর আগের কথা। তখন না ছিল মোবাইল ফোন না ছিল সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু তখনও এই বিকৃতকাম মনষ্ক মানুষগুলো ছিল। একই ভাবে ছিল। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না। হয়তো সাহসও। ২০০৩-০৪ হবে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে লেকের ধারের বেঞ্চে বন্ধুর সঙ্গে বসে ছিলাম। পাশে বসা এক জনকে যৌনাঙ্গ বের করে হস্তমৈথুন করতে দেখে ভয়ে সিটিয়ে গিয়েছিলাম। উঠে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছিল। লোকাল ট্রেনের জেনারেল কামরায় কতবার তাড়াহুড়োয় উঠে পড়ে জামায় দাগ নিয়ে নেমেছিলাম। বলতে পারিনি। তাই প্রিয়াঙ্কাকে ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করেছিল মেট্রোর ওই যুগলকেও। যদি ওরা সামনে আসতেন।

মেট্রোয় আলিঙ্গন করায় যুগলকে মার খেতে হল

শনিবার ঠিক কী হয়েছিল? শ্যামবাজারের কাছের ঘটনা। বাস চলছিলই। সামনে বসে থাকা দু’টি মেয়েকে দেখে সেই বুড়ো লোকটি পিছনের সিটে বসে টানা হস্তমৈথুন করে যাচ্ছিল। কেউ দেখল কেউ দেখল না। কেউ প্রতিবাদ করল না। ওদের চিৎকারেও কোনও সাড়া পাওয়া গেল না। বাসের কন্ডাকটর বললেন, ‘‘কী করব বলুন তো, কার যে কী মানসিকতা হয়।’’ অদ্ভুত না? ভাবলেও অবাক লাগে এই সমাজেই প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া, ঘুষ খাওয়া নয়। নচিকেতা সুরে সুরে অনেকদিন আগেই সে কথা বলে গিয়েছিলেন।

শনিবার হেদুয়া থেকে পড়ে বাড়িতে ফিরছিলেন দমদমের প্রিয়াঙ্কা। ৩০বি/১ বাসে উঠেছিলেন। কিছুক্ষণ চলার পরই দু’জনে দেখেন পিছনে বসে থাকা এক জন তাঁদের দিকে তাকিয়ে নানা মুখভঙ্গি করছে আর হস্তমৈথুন করছে। ভর দুপুরে বাসের মধ্যে এমন কাণ্ডে চমকে যান দুই ছাত্রীই। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘প্রথম চিৎকার করে লোকের নজরে আনার চেষ্টা করি। কিন্তু কেউ কোনও প্রতিবাদ করে না। তার পরই মাথায় আসে ভিডিও করার কথা। ওই লোকটি সেটি দেখেও থামেনি। আমার বন্ধু ভয় পাচ্ছিল। আবার দু’জনে চিৎকার শুরু করি। কেউ এসে পাশে দাঁড়ায়নি।’’ যখন ওঁরা দু’জন চিৎকার জুড়ে দেন তখন শ্যামবাজারের কাছে চলন্ত বাস থেকেই নেমে যায় সেই লোকটি। তাকে কেউ ধরারও চেষ্টা করেনি।

দেখুন প্রিয়াঙ্কার পোস্ট করা সেই ভিডিও

প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, এই একই ব্যাক্তিকে ওঁরা অতীতেও একইভাবে দেখেছেন। তখন ভয় পেয়েছিলেন। এ বার সাহস করে যে কাজটি করলেন তার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে স্যালুট। আর সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর তা কলকাতা পুলিশে ফেসবুক পেজেও কেউ শেয়ার করে দেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হন এবং সেই ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ তরফে জানানো হয়েছে, মামলা দায়ের করার জন্য ওই ভিডিওটুকুই যথেষ্ট। ওই ব্যক্তির নাম অসিত রাই। থাকেন হুগলির বৈদ্যবাটিতে। এই নিয়ে প্রতিবাদ করুন এ বার সমাজ সংস্কারের ধ্বজাধারীরা। যাঁরা সেদিন যুগলের আলিঙ্গনে গেল গেল রব তুলেছিলেন। কোথায় তাঁরা?