মমতা ‘আক্রান্ত’ নন্দীগ্রামে, আহত মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘চক্রান্ত’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আক্রান্ত’ নন্দীগ্রামেএসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে মমতা।

জাস্ট দুনিয়া ডেস্ক: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আক্রান্ত’ নন্দীগ্রামে, আহত মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘চক্রান্ত’। বুধবার সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আহত হন। মমতার অভিযোগ, চার-পাঁচ জন লোক তাঁকে ধাক্কা মেরে তাঁরই গাড়িতে ঠেসে দেয় এবং জোর করে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী পায়ে, মাথায়, কপালে, কোমরে চোট পান। তাঁকে নন্দীগ্রাম থেকে সড়কপথে গ্রিন করিডর করে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করে সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে রাখা হয়। তার পর সেখান থেকে তাঁকে  এমআরআই করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস-এ। সেখান থেকে রাতে মমতাকে ফের নিয়ে আসা হয় এসএসকেএমে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের সফট টিস্যুতে চোট লেগেছে। পাশাপাশি তাঁর বাঁ পায়ের হাড়ে চিড় ও লিগামেন্টেও চোট আছে। যদিও ওই দুই হাসপাতাল বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করেনি। রাতেই মমতার পায়ে অস্থায়ী প্লাস্টার করা হয়েছে। সেই ছবি টুইটারে পোস্ট করেছেন তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যাপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আক্রান্ত’ নন্দীগ্রামে, তবে রাজ্যের সমস্ত বিরোধী দল বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দিতে নারাজ। তারা পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। বিজেপি এবং কংগ্রেস এক ধাপ এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ‘নাটক’ করছে‌ন বলেও মন্তব্য করে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারণ, ঘটনার পর মমতা নিজেই দাবি করেছেন, ওই সময় তাঁর কাছে কোনও পুলিশ বা পুলিশ সুপার ছিলেন না। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি চালু হয়ে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ সুপার থাকতে পারেন না বলে মত প্রশাসনের একাংশের। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী ছিল।


একুশের ভোটের আরও খবর

বুধবার দুপুরেই হলদিয়ায় গিয়ে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের জন্য নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মমতা। তাঁর পর তিনি ফের হেলিকপ্টারে করে ফিরে আসেন নন্দীগ্রামে। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, এ দিন সন্ধ্যা সওয়া ৬টা নাগাদ নন্দীগ্রামের রানিচক বাজারের একটি মন্দিরে হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠান সেরে বেরিয়েছিলেন। পথে বিরুলিয়া বাজারের কাছে কিছু লোক তাঁকে তাঁর গাড়িতেই ঠেসে ধরে জোর করে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে মমতার পায়ে ও কোমরে চোট লাগে। তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। মুখ্যমন্ত্রীকে এ দিন যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে কেঁদে ফেলতেও দেখা যায়। সেই অবস্থাতেই পায়ে বরফ এবং কাপড় জড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর রেয়াপাড়ার অস্থায়ী বাড়িতে। কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নামতে পারেননি। মমতা প্রায় কাঁদতে কাঁদতে নিজের পা দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘দেখো কী রকম ফুলে গিয়েছে পা। আমার কপালে, মাথায় ও কোমরে লেগেছে। বুকে ব্যথা করছে। জ্বর আসছে।’’

এর পরেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে মুখ্যমন্ত্রীকে সড়কপথে কলকাতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গ্রিন করিডর করে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে যখন মমতা পৌঁছন, তত ক্ষণে সেখানে ৫ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড করা হয়ে গিয়েছে। তাঁর জন্য তৈরি করে রাখা হয়েছে সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনও। এর পর তাঁর পা এক্সরে করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে এমআরআইয়ের জন্য বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেসে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তার আগে যদিও এসএসকেএমে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিম-সহ তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা ও সমর্থক। মমতাকে দেখতে হাসপাতালে যান রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন। তাঁর উদ্দেশে জুতো ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ ওঠে।

রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন জানিয়েছেন, এমআরআইতে জানা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের সফট টিস্যুতে চোট লেগেছে। পাশাপাশি তাঁর বাঁ পায়ের হাড়ে চিড় ও লিগামেন্টেও চোট আছে। রাতেই মুখ্যমন্ত্রীকে বাঙুর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এসএসকেএমে। মেডিক্যাল বোর্ড তাঁর চিকিৎসার পরবর্তী দিকগুলো খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।

তবে বিরোধীরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় বড়সড় গাফিলতি রয়েছে বলে প্রশ্ন তুলেছে। এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে সাদা পোশাকে বহু পুলিশ থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর মতো নিরাপত্তা নিয়ে বেরোন। পদযাত্রার সময় ১০০ পুলিশ থাকে। স্কুটি চালানোর সময়ও তো কত পুলিশ ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আজ নিরাপত্তা ছিল না, এটা কি মানা যায়? আঘাত পেয়েছেন। অবশ্যই সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে এ নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন, মানুষের সহানুভূতি আদায় করছেন। সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’

একই সুরে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ ছিল না। পুলিশ না থাকা অবস্থায় হামলা হল! এটা অসম্ভব। এটা নির্বাচনী গিমিক। একটা সমবেদনা তৈরি করা। আর বাংলার পুলিশমন্ত্রী যদি পুলিশ না পান, তা হলে বাংলার সাধারণ মানুষের কী হবে? তাহলে মমতা স্বীকার করুন যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে।’’

তৃণমূল যদিও এ সব প্রশ্নকে পাত্তা দিতে নারাজ। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা মানুষের সঙ্গে মেশেন। সেই সুযোগ নিয়ে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের অধীনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তা নেওয়া হয়নি। পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলনেত্রীর ক্ষেত্রে যদি এমন হয় তা হলে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ইঙ্গিতবাহী। যাঁরা নন্দীগ্রামে মমতার উপস্থিতি চান না এবং যাঁরা মমতার উপস্থিতিতে ভীত তাঁরাই এমন কাজ করবেন। চক্রান্ত করে না হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’


(জাস্ট দুনিয়ার ফেসবুক পেজ লাইক করতে ক্লিক করুন)